Ameen Qudir

Published:
2018-10-29 17:48:47 BdST

পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর নীতিমালা প্রয়োজন


 


ডা. শেখ বাহারুল আলম
___________________________


পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর নীতিমালা প্রয়োজন । সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে পাশ কাটিয়ে কেবল বেসরকারি হাসপাতালের জন্য নীতিমালা করলে -- সরকারি/ বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে ।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবে তার নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা দিতে দায়বদ্ধ হলেও স্বাধীনতা-উত্তর সরকার সমূহ এ দায় পালনের ক্ষেত্রে আজও কোন নীতিমালা প্রণয়ন করে নি।

অবশেষে ৩৬ বছর পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ‘প্রাইভেট প্রাকটিস , বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অধ্যাদেশ ১৯৮২ এর আলোকে নীতিমালা প্রণয়ন হতে যাচ্ছে।

এতদিন পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে রাষ্ট্র ও সরকারের বোধোদয় হল এই নীতিমালা প্রণয়নে , যা রোগী- চিকিৎসককে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসবে, সরকারকে চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে দায়বদ্ধ করবে, পুঁজি বিনিয়োগকারী ব্যক্তি মালিকের মুনাফা অর্জনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে জনগণের কাছে সহনীয় বা গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানেও সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে যেন চিকিৎসার মান সঠিক থাকে।

জনগণের স্বাস্থ্য সেবার নিতিমালার প্রয়োজন অনুভব করে নি রাষ্ট্র দীর্ঘ সময় ধরে। ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ মোতাবেক সুষ্ঠুভাবে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার তাগিদ রাষ্ট্র বা সরকারের ছিল না। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করার ভয়ে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে নীতিমালা তৈরির প্রয়োজনে।

যে নীতিমালা ফরমায়েশি বা আদেশকৃত – সেই নীতিমালা দিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যাবে না। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের জনগণের প্রতি স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার একটি দর্শন ও দায়বদ্ধতা থাকতে হয়। ৪৭ বছর সে দর্শন ও দায়বদ্ধতা ছিল না বিধায় ভুক্তভোগী সংক্ষুব্ধ নাগরিকের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ (ফরমায়েশ) জারি হয়েছে।

এভাবে উচ্চ আদালতের ভয়ে তড়িঘড়ি করে যে নীতিমালা প্রস্তুত করা হবে তা দিয়ে উচ্চ আদালতের কাছ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া গেলেও জনগণের কাছ থেকে স্বীকৃতি ও নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে না।

রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত , সরকার পরিচালিত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ল্যাবসমূহকে কোন অধ্যাদেশ বা নীতিমালার আওতায় না এনে কেবল বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করলে জনগণ বিভ্রান্তিতে ভুগবে, বিপাকে পড়বে এবং সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন ফল হবে না। একই রাষ্ট্রে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার একাংশ (বেসরকারি) নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত হবে , একাংশ (সরকারি) নীতিমালা মুক্ত থাকার কারণে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সরকারের দায়বদ্ধতা ও শৃঙ্খলা থাকবে না । এর ফলে নাগরিকদের চিকিৎসা পাওয়ার মানের ক্ষেত্রে বৈষম্যের জন্ম দেবে। ইতোমধ্যে এ বৈষম্য নিয়েই চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা চলছে। বিশৃঙ্খলতার কারণে প্রতিনিয়ত অভিযোগ উঠছে কিন্তু কোন জবাবদিহিতা নাই।

রাষ্ট্রের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী সরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার (প্যাথলজি সেন্টার) থেকে সেবা পেয়ে থাকে। বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা গ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক কম। সে ক্ষেত্রে কেবল বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জন্য নীতিমালা প্রণীত হলে অধিকাংশ জনগণ নিয়ন্ত্রিত, নীতিমালা ও দায়বদ্ধতার আওতায় থাকা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।

নীতিমালা-হীন কার্যক্রম বিশৃঙ্খল হয়। বাস্তবে ঘটছেও তাই। এ সময়ে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ত্রুটিযুক্ত হওয়ায় রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সংকট, ঝুঁকি ও আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। জনগণ , রোগী ও চিকিৎসকের পারস্পরিক সম্পর্ক ও আস্থা বিনষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে ৪৭ বছর ধরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরে বৈরী পরিবেশের বিষয়ে সরকার সমূহ উদাসীন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে বেসরকারি পর্যায়ে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য নড়েচড়ে বসছে।

সরকারি বেসরকারি সকল স্তরের জন্য কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাচ্ছি।
______________________________

ডা. শেখ বাহারুল আলম। প্রখ্যাত পেশাজীবি নেতা। সুলেখক। সভাপতি, খুলনা বিএমএ।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়