Ameen Qudir
Published:2018-02-12 15:56:20 BdST
কর্কটরোগ (ক্যান্সার) এবং তার উপর একটি শুভ সমাচার
আজিজুল শাহজী
_____________________________
কয়েকদিন আগে এই ভার্চুয়াল দুনিয়ার এক অনুজপ্রতিম মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে মন চঞ্চল হয়েছিল।আজকাল এই রোগের মোকাবেলা অনেক সহজ হয়েছে তবে তা এখনো ব্যয়সাধ্য বলেই আমাদের মতো সাধারন মানুষের সমস্যা রয়েই গেছে। এই সময়ে একটি ভালো খবর পেয়ে মন ভালো হয়ে গেল তাই আপনাদের ওটা জানাতে এই লেখা।এই অন্তর্জালের এক বড় সুবিধা হলো আমাদের দেশ কালের বেড়া ভেঙ্গে এক মুহুর্তে আমরা একজন অপরের কাছে আসছি।একের সুখে দুখে উদ্বেল হচ্ছি।
সঙ্গত কারণেই আমি এই সহনাগরিক এর নাম করি নি কারন সে মাথা উচু করে বাচতে চায় আমার মতো ট্যাকাটুকা চেয়ে বেড়ানো লোক না তাই কোনো সাহায্য করার অবকাশ সে দেয় নি ।যাই হোক,আপাতত একটি ব্যবস্থা হয়েছে,আমি তাকে আমার আড়াল ভেঙ্গে দেখতে আগ্রহী।কোনো এক অন্য সময়ে হয়ত তার কাছে গিয়ে দাড়াব,আড্ডা দেবো ।হাসি ঠাট্টায় রসিকতার তারল্যে আবার এক নতুন সময় কে নিয়ে আসবো এই আশায় আছি ।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখি ওই মেধাবী ছেলেটির চিকিত্সার ব্যবস্থা হয়েছে।আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই তার আঞ্চলের বিধায়ককে তবে পরবর্তিতে আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হতেই পারে।দরকার হলে ট্যাকাটুকা চাইতে আমি আরো নির্লজ্জ হতে পারি,এই বিষয়ে আমার চামড়া ডায়নোসর এর থেকেও অনেক মোটা, সুতরাং সাবধান!
এইবার শিরনামের বলা খবরটি দিয়ে রাখি।টিউমার জাতীয় যে ধরনের ক্যান্সার আছে তার প্রতিরোধক ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়েছে।আরো সঠিকভাবে বললে ক্যান্সার আক্রান্ত টিউমার কে নিশ্চিহ্ন করে শরীরের অন্য জায়গায় একই ধরনের ক্যান্সার এর চিন্হকে শেষ করতে একটি ভ্যাকসিন তৈরী করেছেন স্ট্যানফোর্ড এর গবেষকরা।তাদের প্রকাশ করা গবেষনাপত্র এবং সাংবাদিক সম্মেলনের থেকে জানতে পারছি,বিভিন্ন ক্যান্সারের উপর সফল ভাবে কাজ করার ফলাফল তারা পেয়েছেন প্রাণী মানে গবেষণাগারের ইদুরের উপর পরীক্ষা করে।মানুষের উপর পরীক্ষা শুরু হচ্ছে এর মধ্যেই।
তাদের ব্যবহার করা ওষুধের প্রয়োগ হবে ১৫জন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের উপর যাদের এই ধরনের লিম্ফোমা মানে ক্যান্সার আক্রান্ত টিউমার ধরা পড়েছে ।গবেষকরা যথেষ্ঠ আশাবাদী কারন আগের করা ইদুরদের উপর পরীক্ষায় ৯০টি ইদুরের(ক্যান্সার আক্রান্ত ) মধ্যে ৮৭টি একটি ইনজেকশনে রোগমুক্ত হয়েছে আর বাকি তিনটি দ্বিতীয় ইনজেকশনের মাধ্যমে।পাঠক,এই ধরনের সাফল্য কিন্তু অতীব দুর্লভ!
সহজ ভাষায়,আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক কোষগুলো এই ধরনের ক্যান্সার আক্রান্ত টিউমার এর প্রোটিনকে আক্রমন করে ওই টিউমার প্রতিরোধ করে এবং ওই টিউমারকে বৃদ্ধিকে ঠেকিয়ে দেয়।মুস্কিল হলো ক্যান্সার বাড়তে থাকলে ওই প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ক্রমশ ছাপিয়ে যায়।কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ওই রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সাহায্য করার ছলে বোকা বানিয়ে ওই কাজ করে থাকে।এই নতুন ওষুধ বা ভ্যাকসিন এই প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আবার শক্তিশালী করে ওই ক্যান্সার কে ধ্বংস করে রোগমুক্তির কাজ করে।রোনাল্ড লেভি,যিনি এই গবেষনার মুখ্য ব্যক্তি এবং এই বিষয়টির মূল প্রতিপাদ্যটি তুলে ধরেছেন,দাবি করেছেন যে এমন কোনো ক্যান্সার আক্রান্ত টিউমার যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক হয়েছে,তাকেই তারা প্রতিরোধ করতে পেরেছেন।
আমাদের শরীরের এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকে কি ভাবে ফাকি দেয় ক্যান্সার তার উপর জানতে এই সুত্রে চোখ রাখুন : https://www.sciencedaily.com/releas…/2017/…/170216130352.htm
কি ভাবে কাজ করবে বলছেন গবেষকরা :
শরীরবিজ্ঞানের কঠিনভাষ্য রেখে সোজা কথায় এই ভ্যাকসিন ওই টিউমার এর ভিতরে থাকা রোগ প্রতিরোধক কোষগুলোকে পুনরায় চাঙ্গা করবে।উপরে যেমন বলেছি,ক্যান্সার ওই প্রতিরোধক কোষ বা ব্যবস্থাকে অচল করে রাখে,এই নতুন ওষুধ ওই কোষগুলোকে পুনরায় সক্রিয় করে এই ক্যান্সার কে শরীরের ভিতর থেকেই প্রতিরোধের অস্ত্র করে দেয়।যদি একটু আমাদের চিকিত্সাবিজ্ঞানের আগের কাজগুলো দেখেন তা হলে দেখবেন,সর্বাধিক সফল ব্যবস্থাগুলো প্রায় সবই আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ কে জাগিয়ে বিভিন্ন রোগের মোকাবিলা করেছে।আরো সংক্ষেপে বললে ওই ভিতর থেকে ব্যবস্থাই সব চেয়ে বেশি কার্যকরী প্রমান হয়েছে।যাই হোক,এই ব্যবস্থা ক্রমশ গোটা শরীরের প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে একই ভাবে শক্তিশালী করে তোলে ফলে অন্য কোনো লুকোনো জায়গায় থাকা এই ক্যান্সার কে খুঁজে বের করে শেষ করে আমাদের শরীরের নিজেদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা।আজ পর্যন্ত ক্যান্সারের যত প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ হয়েছে তার মধ্যে এর প্রতিরোধের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত এবং সবচেয়ে কম সমালোচিত হয়েছে।বিকিরণ চিকিত্সা মানে রেডিও থেরাপি থেকে কেমোথেরাপির মত পার্শপ্রতিক্রিয়া সম্পন্ন ব্যবস্থার মতো কোনো কিছু এর মাধ্যমে রোগীর হয় না ।
এই ধরনের চিন্তা মানে রোগ প্রতিরোধের উপরে আগেও কাজ হয়েছে তবে এটি কেন আলাদা ?
