Ameen Qudir

Published:
2017-03-23 17:43:42 BdST

উপমহাদেশে ধর্মের বা ধর্মান্ধতার কোন অভাব নেই, প্রচুরতর অভাব আছে প্রকৃত শিক্ষার


 

 



ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়

______________________________


আত্মকথন, নেহাত ই খ্যাপামোও বলতে পারেন।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে ঈশ্বর বা কোন অদৃশ্য শক্তিতে বিশ্বাসী নই আদৌ। আমাদের ফ্ল্যাটে একচিলতে ঠাকুরঘর একটি আছে, যা সাধারণত ফ্ল্যাটে থাকে না,স্থান সঙ্কুলানের অভাবে।

আমি প্রোমোটার কে ধরে একটু জায়গার ব্যবস্থা করেছিলুম, কারণ আমার মা ঘোর আস্তিক ছিলেন। নিয়মিত পূজা করতেন। গত বছরে কালিপূজোর রাতে তিনি আমাদের ছেড়ে বরাবরের জন্যে চলে গেছেন। স্মৃতি তে দিব্য আছেন এবং থাকবেন ও। এখন ওই একচিলতে ঘর টি, ভারি অবজ্ঞায় নয়, কিন্তু বিনা পূজাতেই, নিয়মিত সাফ সুতরো হয়ে পড়ে আছে। মার স্মৃতিমেদুর জিনিসপত্র কিন্তু ঠিক আগের মতই আছে, শুধু পূজা পর্ব টি বন্ধ।
এবারে উপক্রমণিকা ছেড়ে ফিরি কাজের অথবা অকাজের কথায়।


আমার ঈশ্বর বাবু নেই, তাই পূজার্চনার প্রয়োজন ও নেই। যাদের ঈশ্বর অবয়ব হীন, অসীম ক্ষমতাবান অথচ পরম দয়ালু, তাঁদের সেই অবয়বহীন কে আরাধনা করার জন্য কেন প্রতি শুত্রবার বা প্রতি রবিবার বা প্রতি শনিবার উপাসনালয়ে যেতে হয়, আমার মোটা বুদ্ধির বাহিরে। ওইস্থান গুলি কি অসীম ক্ষমতাবানের স্থানীয় কার্যালয় বা আজকালকার ভাষায় পার্টি অফিস নাকি। তাঁকে তো নিজ ঘরে অথবা গৃহে ই আরাধনা করা যেতে পারে, অন্তত সাধারণ যুক্তিবুদ্ধি তো তাইই বলে, নয় কি? এবারে আসি ঘৃণা ভরে প্যাগান বলা মূর্তিপুজক দের কথায়। ক্রিস্ত ধর্ম বা ইসলাম ধর্ম আসার আগে কিন্তু পৃথিবীর উন্নত সব জনজাতি ই মূর্তি বা টোটেম পূজো করত। যদ্দুর জানি আজকের কাবাঘরে সেই প্রাক ইসলাম আরব দের উপাস্য মূর্তি গুলো সাজানো ছিলো। অমনটাই পড়েছি বা জেনেছি আর কি! তাই তাঁদের কাবাঘরে মক্কায় যাবার প্রয়োজন পড়তো।


ভারতের সনাতন ধর্মী দেরো কিছু দেব দেবী র মূর্তি ছিলো, বৈদিক যুগের নিরাকার আরাধনার পরে। সনাতনী রা এই মূর্তিগুলির ই ক্ষুদ্র সংস্করণ করে বাড়ির একটি ঘরে যত্ন করে সাজিয়ে রেখে নিত্য পূজা বা আরাধনা করতেন, তাই সম্ভবত অত নিত্য নিয়ম মেনে বৃহদাকার মূর্তি র আরাধনার নিয়ম ছিল না, প্রতি সপ্তাহে নিয়ম মেনে।


আমার বিনীত প্রশ্ন, যাঁরা আস্তিক তাঁরা কেন নিজ বাড়ি তেই ওই প্রার্থনা বা আরাধনা করছেন না কেন। যাঁদের ঈশ্বর কায়াহীন, তাঁদের সাধারণ বুদ্ধিতে তো উপাসনালয়ে যাওয়ার কারণ দেখিনে। আর যাঁদের ঈশ্বর কায়াময়, তাঁদের তো নিজ বাড়ি তেই প্রার্থনা বা উপাসনার জায়গা তো আছেই।


আসলে এই উপাসনালয় গুলি স্থাপত্যের মাপকাঠি তে একেকটি রত্ন সম্ভার বা স্ট্রাকচারাল মার্ভেল বললে একটু ও অত্যুক্তি হবে না। প্রাণের হরষে, বা স্থাপত্যের অনুপম বিস্তৃত বিভাস ও বৈভব দেখার জন্যে আগ্রহী মানুষজন যান না সেখানে। অথবা কিছু কিছু ন্যূণ স্থান গুলি বিদ্যালয় হিসেবে ও ব্যবহার হোক না -- পাঠক পাঠিকা মনে রাখুন এই উপমহাদেশে ধর্মের বা ধর্মান্ধতার কোন অভাব এখন আর নেই, প্রচুরতর অভাব আছে প্রকৃত শিক্ষার, যা শুধুই পুঁথিগত নয়, জীবনবোধে এবং সত্যিকার ভালো আর মন্দে জারিত ও বটে।


মাতৃভাষা এবং কাজ কর্মের ভাষা শিখুক না আগে সাধারণ মানুষজন, তারপরে ই নাহয় ইচ্ছে হলে এবং প্রতিভা থাকলে শেখা যাবে অন্য কোন ভাষা, যেমনতরো হয় গান বাজনা, আবৃত্তি, অভিনয়, ইত্যাদির ক্ষেত্রে। আগে তো ক্ষুন্নিবৃত্তি হোক, পরে না হয় ভাবা যাবে উপাদেয় মহার্ঘ খাদ্য পানীয়ের কথা।।

বিশেষ করে জানাই, যে এটি সম্পুর্ণ ভাবে আমার মস্তিষ্কজাত এবং কেউ এটি পড়ে উটকো বলে , বা আমার মস্তিষ্কের সুস্থতা জনিত কারণে বীতরাগাচ্ছন্ন হয়ে যদি পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়েও দেন, সত্যি, কিছুটি আমি মনে করবো না। কোন মানুষ কে আঘাত করার জন্যেও এটি আদৌ লেখা নয়। আসলে শিক্ষা, পুঁথিগত এবং জীবনবোধে জারিত --- এই দুটির ই ভারি প্রয়োজন আজকের অশান্ত দিনে।।

_____________________________


লেখক ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় । কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক। সুলেখক । কবি।

Diabetes & Endocrinology Consultant
M.D. at University of Madras । প্রাক্তন :
Calcutta National Medical College and Madras Medical College (MMC)

আপনার মতামত দিন:


কলাম এর জনপ্রিয়