Ameen Qudir
Published:2018-07-19 16:46:25 BdST
একজন ডাক্তার পক্ষে এভাবেও মানুষকে ( রোগী এবং রোগীর স্বজনদের) খুশী করা সম্ভব
ডা সুরেশ তুলসান
___________________________
ফোন রিসিভ করতেই ওপার থেকে এক নারী কন্ঠের মিষ্টি আওয়াজ।
স্যার আমি সেই দুই পেত্নীর মা বলছি।
( মনে পড়ে গেল কিছু দিন পুর্বে এই নারী চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। সাথে ফুটফুটে সুন্দর দুইটা মেয়ে বাচ্চা।
রুগীনি কাছে জানতে চাইলাম এই সুন্দর সুন্দর পেত্নী দুইটা কার।
বললেন পেত্নী দুইটাই আমার বাচ্চা।আজকালতো আর আগের মত যৌথ বড় পরিবার নেই। কার কাছে রেখে আসবো বলেন ? তাই যেখানেই যাই, যেকাজেই যাই, কষ্ট হলেও সাথে করে নিয়ে যেতে হয়।
আমি বললাম - দুই পেত্নীর একটা কে আমি রেখে দিবো। বড়টাই আমার পছন্দ। তবে আপনি যেটা দেন। আমার সুন্দর একটা কাঁচের শো - কেসআছে, ভালো করে সাজগোজ করায়ে ওই শো - কেসে রেখে দিবো।
ওদের মা বললেন - পছন্দ হলে দুইটাকে রেখে দেন।
বাচ্চা গুলো খুশী হলো না রাগ করলো বুঝতে পারলাম না। তবে প্রচন্ড গোস্বা আর অভিমান প্রকাশ করলো বেশ লাজুকলতা ভঙ্গীতে।)
আমি যেন ফোনে বুঝতে পারি তিনি কোন রোগী, এজন্যই হয়তো উনার এভাবে বলা।
ফোনের ওপারে বাচ্চাদুইটার হই-চই শুনতে পাচ্ছি। বুঝতে পারলাম পেত্নী বলায় মায়ের সাথে ঝগড়া করছে।
আমি বললাম কাল দুপুরে চেম্বারে আসেন, তবে পেত্নী দুটোকে অবশ্যই সাথে আনবেন।
ওদের জন্য দুইটা করে কিটক্যাট আর কিনডেল জয় এনে রেখেছিলাম।
তিনি দুপুরে আসেননি, এসেছিলেন সন্ধ্যায়। চেম্বারে নয় এসেছিলেন অন্য একটা ক্লিনিকে।
ক্লিনিকে খারাপ অবস্থা এমন একটা রোগীর অপারেশন এর প্রস্তুতি নিচ্ছি। রোগী অজ্ঞান করা হয়ে গেছে। এসিস্টেন্ট ড্রাপিং করে রেডি।
আমি ওয়াশ নিয়ে গাউন-গ্লাভস নিবো, এমন সময় নার্স ঢুকে বললো, স্যার এক মহিলা এসেছেন আপনার সাথে দেখা করতে, সাথে দুইটা ছোট মেয়ে বাচ্চা, বললেন সুরেশ স্যারকে বলো দুই পেত্নীর মা এসেছে।
সচরাচর এই অবস্থায় ওটির বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
এনাস্থেসিস্ট কে সরি বলে, কিছুটা সময় চেয়ে বাইরে এলাম। অজ্ঞান অবস্থায় রোগী শুয়ে থাকলো অপারেশন টেবিলে।
উনাকে শুধুমাত্র চিকিৎসা সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত পরামর্শ দিয়ে আর পেত্নী দুটোর সাথে সামান্য কিছু কথবার্তা বলে ওটিতে ফেরৎ এসে অপারেশন শুরু করলাম। ওরা বুঝতেই পারলো না আজ ওদের প্রতি আমার আগ্রহ না থাকার কারণ।
অপারেশন করছি কিন্তু মনটা পড়ে থাকলো সেই পেত্নী দুইটার কাছে যাদের আজ আমার কাছ থেকে কিছুটা আদর আর চকলেট গুলো পাওয়ার কথা ছিলো তার কোনটাই তাদের দিতে পারলাম না।
________________________
ডা সুরেশ তুলসান।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ।
আপনার মতামত দিন: