Ameen Qudir

Published:
2017-03-07 01:39:40 BdST

একমাত্র ডাক্তারই জনগনের টাকায় পড়ে: ভয়ঙ্কর মিথ্যে অপপ্রচার


 

ডা. মৌমিতা শীল
__________________________

বগুড়া মেডিক্যালে একজন ইভটিজারকে কান ধরে ওঠবস করিয়ে কোনো অন্যায় করে নাই আমার ইন্টার্ন ভাই বোনেরা।

মানবিক চিন্তা যাদের আসে না তাদের বলি,জেনেভা কনভেনশন,ওথ্, শপথ ইত্যাদি বলে যারা মুখে ফেনা তুলে ফেলেন তাদেরও বলছি-
জেনেভা কনভেনশনের কোথাও লেখা নেই যে ডাক্তার শারীরিক, মানসিক নিগ্রহের শিকার হয়েও চিকিৎসা দিতে বাধ্য থাকবেন
কিংবা
তিনি আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষায় পাল্টা মার দিতে পারবেন না!
একজন মানুষ হিসেবে এটা তার অধিকার,
যারা বলে আইন কেনো হাতে নিলো ।
তাদের বোন কে ওয়ার্ড ভর্তি লোকের সামনে "মাল একটা আপনি,দেখলে শরীল গরম হয়ে যায়,ফ্যান টা চালায় দ্যান না"- বল্লে তারা কি করতো?
কিচ্ছু না করে চুমু দিয়ে চলে আসতো বুঝি!


একই কাজ ঢাবি ক্যাম্পাস,
পুলিশ ফাড়ি বা
বিজিবি ক্যান্টনমেন্ট
নিদেন ব্যাংকে
করলে কি হতে পারতো তার?
'শরীল' ঠান্ডা করে ফিরতে পারতো তো?
লিংগ বা অন্ডকোষ বিহীন হয়ে চলে আসতে হতো না!! বিশেষত পুলিশ বা বিজিবি হলে সেটাই হতো!!


হাসপাতালে গেলেই ক্যানো জনসাধারনের "অসাধারন ত্যাজ" জেগে ওঠে!


তারা মিডিয়ার অপপ্রচার ও নিজেদের অজ্ঞতার কারনে এটাই বিশ্বাস করে এসেছে যে -একমাত্র ডাক্তারই জনগনের টাকায় পড়া জন্তুবিশেষ,যাদের দিয়ে সব "সেবা" পাওয়া তাদের অধিকার (!) এবঙ তা নামমাত্র অথবা বিনামূল্যে(!!??)।


এবার আর চুপ থাকছি না,ব্যাখ্যা দেবোই-
(১) ৭ টি মৌলিক অধিকারের ১টি হচ্ছে চিকিৎসা,এটি রাষ্ট্রকে যেকোনো উপায়ে নিশ্চিত করতেই হবে।
তাই এত সরকারি হাসপাতাল।আর সেগুলো চালিয়ে রাখতেই প্রয়োজন ডাক্তার।
চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতেই হাসপাতালের পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজ খোলা হয়েছে,যাতে পর্যাপ্ত যোগান থাকে ডাক্তারের।
এটা বিনামূল্যে কোনো সুযোগ দেয়া নয়!


বরং প্রজাতন্ত্রের সকল নাগরিকের ১টি সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করন প্রক্রিয়ার প্রধানতম বাই প্রোডাক্টই হলো এই ডাক্তার!
তার পিছে আলাদা কোনো খরচ হচ্ছে না!
উল্টো উচ্চ শিক্ষা নিতে গিয়ে প্রতিটি ডাক্তারের অসহনীয় খরচ বহন করতে হয় প্রতিবছর, আর পেশাগত, সামাজিক,পারিবারিক চাপ,বন্চনা,দীর্ঘশ্বাস,পরিশ্রম তো বাদই দিলাম,কল্পনাও করতে পারবেন না!

(২) যারা বছরে ২লাখ something (সঠিক টা জানি না!) আয় করেন,কর দ্যান তারাই। আই রিপিট,শুধুমাত্র তারাই কর দ্যান,বাকিরা না!
যার ইনকাম বাৎসরিক ২-৩ লাখ,সে আবার গরীব হলো কবে?
সুতরাং গরীবের ট্যাকাটুকা মেরে অামরা পড়ি আর ডাক্তার হই,এসব সম্পূর্ন ভুল কথা!
বোঝা গেলো?


(৩) তারপরে আসেন সেবা ফেরত দেয়া প্রসংগে-
জনগনের ট্যাকসের টাকায় পড়ালেখা করে কে কতটুক সেবা বিনামূল্যে ফেরত দিয়েছেন এই পর্যন্ত?

ইন্টার্নি থেকে শুরু,তারপর শুধু সেবাই দাও, প্রত্যেকটা ট্রেইনিং পোস্টে বিনা পয়সায় কি নাম মাত্র বেতনে(তাও সবার কপালে জোটে নাহি তাহা,বহু রক্ত আমাশয় ঘটিয়ে MD/MS এ চান্স পেলে তবে,তাও ১০০০০-২০০০০/-, কেমন?....প্রতিবছর তাদের সংখ্যা ১০০০/- ও না,আর আগে এটুকুও বরাদ্দ ছিলোনা!!!!)

বছরের পর বছর ডাক্তাররা হাসপাতালে ডিউটি দিয়ে থাকেন,তারাই হলেন মিডলেভেল ডাক্তার।
যাদের কপালে সরকারি চাকুরির শিকা ছেড়ে,তারা অন্তত দুই বছর ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ পান না,আবার অতি কস্টে চান্স পাওয়ার পর দেখা যায় ট্রেনিং পোস্ট নাই!!
সো সময়মত ট্রেনিংকরা কপালে জোটে না অনেকেরই!!!
তাবৎ সমস্যা ফেস করে,ওষুধ নাই, জনবল নাই,নাই প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তার সত্যকার পাওয়ার,নাই বাসস্থান তার ওপরে ১০০ সীটে হয়ত ৫০০ রোগী,ডাক্তার ১ কি ২ জন,
তারা সামলাচ্ছেনও সকল দিক!
কি মনে হচ্ছে?
অতিমানব পর্যায়ে না উঠলে সম্ভব না!
তাই বলা হয়- Doctors are not by chance,Doctors are chosen.
yea..and itz trure.
সত্যটা জানুন,বুঝুন, ক্ষোভ ও অজ্ঞতা (যদি থেকে থাকে) ঝেড়ে ফেলুন।


আমরা নিরাপদ কর্মস্থল চাই,
ইভ টিজিং এর বিচার চাই,
প্রকৃত সম্মান চাই,
অব্যাবস্থাপনার অভিশাপ,যন্ত্রনা থেকে মুক্তি চাই।
তারপর দেখুন, অসাধারনতম উপায়ে চিকিৎসা দিতে পারবো আমরা,মন প্রান ভরে,আনন্দের সাথে।
আমাদের সাথে থাকুন।
ডাক্তারকে কোনঠাসা করে, তাদের আহত-সংক্ষুব্ধ করে, চেপে পিষে, অপমান করে তাদের থেকে সুচিকিৎসা পাবেন না,Impossible।

_______________________________

 

ডা. মৌমিতা শীল । সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়