আগে আমরা যে ধরনের কাজ দেখেছি তার দু একটা উদাহরন দিলে বুঝতে পারা যাবে,যেমন ধরুন,CAR T-cell থেরাপি যা আপাতত বেশ প্রচলিত তাতে লিউকোমিয়া বা সহজ ভাষায় ব্লাড ক্যান্সার অথবা কিছু টিউমার জাতীয় ক্যান্সারের ক্ষেত্রে শরীরের রোগ প্রতিরোধক কোষকে বাইরে এনে তাকে আরো সবল করে শরীরে প্রবেশ করানো হয়।এই ব্যবস্থা তুলনামূলক অনেক ব্যয়সাধ্য এবং বিশেষ কয়েকটি ক্যান্সার রোগের ক্ষেত্রে কার্যকরী,সব কয়টি না কিন্তু !
এই বিষয়ে প্রধান গবেষক এবং ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ (অঙ্কোলজিস্ট) রোনাল্ড লেভি জানাচ্ছেন যে প্রধানত তাদের কাজের জন্য তারা দুটি এজেন্ট (এর বাংলা করতে অপারগ ) মানে সোজা ভাষায় ওই প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করার জন্য দুটো রসায়নিক বস্তুর সাহায্য নিয়েছেন,এর একটি ইতিমধ্যেই মানব শরীরে ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত,আর অন্যটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
তারা বেশ কিছু এই ধরনের রোগীর উপর পরীক্ষা চালাচ্ছেন যাদের কিছু নির্দিস্ট শর্তাবলীর মধ্যে হতে হবে যেমন :
১. প্রাথমিক পর্যায়ের রোগী
২. যারা স্ট্যানফোর্ড এর এই গবেষনাগারে এসে এই চিকিত্সা করাতে স্বক্ষম এবং হাটাচলার উপর আছেন
৩.যাদের ওই টিউমারের কোনো একটি অংশে এখনো ওই ওষধি ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব
এছাড়া বাকি বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তাদের এই ওয়েবসাইট এ গিয়ে জানতে পারেন : https://med.stanford.edu/cancer/trials/results.html…
সবচেয়ে ভালো লাগে এদের মানে পাশ্চাত্যের এই ধরনের গবেষনার ক্ষেত্রে তাদের স্বচ্ছতা আর তথ্য দেওয়ার মানসিকতার জন্য।কত সবিস্তারে যে ওরা এর বর্ননা দিয়েছেন এবং সাধারন প্রশ্নের উত্তর তাদের ওয়েব সাইটে রেখেছেন যে না দেখলে ভাবতেও পারবেন না।সবার জন্য এই সূত্র ও দিলাম, দেখুন : https://med.stanford.edu/cancer/trials/faq.html
আপাতত যে অভূতপূর্ব সাফল্য প্রাণীর উপর পরীক্ষাগারে পাওয়া গিয়েছে ওটা আমাদের উজ্জীবিত করতে যথেষ্ট,হ্যা,আমি জানি অনেক ক্ষেত্রেই প্রাণীর উপর পরীক্ষা আর মানুষের উপর এর প্রয়োগে একই সফলতা দেয় নি তবু মাথায় রাখবেন এই ১০০ শতাংশ সাফল্য আমাদের এই রোগের প্রতিরোধের পথে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গেল।
লেখার তথ্যসূত্র লেখার ফাকে ফাকে দিলাম তাই আলাদা করে আর নিচে দিলাম না।পাঠক যদি আরো কিছু সংযোজন করেন তবে আন্তরিক কৃতজ্ঞ থাকবো।লেখার শেষে বলে রাখি আমি কোনো চিকিত্সাবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ না আর এই বিষয়ে প্রায় কিছুই জানি না।যা কিছু জেনেছি সব ইন্টারনেট এর দৌলতে তাই কোথাও তথ্যে ভুল থাকলে ধরিয়ে দেবেন,আমি নিজেকে সংশোধন করবো।
লেখাটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।ভালো থাকুন সবাই!
____________________________
আজিজুল শাহজী। মানবকল্যাণী চিন্তক। সুলেখক।
আপনার মতামত দিন: