Dr. Aminul Islam
Published:2025-03-11 16:47:25 BdST
২০ লাখ শিশুর জীবন বাঁচিয়েছেন যিনি, সেই জেমস হ্যারিসন আর নেই
ডেস্ক
_________
বিশ্বের অন্যতম সর্বাধিক রক্তদাতা, যাঁর প্লাজমা ২০ লাখেরও বেশি শিশুর জীবন বাঁচিয়েছে , সেই জেমস হ্যারিসন পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের এক নার্সিং হোমে ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘুমের মধ্যেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃ'ত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। অস্ট্রেলিয়ায় "সোনার হাতের মানুষ" নামে পরিচিত হ্যারিসনের রক্তে বিরল একটি অ্যান্টিবডি, অ্যান্টি-ডি ছিল। এই উপাদান দিয়ে এমন একটি ওষুধ তৈরি করা হয় যা সেইসব অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের দেওয়া হয় যাঁদের রক্ত ভ্রূণের রক্তের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে অনাগত শিশুর জীবন রক্ষা পায়।মাত্র ১৪ বছর বয়সে বড় ধরনের বুকের অস্ত্রোপচারের সময় প্রচুর রক্ত নিতে হয়েছিল তাঁকে। তখনই তিনি সংকল্প করেছিলেন, সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি নিজেও রক্তদাতা হবেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি প্রথম রক্তদান করেন এবং তারপর থেকে প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর প্লাজমা দান করতে থাকেন। তিনি এই মহান কাজ চালিয়ে যান টানা ৮১ বছর বয়স পর্যন্ত। ২০০৫ সালে তিনি বিশ্বের সর্বাধিক প্লাজমা দাতার স্বীকৃতি পান, যদিও ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তি তাঁর রেকর্ড ভেঙে ফেলেন।
এই বিরল অ্যান্টিবডি হেমোলাইটিক ডিজিজ অব দ্য ফিটাস অ্যান্ড নিউবর্ন (HDFN) নামক মারাত্মক রোগ থেকে নবজাতকদের রক্ষা করে। যদি মায়ের ও শিশুর রক্তের গ্রুপ অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তাহলে মায়ের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শিশুর রক্তকণাকে শত্রু ভেবে আক্রমণ করে। এর ফলে শিশুর মারাত্মক রক্তস্বল্পতা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা বা মৃ'ত্যুও হতে পারে। ১৯৬০-এর দশকে অ্যান্টি-ডি থেরাপি আবিষ্কারের আগে এই রোগে আক্রান্ত প্রতি দুই শিশুর মধ্যে একজন মা'রা যেত। জেমস হ্যারিসনের রক্ত কীভাবে এত সমৃদ্ধ হলো তা নিশ্চিত নয়। তবে ধারণা করা হয় ১৪ বছর বয়সে প্রচুর রক্ত গ্রহণের কারণে তাঁর দেহে বিরল অ্যান্টিবডির সৃষ্টি হয়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় ২০০-রও কম অ্যান্টি-ডি দাতা রয়েছেন কিন্তু তাঁরা প্রতি বছর প্রায় ৪৫,০০০ মা ও শিশুর জীবন রক্ষা করেন। এখন, অস্ট্রেলিয়ার লাইফব্লাড সংস্থা ও ওয়াল্টার এবং এলিজা হল ইনস্টিটিউট যৌথভাবে ল্যাবরেটরিতে অ্যান্টি-ডি তৈরির জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের লক্ষ্য— একদিন ল্যাবে উৎপাদিত অ্যান্টি-ডি বিশ্বের সব অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সাহায্য করবে।
আপনার মতামত দিন: