Ameen Qudir
Published:2018-01-15 16:13:26 BdST
"৪০ বৎসরাধিক প্রায় নির্মেদ ছিলাম: তাহার পর ভুঁড়ি হইতে শুরু হইল"
অধ্যাপক ডা. অনির্বাণ বিশ্বাস
____________________________
৪০ বৎসরাধিক প্রায় নির্মেদ ছিলাম।তাহার পর ভুঁড়ি হইতে শুরু হইল।যেমন বাঙালী পুরুষকুলের হয়।
সেই সব ভুঁড়িহীন দিনের কথা মনে পরে ! সেই লাবন্যময় ভুঁড়িহীন অনির্বানকে তোমরা দেখ নাই।আমা হইতে বঙ্গীয়/অবঙ্গীয় নারীকুলে বেশ আলোড়ন হইত।একসময় হাসপাতালের আউটডোরে 'মাখাইকা রোটি,সর্ষোকি শাক' নিয়মিত এক লেডি ডাক্তার খাওয়াইত,আর খাইবার সময় আকুল নয়নে আমায় দেখিত।কেউ কলবুক দিয়াছে,বর্ষার রাতে "খিচুড়ি রেডি,কাম সার্প" !সেই সময় অনির্বানের আত্মশ্লাঘা তোমরা দেখিলে তাজ্জব হইতে। 'সর্ষোকি শাক' এখন কানাডায়, 'খিচুরি' AIIMSএ, এমন কতজন যে কত স্থানে...হা হতোস্মি ! এও কি সম্ভব !
পুত্রের এরুপ অবস্থায় মাতা ধরিয়া বিবাহ দিলেন ! বিবাহের পূর্বে জিজ্ঞাসিলেন "তুমি কি কোথাও আবদ্ধ ! কাওকে ফাঁসাইয়াছো ! সত্য বলিবে.." ; এও কহিলেন .."আমার নির্বাচিত কন্যা..উহার সহিত কোনরূপ বেচাল করিলে.." বলিয়া চোখ পাকাইয়া তাকাইলেন ।
আমি মাতাশ্রীকে অত্যন্ত ভয় পাইতাম,ফুকারিয়া কহিলাম.."না না !বলকি ! অমন ভাবিও না.."
স্ত্রী আমার অত্যধিক ইয়ে..মানে সুন্দরী..সুমিষ্ট( ইয়ে..মানে গানের কন্ঠে)..রন্ধন পটিয়সী..আর আমার মাতাশ্রীর প্রশ্রয়ে প্রচন্ড দাপুটে(আমার সহিত)।ইতিহাসে বল্লাল সেনের রাজত্ব পড়িয়াছিলাম।প্রজারা ট্যাঁ ফু করিতে পারিত না।আমি এখন বল্লাল সেনের রাজত্বে বাস করি।আমার অন্তর হইতে বাহির..সমস্ত 'বাস'ই উনি ঠিক করেন।এমনকি আমার পরিধানের বেল্ট পর্যন্ত !
যখন ভুঁড়ি হইতে আরম্ভ করিল , পেটে টোকা মারিয়া কহিলেন "এটা কি ! সকালে ছুটিবে..কল্য হইতে মিষ্টি বন্ধ..আর মাংস তোমায় দিব না..ছিঃ একদম ৪ মাসের পোয়াতির মত পেট হইয়াছে..এর ৬ মাস ..৭মাসের মত হইবে..তুমি না ডাক্তার !" আরও অনেক কিছু কটর কটর করিয়া বলিল। "মিষ্টি বন্ধ..মাংস বন্ধ." এইসব শুনিয়াই আমার মাথা গরম হইয়াছিল।আমি বেদম রাগিয়া কহিলাম "ঠিক আছে,তুমি দেখিও,আমি দশ মাসের পেট করিয়া থামিব.."
ভুঁড়ি কি আর থামে !বেল্টের ঘাট বাড়িতে লাগিল।ছুঁড়ি/বুড়ি যাহার সাথেই কথা বলি,পেট ভিতর দিকে টানিয়া কথা বলিতে চেষ্টা করি।প্রানেশ্বরী একদিন এইটা লক্ষ্য করিয়া ফিচেল হাসিয়া কহিল "ঐ ভাবে কি আর হয়..তোমার 'সর্ষোকি শাক' 'খিচুরি'..ইহারা এই অবস্থা দেখিয়া কি কহে দেখ.." বলিয়া কি হাসি ! হাসি আর থামে না !
আমি বলিলাম "ইহা ভুঁড়ি নহে,ইহা 'রি ডিস্ট্রিউশন অফ ফ্যাট' "।
এক্ষনে হইল কি,অদ্যসকালে মিষ্টরোদ,মিষ্টঠান্ডা।চেম্বারে যাইবার প্রস্তুতি লইতেছি।মুন্ডমালিনী,আসিয়া কহিল "এই প্যান্ট,জামা জ্যাকেট পড়িয়া যাইবে.."।দেখি বেদম টাইট জিন্স,কোমড়ে বোতাম লাগেনা।প্যান্টটি পাঁচ বৎসরের পুরানো।বলিলাম "এই প্যান্ট,আমার 'রি ডিস্ট্রিউশন অফ ফ্যাট' এর জন্য পরা যাইতেছে না.."
"..না..আ..আ.. এইটাই পরিবে। ইহার সহিত জ্যাকেট পরিলে তোমায় দারুন দেখায়.." মাঝে মাঝে প্রানেশ্বরীর আবেগ এইরূপে উথলাইয়া ওঠে।আমিও চমকিত হইয়া বার খাইলাম।খুব একচোট টানাটানি করিয়া বেল্টটি লাগাইয়া ড্রেস করিলাম।গতকল্য চুলে সাবাং মাখিয়াছিলাম।চুল ফাপাইইয়া আঁচড়াইলাম।
আমার থুতনি ধরিয়া প্রানেশ্বরী কহিল."এই তো বেশ দেখাচ্ছে।ঠিক যেন মূর্তিমান ওথেলো.." ।আমি তির্যক দৃষ্টি হানিয়া কহিলাম "আচ্ছা,ডেসডেমিনো,সে পরে দেখা যাবে.."
চেম্বারে রুগী দেখিতেছি। এক রুগীকে দেখিতে দেখিতে হঠাৎ পটাং করিয়া কি যেন হইল।আমার পেট খুব হাল্কা বোধ হইল।একটু অস্বস্তি বোধ হওয়াতে,মাথা নামাইয়ায়া দেখি প্যান্টের বোতাম এবং বেল্ট দুটাই ছিঁড়িয়া নামিয়া গিয়াছে,প্যান্ট নিচে নামিতেছে।
রুগীর বাড়ির লোক দাঁত বাহির করিয়া বলিল "আপনার বেল্ট ছিঁড়িয়া গিয়াছে.."
অতঃপর কি হইল..তাহা অন্য কালে অন্য স্থানে বিবৃত করিব।এইটুকু,জানুন,আমার ১০ মাসের পেট হইয়াছে।
_______________________________
- অধ্যাপক ডা. অনির্বাণ বিশ্বাস ; কবি । চিন্তক।
কলকাতার প্রখ্যাত লোক সেবী চিকিৎসক।
আপনার মতামত দিন: