Ameen Qudir

Published:
2017-01-14 15:06:31 BdST

চিকিৎসকদের কানাডায় অভিবাসন স্বর্গ না সর্বনাশ!


 

ডা. অসিত বর্দ্ধন
________________________________


কানাডায় অভিবাসন নিয়ে এসেছেন অনেক চিকিৎসক। গত কয়েক বছরে এই সুযোগ কিছুটা সংকুচিত হলেও হালে আবার অভিবাসনের সুযোগ খুলেছে। আমি সংক্ষেপে প্রক্রিয়াটা লেখার চেষ্টা করব। এই বর্ণনাটা আমার অভিজ্ঞতা সংশ্লিষ্ট।

 

কানাডায় অভিবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে মেডিকেল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রেশনের কোনো সম্পর্ক নেই। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা প্রক্রিয়া। দুটোই সময়সাপেক্ষ। ডাক্তারদের কানাডার রেজিস্ট্রেশন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় তা এরকম: www.physicianapply.ca (ফিজিশিয়ানএপ্লাই ডটকম) এই ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এই অ্যাকাউন্টে দেওয়া আপনার তথ্য ফিজিশিয়ান ক্রেডেনশিয়াল রেজিস্ট্রেশন কানাডা (পিসিআরসি) ও এমসিসি (মেডিকেল কাউন্সিল কানাডা) দুটো প্রতিষ্ঠানেই গ্রহণযোগ্য।


পিসিআরসি একটি তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান। আপনার প্রাথমিক তথ্য এদের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। পিসিআরসিতে প্রথমে আবেদন করুন। আপনার তথ্য সংরক্ষণের শেষে একটি প্রিন্ট আউট নিতে হয়। যেটা একজন নোটারি পাবলিক দিয়ে সত্যায়িত করে ছবিসহ পাঠাতে হয়। পিসিআরসি এই আবেদনটি প্রাপ্তিস্বীকার করে আপনাকে পরবর্তী পদক্ষেপের অনুমতি দেবে। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় চার-আট সপ্তাহ লেগে যায়। এই পদক্ষেপ ছাড়া মেডিকেল কাউন্সিলের আবেদন শুরু করা যাবে না।
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীতপিসিআরসি আবেদনপত্র হাতে পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপের অনুমতি দিয়ে দেয় এবং সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য চিঠি পাঠায়। আমাদের দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী মেডিকেল কলেজে আপনার যোগাযোগ থাকা প্রয়োজন। চিঠি পেলে মেডিকেল কলেজ থেকে উত্তর পাঠানর ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে পাঠানোর সুযোগ নেই। সে জন্য যদি সম্ভব হয় দেশে থাকতেই কাজটি করুন।

 

পিসিআরসি থেকে অনুমতি পেলে আপনি এমসিসিতে আবেদন করতে পারবেন। নির্দিষ্ট ফি দিয়ে প্রথম পরীক্ষা যা MCCEE (এমসিসিইই) নামে পরিচিত, তা দেওয়া যাবে নেপাল বা ভারতে। আমি গত সপ্তাহে নেটে দেখেছি। বাংলাদেশে সেন্টারটি বন্ধ দেখিয়েছে। কেউ আবেদনের আগে আবার দেখে নিতে পারেন সেন্টারটি বাংলাদেশে আছে কিনা। এই পরীক্ষাটি কানাডার বাইরে বিভিন্ন দেশে দেওয়া সম্ভব। Qbank (কিউ ব্যাংক) নামে একটি ওয়েবসাইট আছে যেখানে এই পরীক্ষার মক শো করা যায়, উত্তর দেখে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। শর্টকাট প্রস্তুতির জন্য আদর্শ। অনেক বিশেষজ্ঞ প্রথম দিকে এটা নিয়ে নাক সিটকাতেন একটা সময়, কিন্তু এখন ধারণা পাল্টেছে। ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে (কানাডার পশ্চিমের প্রদেশ) রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের লাইব্রেরিতে এই ওয়েবসাইটটি রেখেছে।

 

এমসিসি কিউ ১ ও এমসিসি কিউ ২ পরীক্ষা দুটো কানাডাতেই দিতে হয় ইভালুয়েশন পাসের পর। এই দুটো পরীক্ষার জন্য প্রচলিত সাহায্যকারী বইটির নাম টরন্টো নোটস। এটি বই হিসেবে অথবা নেটে সিডি হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। এই পরীক্ষার জন্যও কিউ ব্যাংক ব্যবহার করা যায়। তবে যতটা নিজের প্রস্তুতি পরীক্ষার জন্য, ঠিক ততটা পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য নয়। বাংলাদেশি একজন চিকিৎসক যিনি এই দুটো পরীক্ষাতেই ভালো নম্বর নিয়ে পাস করেছেন, উপদেশ দিয়েছিলেন যে, একসঙ্গে দুটো পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলে আসলে বেশি ভালো হয়। কারণ দুটো পরীক্ষার ধরন আলাদা হলেও একটা আরেকটার পরিপূরক।
এই তিনটি পরীক্ষা একসঙ্গে এলএমসিসি নামে পরিচিত। এই পরীক্ষা পাস করলে তবে রেসিডেন্সিতে আবেদন করা যায়।


