Ameen Qudir

Published:
2017-09-24 15:31:19 BdST

ডাক্তারাসুর : প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ কলকাতার ডাক্তার সমাজ :লেখক বুদ্ধিজীবীরাও শামিল


 


ডা. সুচিত্রা সাহা, কলকাতা
_______________________

 

ডাক্তারাসুর : প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ কলকাতার ডাক্তার সমাজ :লেখক বুদ্ধিজীবীরাও শামিল ।

কলকাতার মহম্মদ আলী পার্কের পূজামন্ডপে অসুরের জায়গায় থিম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ডাক্তারদের প্রতিমা।
অবিশ্বাস্য এই ঘটনায় সারা কলকাতায় তোলপাড়।


কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক ও লেখককবি ডা. সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় তার কলামে লিখেছেন,


"সেই সব রাজনৈতিক মাননীয় ও মাননীয়া রা লোকসভার নির্বাচিত সদস্য বা সদস্যা, যারা কৈবল্যানন্দে বেনিয়মী টাকার বান্ডিল আত্মসাৎ করেন, অহো, তাহারা কি সুমহান, কি অমলিন, কি বিধৌত চরিত্রের মানুষজন --- তাহা আজ কি কারো জানিতে বাকি আছে? তবু তাহারা কেহই অসুর নহেন, অসুর শুধুমাত্র নিরস্ত্র চিকিৎসক গণ। রাণীর রাজ্যে কি সুবিচার! এখনি বুঝিবা স্বর্গ হইতে পুষ্পবৃষ্টি হইবে।"


_____________

কলকাতার প্রখ্যাত লোকসেবী ডাক্তার ও সুচিন্তক কলামিস্ট ডা. রেজাউল করীম তার ফেসবুক কলামে লিখেছেন____________

