Ameen Qudir

Published:
2017-03-11 16:30:36 BdST

পুলিশ কর্মকর্তার বয়ান: সচক্ষে যা দেখলাম, ডাক্তারদের জন্য প্রশংসাই যথেষ্ট নয়


 

এই লেখাটি একজন পুলিশ কর্মকর্তার। তার নাম কাজী ওয়াজেদ। তিনি সচক্ষে দেখা অভিজ্ঞতার আলোকে ডাক্তার সম্পর্কে লিখেছেন অনবদ্য বয়ান।

 

কাজী ওয়াজেদ _____________________


রাত্রকালীন ডিউটি তদারকিকালে হঠাৎ দেখছি দ্রুত পায়ে হেটে আসছেন এক দম্পতি। ভোর আনুমানিক পৌনে চারটার দিকে নিরব নিস্তব্ধ মেরাজনগর বাজারের রাস্তা দিয়ে অন্ধকারে এভাবে আসতে দেখে নিশ্চয় কোন সমস্যা বুঝতে পেরে গাড়ীটা স্লো করতেই এগিয়ে আসলেন দম্পতি।

পুরুষ ভদ্রলোকের কোলে একটি শিশুকে দেখতে পেলাম। দেখেই বুঝলাম কোন বিপদ, সহযোগীতা দরকার। বললেন বাচ্চাটা খুব অসুস্থ। বুঝলাম শিশুটিকে জরুরী হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন।

রাতের নির্জন রাস্তায় কোন রিক্সা বা গাড়ী নেই। ওনাদের কথা শেষ হবার আগেই গাড়ীর দরজা খুলে দিয়ে বললাম উঠে পড়েন। গাড়ীটা ঘুরিয়ে মাতুয়াইল হাসপাতালের দিকে নিলাম। আমার পাশেই বসেছে কোলে নিয়ে থাকা শিশুটির বাবা আর তার পাশে মা। শিশুটির প্রচন্ড খিচুনী আর গোঙানির শব্দ পাচ্ছিলাম অবিরত। সেইসাথে ঘনঘন নিশ্বাসের তপ্ত বাতাস গায়ে এসে পড়ছিল। আর মা বলে কথা!!!! ওর মায়ের দোয়া ইউনুসসহ বিভিন্ন দোয়া দরুদের ভিন্ন ভিন্ন রকমের উচ্চারন তো আছেই। মনটা ভারি হয়ে গেল, যেতে যেতে ভাবছি কত তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পৌছাবো।

 

ডাক্তারদের সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক কথা শুনি। কিন্তু আজ স্বচক্ষে যা দেখলাম তা ওনাদের সম্পর্কে শুধু প্রশংসাই যথেষ্ঠ হবে না। মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটউটের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত তরুন ডাক্তার (নামটা জানা হয়নি) দ্রুত জান্নাতুল নূর নামের শিশুটির চিকিৎসা শুরু করলেন, অক্সিজেন দিলেন। অত্যন্ত আন্তরিক নাম না জানা এই ডাক্তার ভদ্রলোকের জরুরী চিকিৎসায় কিছুক্ষনের মধ্যেই শিশুটি অনেকটা সুস্থ হল।

 পুলিশ কর্মকর্তা কাজী ওয়াজেদ

________________

 


কিছুটা শেষ হল ওর মায়ের দাপাদাপি, স্বস্তি পেলাম আমরাও। এবার ভর্তি হবার পালা। দোতলায় যেয়ে আরেক তরুন ডাক্তার। এই ভদ্রলোক অনেকক্ষণ যাবত ধৈর্য্য সহকারে রোগী দেখে অনেক কথা জিজ্ঞেস করলেন। ভর্তির ব্যবস্থা করলেন। তবে বিনয়ের সাথে বললেন, কেবিনের ব্যবস্থা হয়েছে, কিন্তু দুঃখিত, বিছানার চাদর দিতে পারছি না। ওনাদের আচরন আর ব্যবহারে আমরা এত বেশী আপ্লুত যে, চাদরের চাহিদা আমাদের কাছে একেবারে তুচ্ছ মনে হল (পরে অবশ্য চাদর পাওয়া গেছে)। ডাক্তার ভদ্রলোক রোগ সম্পর্কে অনেক কথা বললেন, বললেন,এটা মেনিনজাইটিস হতে পারে বা অন্যকিছু। এই ডাক্তার সাহেবের তৎপরতা আর আচরনে সত্যিই ভিষন মুগ্ধ হলাম। ওনাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা আর অফুরন্ত ভালবাসা। মনে মনে দোয়া করলাম, এই তরুন ডাক্তারদ্বয়ের মত দুনিয়ার সব ডাক্তাররা যেন হয়। কারন অসুখে পড়লে মানুষ কতটা অসহায় হয়ে যে ডাক্তারের কাছে যেয়ে সেবা চায়, তা কেবল ভুক্তভোগিরাই জানে। তখন আল্লাহপাক আর ডাক্তাররা ছাড়া কিছুই ভাল লাগে না।


ছয় মাস বয়সী জান্নাতুল নূরের বাবা ফার্নিচার ব্যবসায়ীর আরও দুটো ছেলে সন্তান আছে। একমাত্র মেয়ে হিসেবে ওর কদর যে একটু বেশী তা ওর বাবা-মায়ের আহাজারিতে বোঝা গেল। ওনাদের দেখে মনে হল মেয়ে আসলে শুধু মেয়ে নয়, মেয়ে মানে বাবা-মায়ের আত্মা, বাবা-মায়ের কলিজা, বাবা-মায়ের কান্না আর এক বর্ননাহীন ভাললাগা। হাসপাতালে এসব ভাবতে ভাবতেই মাইকে ভেসে উঠলো আজানের সুমধুর আওয়াজ, আস সালাতু খাইরুম মিনান নউম। এবার যে যাবার পালা, নুরের বাবাকে ফোন নম্বর দিয়ে বলে আসা, আর্থিকসহ যেকোন ধরনের সহযোগীতায় প্রয়োজনে যেন আওয়াজ পাই। দোয়া করি সবাই, ভাল থাকুক জান্নাতুল নূর, সুস্হ হয়ে উঠুক ও তাড়াতাড়ি, ওর হাসি মুখ দেখি সবাই।

কাজী ওয়াজেদ ।
Inspector of Police at govt service
Studied at Jogonnath University

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়