Ameen Qudir

Published:
2018-06-21 14:47:27 BdST

প্রসঙ্গঃএদেশে ভীনদেশী ডাক্তারদের বাণিজ্যিক আগমন ও অন্যান্য


 

ডা. মোঃ শাব্বির হোসেন খান

_________________________________-

 

বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আর ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে হাটি-হাটি পা-পা করে ইন্ডিয়ান ডাক্তারদের বাণিজ্যিক বিস্তৃতি ঘটছে; যারা এসবে মদত দিচ্ছে ( প্রমোট করছে), তারা কিন্তু একটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে বলেই আমি মনে করি। আর, এই সুযোগটা ওরা নিচ্ছে আমাদের ( সবার না, তবে পার্সেন্টেজের হিসাব করলে এদের সংখ্যা কিন্তু আমার মত আপনার কাছেও ভীতিকর বলেই প্রতীয়মান হবে, যদি আপনার নিজের এলাকার পরিসংখ্যান নিতে পারেন) নিজেদের দোষের কারনেই।

হ্যা, আমাদের স্বগোত্রীয়দের মধ্যে যারা বিভিন্ন ল্যাব বা ক্লিনিকের পার্সেন্টেজ / রেফারেল কিংবা ঔষধ কোম্পানীর নগদ বা অন্যভাবে দেয়া গিফট কিংবা বিদেশ যাওয়ার স্পন্সরশিপ ইত্যকার কাজে সিদ্ধহস্ত এবং সেইসাথে রোগীর প্রতি সমবেদনাহীন, রোগীকে যথাযথ সময় দেন না কিংবা গুরুত্ত্বের সাথে তাদের কথা শোনেন না, রোগীকে কিংবা রোগীর স্বজনকে রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান বুঝিয়ে বলেন না, আমি এদের কথাই বলতে চেয়েছি। এদের সংখ্যা কিন্তু দিন দিন ভীতিকরভাবেই বেড়ে চলেছে! এরা ভুলে গেছে, চেম্বারের রোগীই তাদের আয়-উপার্জনের একমাত্র উৎস। এই উৎসকে অবশ্যই গুরুত্ত্ব এবং সম্মান দিতে হবে; তাদেরকে যথাযথ সময় দিতে হবে। নয়তো এমন দিন আসবে, যখন চেম্বারে বসে কাক তাড়ানো ছাড়া করার কিছুই থাকবে না এইসব চিকিৎসকের, যতই ডিগ্রী কিংবা পদধারী তিনি বা তারা হোন না কেন!

 

ডা. মোঃ শাব্বির হোসেন খান______________________

 


রোগীকে আমরা সময় দেই না, তাদের সব প্রশ্নের সদুত্ত্বর দেই না, তাদেরকে রোগ এবং ট্রিটমেন্ট প্ল্যান সম্পর্কে বিস্তারিত জানাই না - প্রধানতঃ এ'সব কারনেই আমাদের দেশের অনেক রোগী এ'দেশীয় চিকিৎসকদের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমাদের দেশের চিকিৎসার মান সম্পর্কে আমি কিছু বলতে চাই না। বেশী বলবো না; আমাদের দেশেই আছেন ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ (Abm Abdullah), ডা. মামুন আল মাহতাব (Mamun Al Mahtab) এদের মত অসংখ্য আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত চিকিৎসক। অথচ আমাদের পুরো কমিউনিটির প্রতিই আমাদের দেশের জনগণ অশ্রদ্ধার ভাব পোষন করেন। আমার এ'কথার প্রমান দেখতে চাইলে অপরিচিত এনভায়রনমেন্টে বিপদে পড়লে নিজের চিকিৎসক পরিচয় দিয়েই দেখুন, কি রিজাল্ট পান!

একটা হিসাব দেই। একটু ক্যালকুলেশন মিলিয়ে দেখুন।
ধরুন, পার্সেন্টেজখোর একজন চিকিৎসক চেম্বারে ৮০০/- টাকা ভিজিট নিয়ে কোন রোগী দেখে তাকে মোটামুটি ৫০০০/- টাকার ইনভেষ্টিগেশন করাতে দিলেন। আর রিপোর্ট দেখার সময় আরো ৩০০/- টাকা ভিজিট নিয়ে তাকে বিভিন্ন ঔষধের সাথে ২ বা ৩ মাস খাওয়ার জন্য একটা ডিব্বার নামও লিখে দিলেন।
এবার আসি হিসাবে। রোগীর কাছ থেকে তিনি পেলেন ১১০০/- ( মূল ফি ৮০০/- টাকার ব্যাপারে আমার কোন বক্তব্য নেই; প্রচলিত আইনে যার যার নিজস্ব ফি নির্ধারণের স্বাধীনতা এখনো হরণ করা হয়নি আমাদের। তবে রিপোর্ট দেখার জন্য ৩০০/- ফি নেয়াটা ব্যাক্তিগতভাবে আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য)। আর, ল্যাব থেকে রেফারেল পাবেন ( ৫০০০/- টাকার টেষ্টের জন্য ন্যূনতম ২৫%) ১২৫০/-। সাথে ডিব্বা কোম্পানী থেকে প্রাপ্ত টাকা (মাসোহারা/ পার্সেন্টেজ যে ভাবেই হোক) কম হলেও ১০০/- ধরলে এই রোগীর জন্য তার ভিজিট বহির্ভূত আয় হবে ১৩৫০/-, যেটা ভিজিটের চেয়েও বেশী। আর, যদি কোনভাবে এই রোগীকে ক্লিনিকে শোয়ানো যায়, তাহলে সেটার পার্সেন্টেজও যোগ হয়ে ১৩৫০/- থেকে বেড়ে গিয়ে এ'বাবদ আয় ( ক্লিনিকে এই রোগীর কন্স্যালটেন্সি বাদ দিলাম ) ৫,০০০/- থেকে ১০,০০০/- এ ওঠা খুবই স্বাভাবিক।
এখন তা'হলে হিসাবটা কি দাড়াচ্ছে? চেম্বারে একটা রোগী দেখে সেই চিকিৎসক যা আয় করলেন, তারচেয়ে বেশী আয় তিনি করবেন দুই নাম্বারী পদ্ধতিতে। এই লোভ যারা সামলাতে পারেন না, তারাই রোগীকে অবহেলা করেন, রোগীকে গুরুত্ত্ব দেন না, রোগীকে সময় দেন না।
যতদিন আমরা চিকিৎসকরা ( আগেই বলেছি, সবাই না, কিছু) এই "ভিজিট বহির্ভূত আয়" এর লোভ সামলাতে না পারবো, ততদিন আমরা রোগীকে স্যাটিসফাই করতে পারবো না। আর সেটা না পারলে দিন দিন আমাদের অবস্থান দেশের মানুষের কাছে খারাপ হতে থাকবে, আমাদের ওপর মানুষ আস্থা আরো হারাবে, আমাদের সামাজিক অবস্থান আরো নীচে নামবে। মানুষ আমাদের আরো ঘৃণা করবে। ক্রমবর্ধমান এ'সব কারনেই মানুষের মনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে তুচ্ছ কিংবা বিনা কারনে বিভিন্ন হাসপাতাল/ ক্লিনিকে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে।

আর, এই সুযোগটাই নিচ্ছে দেশের কিছু বেনিয়া চিকিৎসা ব্যাবসায়ী। আমরা যদি সামাজিকভাবে আমাদের ভেতরের এসব ম্যালপ্র‍্যাক্টিশনারদেরকে চিহ্নিত করে গোষ্ঠিগত/ সামাজিকভাবে তাদের প্রতিহত না করি, তা'হলে অদূর ভবিষ্যতে এ'দেশে স্রোতের মত আসতে থাকবে ভারতীয় কিংবা অন্যান্য দেশের চিকিৎসকরা; ঢাকা ছেড়ে জেলা এমন কি উপজেলা পর্যায়েও অচিরেই হয়তো তাদের পদধ্বনি শুনবো আমরা!

এখনো সময় আছে, আমাদের সব দূর্দশার যে মূল আমাদের ভেতরেই নিহীত আছে, আসুন, সেটাকে আমরা সবাই মিলে উৎপাটন করি!
কিভাবে শুরু করবেন, সেটা নিজেরাই ঠিক করুন!!

 

______________________________

 

ডা. মোঃ শাব্বির হোসেন খান
সিওমেক'২২
সভাপতি,
মৌলভীবাজার বিএম এ
২১ জুন ২০১৮, রাত ১২:১০।


.

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়