Ameen Qudir

Published:
2017-12-27 18:20:46 BdST

রোগী কথন সারোগেসি বনাম মাতৃত্ব


 

 

 


ডা. ছাবিকুন নাহার

_________________________

 

অনেকদিন পর রোগী কথন লিখলাম। গল্পোচ্ছলে।সমস্যা হচ্ছে রোগী কথন লিখলে গল্প হয়ে যাচ্ছে কিংবা গল্প লিখলে রোগী কথন হয়ে যাচ্ছে। কি ঝামেলা!

* খুব টাকার দরকার ছিল। বাবার অপারেশন, ভাইটার পড়াশোনা, মায়ের দিকে তাকাতে পারিনা। দুটো কাপড়ে অদল বদল জীবন। একটা ভিজলে আরেকটা গায়ে জড়াই অবস্থা।

নয়টা মাসই তো। বাড়িতে না যাওয়ার কত বাহানাই তো আছে। পড়াশোনার চাপ বলে চালিয়ে দিতে পারব। তাছাড়া ঘন ঘন বাড়ি যাওয়ার বিলাসিতা আমাদের জন্য না। এতে যাতায়াত ভাড়াটা অন্তত বেঁচে যায়। হোষ্টেলে আছি বলে বাবা মা ও নিশ্চিন্ত।

রহমান সাহেব ভালো লোক। তার স্ত্রী আরো ভালো। স্বামীকে বলে আরো পঞ্চাশ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিন লাখ অনেক টাকা। সারোগেসির জন্য বেশিই বলা যায়। সাথে ভালো ভালো খাবার দাবার তো আছেই। নিয়মিত ডাক্তারি চেকআপ। বলতে গেলে রাজরানীর জীবন যাপন! সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে!

আমি তেমন কিছুই দেয়নি। শুধু একটা ওভাম। এ আর এমনকি! নষ্টই তো হতো। রহমান সাহেবের বউ এত ভালো একটা মানুষ, পরীর মতো সুন্দরী। ফেরেস্তার মতো ব্যাবহার। আল্লাহ তাকে সব দিয়েছে। শুধু এই একটা ঘাটতি। তাকে একটা ওভাম দেয়াই যায়। কত প্রতিপত্তি তাদের! অথচ একটা বাচ্চা ধারণ করার ক্ষমতা নেই। আল্লাহর দুনিয়ায় কত রকমের যে কষ্ট। আহারে! এই দম্পতির বাচ্চা সে লালনপালন করছে তার গর্ভে। যদিও সে অবিবাহিত। তাতে কি? এক নিঃসন্তান বাবা মাকে সে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার দিতে যাচ্ছে! কী আনন্দ! কী আনন্দ!

এটা ঠিক যে তার টাকার দরকার। অনেক। আর রহমান সাহেবদের দরকার একটা পরীর মতো সুন্দর মেয়ের ওভাম। সারোগেসির জন্য জরায়ু তো ভাড়া পাওয়াই যায়। সে ই উৎসাহী হয় জরায়ু দিতে। এতে রহমান সাহেবরা খুশি হয়। মানুষকে খুশি দেখতে তার ভালো লাগে। পাশের দেশে তো অহরহ সারোগেসি হয়। রীতিমতো বিজ্ঞাপন ও দেয়া হয়। অবশ্য আমাদের দেশে কিছুটা লিমিটেশন আছে সারোগেসি, ওভাম ডোনেশনের ব্যাপারে। তার এসব ভাবলে চলে না। অভাবে জীবন যায় যায় দিন অবস্থা। বড় মেয়ে। সংসারে একটা দায়িত্ব আছে না। তাছাড়া রহমান সাহেবের বউ তো সাক্ষাৎ একটা ফেরেস্তা। একটা সন্তানের জন্য কত হাহাকার...কান্না... খুব কষ্ট। মানা যায়না।

 

 

কিন্তু তার কেনো এমন লাগছে! যখনি বাচ্চাটা একটু একটু নাড়াচাড়া করে ওঠে সমস্ত শরীরে সুখ ছড়িয়ে যায়। পুকুরে ঢিল দিলে যেমন করে ঢেউ ওঠে, তেমন করে তার শরীরেও সুখ খেলা করে। ক্ষনে ক্ষনে পেটের উপর হাত চলে যায়। আনমনে পেটে হাত বুলায়। মনেমনে বলে বাবু... বাবু... আমি... মা মা...। বাবু আমি মা... আদর আদর।
আমি তোকে ছাড়া কিভাবে থাকব? বাবু...

একবার ও তার মনে হয়না এই বাচ্চা তার না। এমনটা হবে সে কল্পনাও করেনি। কি এক অনিভুতি তাকে সব ভুলিয়ে শুধুই মা করে তুলছে। মাতৃত্ব এমন তার শক্তি! সবকিছু ভুলিয়ে দিচ্ছে, ভাসিয়ে দিচ্ছে!

যতই ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসছে ততই হারানোর ভয়ে কুঁকড়ে আসছে মন। পাঁজর ভাংগার অসহ্য কষ্ট হচ্ছে। তার মাতৃত্বের কাছে হেরে যেতে বসছে সমাজ, সংসার, চুক্তি, টাকা। তার কেবলি মনে হচ্ছে, বাবু তাকে মা মা বলে ডাকছে। তাকে আঁকড়ে ধরতে বলছে। এই ডাক উপেক্ষা করার ক্ষমতা উপরওয়ালা তাকে দেননি।

 

 

বিঃদ্র- আইভিএফ পদ্ধতিতে (স্পার্ম+ ওভাম=বাচ্চা) অন্যের জরায়ুতে লালনপালন করাকে বলে বলে সারোগেসি। আইভিএফকে টেষ্টটিউব বেবিও বলা হয়ে থাকে। সন্তান জন্মদানে অক্ষম দম্পতিরা এই পদ্ধতিতে বাচ্চা নিয়ে থাকেন। এটা বহুল প্রচলিত একটা পদ্ধতি। সাধারনত স্বামীর স্পার্ম, স্ত্রীর ওভাম ইউজ করা হয় বায়োলজিক্যাল বাচ্চার জন্য। তবে কোন একটা ঘাটতি থাকলে ডোনারের সাহায্য নেয়া হয়।
____________________________

ডা. ছাবিকুন নাহার,
মেডিকেল অফিসার
ঢাকা মেডিকেল কলেজ,ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়