এমসিসি কিউ ১ দিয়ে ক্ষেত্র বিশেষে আবেদন করা যায়। কানাডীয় মেডিকেল ছাত্ররা কিউ ১ দিয়েই আবেদন করে রেসিডেন্সির। বিশেষজ্ঞ (স্পেশালাইজেশন) অথবা জিপি (ফ্যামিলি প্র্যাকটিস) দুটোর জন্যই রেসিডেন্সি করা বাধ্যতামূলক। এই রেসিডেন্সিতে চান্স না পেলে চিকিৎসক হিসেবে চাকরি করার কোনো সুযোগ নেই (সাধারণভাবে), কিছু অসাধারণ ঘটনায় এলএমসিসি পাস করে কেউ কেউ স্পেশালিস্ট (বাংলাদেশের আবাসিক চিকিৎসকের মতো) হিসেবে চাকরি পেয়েছেন।
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীতরেসিডেন্সিতে কানাডার মেডিকেলের ছাত্রছাত্রী আবেদন করে তাদের চতুর্থ বর্ষের শুরুতেই। এটাকে ম্যাচিং বলে। এদের আগের পরীক্ষার ফলাফল, বিষয় নির্বাচন ও ইন্টারভিউয়ের ওপর ভিত্তি করে এরা রেসিডেন্সির জন্য নির্বাচিত হন। রেসিডেন্সির জন্য প্রথম সুযোগ পান এরা। এর পরের খালি পদ পূরণ হয় কানাডিয়ান কিন্তু বাইরে মেডিকেল শিক্ষা গ্রহণ করা ছাত্রছাত্রী, তারপরে পারমানেন্ট রেসিডেন্সিধারী আবেদনকারী দিয়ে। এ জন্য অভিবাসীদের জন্য খুব কমসংখ্যক পদ থাকে, তাই প্রতিযোগিতা হয় খুব তীব্র।

 


কানাডার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সংস্থাগুলো ঠিক বাংলাদেশের মতো নয়। বাংলাদেশের বিএমডিসির সমতুল্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে কলেজ। প্রত্যেক প্রদেশে একটা করে কলেজ আছে। ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে এর নাম সিপিএসবিসি। প্রদেশের নাম বদলে দিলেই সেই প্রদেশের কলেজের নাম হয়ে যাবে। এরা সেই প্রদেশের সমস্ত চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ন্ত্রণ করে। জিপি কিংবা স্পেশালিস্ট। রয়াল কলেজ স্পেশালিস্টদের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আমাদের বিসিপিএস–এর মতো। জিপিদের কলেজের নাম কলেজ অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান অব কানাডা।
যারা কানাডার বাইরে থেকে এমবিবিএস বা সমমানের পরীক্ষা পাস করেছেন তাদের এখানে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট বা সংক্ষেপে আইএমজি বলা হয়। এমসিসির ওয়েবসাইটে আইএমজি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে। আইএমজিরা সাধারণত স্পেশালাইজেশনে সুযোগ খুব কম পান। কারণ হিসেবে নিয়মটা ওপরে উল্লেখ করেছি। যা পাওয়া যায় তার সিংহভাগ হচ্ছে ফ্যামিলি মেডিসিন রেসিডেন্সি বা জিপি রেসিডেন্সি।

জনশ্রুতি আছে বাংলাদেশিরা এখানে রেসিডেন্সি পান না। এই কথাটা কতটা সত্য বলা মুশকিল। কেউ কেউ পেয়েছেন এবং দ্রুত পেয়েছেন। কেউ পেয়েছেন এ দেশে আসার ১০-১৫ বছর পরে। অনেকে আছেন এলএমসিসি পাস করেও কোনো রেসিডেন্সি পাননি।( চলবে )

বাকি অংশ আগামীকাল । লেখক ডা. অসিত বর্দ্ধন জানাবেন, কীভাবে রেসিডেন্সি পাওয়া যায়? কানাডীয় রেফারেন্স পাওয়া বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য আকর্ষণীয় জরুরি বিষয় ।
______________________________

লেখক ডা. অসিত বর্দ্ধন: অ্যানেসথেটিস্ট ও বিডিইএমআর ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়