""ডাক্তারাসুর নিয়ে একটা যাত্রা পালা হোক। বিদ্যাসাগর মশাই নীল দর্পনে যেমন চটিজুতো ছুঁড়েছিলেন সেরকম লাস্ট সিনে একটা চটিজুতো ছোঁডার সিন রাখতে হবে। অনেকদিন আগে একটা মাইম দেখেছিলাম- বোধহয়, যোগেশ দত্তেরই হবে। ডাক্তার রোগীর পাল্স দেখছিলেন গোঁড়ালিতে। টেকনিকালি কোন ভুল নেই, গোঁড়ালিতে বা কবজিতে দেখুন, কিন্তু এগুলো সস্তা রসিকতা, এসব করে খুব একচোট হেসে নেওয়া যায়। তারপর ভুলে গেলে ভাল। কিন্তু, এসব আবার সমাজেরও দর্পন। আমাদের নিম্নগামী মেধার সাথে তাল মিলিয়ে নিম্নতর রুচি, সবকিছুকেই টেনে নিচুস্তরে নামিয়ে দিলে নিজের ক্ষোভ একটু কমে। আমরা চারিদিকে দেখছি সমাজের তথাকথিত মান্যগন্য লোক নির্জলা মিথ্যে বলছেন, সবকিছু নিয়েই ভণ্ডামির চূড়ান্ত করছেন, প্রকাশ্যে টাকা নিয়ে তোয়ালেতে ঢাকছেন। অথচ, আমরা তাদের নিয়ে মাতামাতি করছি কিন্তু তিনি যদি এমন কেউ হন, যার গলার জোর কম, পেশীশক্তিহীন ও রাজনীতির বাঁধা পথে হাঁটেন নি, তাহলে তার ক্ষুদ্রতম চৌর্য্যবৃত্তিও বিদ্যুতগতিতে সমাজে ছড়িয়ে যায়। আসল ধেডেটাকে তো কিছু করতে পারলাম না, এই রোগাসোগা, সমাজ বিচ্ছিন্ন বোকারামটাকেই একটু নেড়েচেডে হাতের সুখ আর হৃদয়ের অপূর্ণ ইচ্ছাপূরণ করি। সুদীপ্ত-গৌতম অস্তাচলে গমন করার পর যে সব ইস্যু নিয়ে সোরগোল হয়েছে তার একটা ফুটেজে একজন চিকিৎসকেও দেখা গেছে। কই তাঁকে নিয়ে সোস্যাল মিডিয়াই ঝড় ওঠে নি। তার মানে যারা সোস্যাল এক্টিভিস্ট তারাও ঝোপ বুঝে কোপ মারেন।
সমাজে চিকিৎসকের স্থান মানুষ নির্ণয় করেন। বেশির ভাগ মানুষের কাছে চিকিৎসকের সামাজিক অবস্থান এখনো অটুট আছে। সিনেমায় ডাক্তাররা খারাপই। পুলিশ বেশ ভাল। অথচ, সমাজের দিকে তাকান- সেখানে কী এই চিত্র দেখি। একজন আই পি এস ঘুষ নিচ্ছে তার পলিটিক্যাল মাস্টারের জন্য। জনগন কিন্তু হাঁ করে সেই রঙ্গ দেখছেন। পুলিশকে শ্রেনীশত্রু বানানো হয়েছে? হবে না, কারন শাসনক্ষমতা করায়ত্ত্ব করতে এদের লাগবে। সংবাদ মাধ্যমে অনেক পাকা মাথার লোক আছেন তারা নির্ণয় করেন কতটা ঝোলে কতটা অম্বল মেশাতে হবে। আমি একজন সাংবাদিককে বললাম যে আপনি সমাজ সচেতন ভাল মানুষ, সত্যি খবর পরিবেশন করেন কিন্তু পরিবেশনের সময় আপনার অবচেতন মন আপনাকে গাইড করছে। তাই অক্লেশে লিখে ফেলছেন ভুয়ো ডাক্তার। যিনি মেডিকেল স্কুলের গণ্ডী পেরিয়েছেন তিনি ডাক্তার। যিনি পেরোন নি তিনি ডাক্তার নন। তার আগে ভুয়ো লিখে দিলে আসলে চিকিৎসকের সামাজিক সম্মানহানীর একটা নতুন দিকনির্দেশ হয়। ভুয়ো ডক্টরেট আর ভুয়ো ডাক্তার সম্ভব নয়। স্টাটুটারি ওয়ারনিং দিয়ে একজনের গায়ে সাদা এপ্রন আর স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে দিলে তা সরাসরি চিকিৎসককে কলঙ্কিত করে।
এই সাজানো চিকিৎসকাসুর কি আর্টের বহিপ্রকাশ? নিশ্চয় আর্ট। শুষ্কং কাষ্ঠং যেমন। তবে তা মোটা দাগের। সুনীল দাশ এত খেটেখটে ঘোড়া এঁকেছিলেন কেন। দুচারটে ভাল ঘোড়ার ছবি তুললেই তো হত। আর্টের সাথে মানুষের পরিশীলিত, শিক্ষিত মননের সম্পর্ক আছে- যে আর্ট সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায় না তা আর্ট নয়। আমি একজন ঠাকুরকে পুজো করি। তিনি বলেছেন "কাঠের ডাণ্ডা লাগানো টিনের কেনেস্তারায় করে রাধু মালীর নাইবার জল আনার মধ্যে আর নন্দলাল কর্তৃক চিত্রবিচিত্র মৃৎপাত্র ভরে ষোড়শী তন্বঙ্গী সুন্দরীর জল আনার মধ্যে যে সুপারফ্লুয়িটির (superfluity) তফাৎ তা-ই আর্ট। (সূত্র: দেশে বিদেশে/ সৈয়দ মুজতবা আলী)। তিনি অন্যত্র বলেছেন- "আর্ট-জিনিসটাতে সংযমের প্রয়োজন সকলের চেয়ে বেশি। কারণ, সংযমই অন্তরলোকে প্রবেশের সিংহদ্বার। মানবজীবনের সাধনাতেও যাঁহারা আধ্যাত্মিক সত্যকে উপলব্ধি করিতে চান তাঁহারাও বাহ্য উপকরণকে সংক্ষিপ্ত করিয়া সংযমকে আশ্রয় করেন। এইজন্য আত্মার সাধনায় এমন একটি অদ্ভুত কথা বলা হইয়াছে: ‘ত্যক্তেন ভুঞ্জীথাঃ’, ত্যাগের দ্বারা ভোগ করিবে। আর্টেরও চরম সাধনা ভূমার সাধনা। এইজন্য প্রবল আঘাতের দ্বার হৃদয়কে মাদকতার দোলা দেওয়া আর্টের সত্য ব্যবসায় নহে। সংযমের দ্বারা তাহা আমাদিগকে অন্তরের গভীরতার মধ্যে লইয়া যাইবে, এই তাহার সত্য লক্ষ্য। যাহা চোখে দেখিতেছি তাহাকেই নকল করিবে না, কিম্বা তাহারই উপর খুব মোটা তুলির দাগা বুলাইয়া তাহাকেই অতিশয় করিয়া তুলিয়া আমাদিগকে ছেলেভুলাইবে না।" (অন্তর বাহির)
আমরা, বাইরে থেকে চিকিৎসককুলের ময়নাতদন্ত করে তাদের তিনদিনের ফাঁসি দিতে পারি কিন্তু সেইটিই সারসত্য নাও হতে পারে। ভালর সংখ্যা বেশি, খারাপের সংখ্যা কম, তাই জগতটা চলছে, আমরা সুস্থ হয়ে তাদের মুণ্ডপাত করতে পারছি। কঠোর সমালোচনা ভালকে খারাপে না পরিনত করে সেটা দেখাও সমাজের কর্তব্য। সমাজের চালিকা শক্তির অদৃশ্য সুতোর টানে যারা সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছেন তারা যত তাড়াতাড়ি এগুলো বুঝবেন ততই ভাল।"""

আপনার মতামত দিন:


মেডিক্যাল ক্যাম্প এর জনপ্রিয়