Ameen Qudir

Published:
2017-03-06 19:24:15 BdST

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে মেডিকেল অফিসারের যে মর্যাদা: সে অনুযায়ী মাথা উঁচু করে চলুন


 

 

 


ডাক্তারী সেবা খুব সস্তা হয়ে গেছে বলেই একের পর এক ডাক্তার লাঞ্ছনা ও হেনস্থা । ডাক্তারদের আত্মমর্যাদা সম্পর্কে জানতে হবে। সচেতন হতে হবে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সম্পর্কে জানতে হবে। সেখানকার মর্যাদা অনুযায়ী এইসব রাস্তার মাস্তান সন্ত্রাসী ডাক্তারের কাছে পৌছানোর পারমিশন পাওয়ার কথা নয়। কিসের আপা, ভাই। এসব অনেক হয়েছে। সমমানের একজন কর্মকর্তার নাগাল পেতে কত কাঠ খড় পোহাতে হয় , সেটা যতদিন ডাক্তাররা না বুঝবে; ততদিন তারা মার খেতেই থাকবে।

সমমানের কর্মকর্তাকে স্যার বলা বাধ্যতামূলক। তবে ডাক্তার কেন আপা , ভাইজান সম্বোধন শুনবে। অন্য ক্যাডারের কোন কর্মকর্তার অফিসে ঢুকে এই আত্মীয়তাবাচক খাতির জমানো যায়।

ডাক্তাররা ছিলেন সাধারণ মানুষের সেবক। তাদের রক্ষাকবচ। কিন্তু একদল গুন্ডাপান্ডা ও রাজনৈতিক লেবাসধারী সন্ত্রাসীর বাড়াবাড়ির জন্য ডাক্তাররা তাদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

ডাক্তারদের প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা নিয়ে লিখেছেন একজন ননডাক্তার গবেষক। তার নাম :
আবু সাঈদ নূর আহমেদ । Studied Business Administration at Institute of Business Administration, University of Dhaka
Studied Militärvetenskap at Theresian Military Academy।

নিচে তার পুরো লেখাটি তুলে ধরা হল।
____________________________


দেশের চিকিত্‍সক মহলে চলছে তীব্র আহাজারিময় প্রতিবাদ। সম্ভবতঃ সারাদেশের সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন ডাক্তাররা স্ট্রাইকে আছেন। কর্মবিরতি।

ঘটনার মূলে আছে জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৪জন ইন্টার্ন ডাক্তারের ৬মাসের ইন্টার্নশীপ বাতিলের পেনাল্টি।

তাদের অপরাধঃ তাদেরই এক ব্যাচমেটকে টিজ করা এক লোককে মারধোর ও কান ধরে উঠবোস করানো। কারেক্ট মি,ইফ আই এ্যম WRONG।

শুরুতেই আমি সাবমিট করছি: আমি ডাক্তার নই। হতে পারে আমি আমার নিজের কর্মক্ষেত্রের বাইরে কথা বলছি। এটুকু এই জন্য বলছিঃ কারণ আমি একজন ডাক্তারের স্বামী এবং বগুড়ার সেই মেডিক্যাল কলেজের একজন রেজিস্ট্রারের ভাই।

 


ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে সেটা এতোদিনে সবাই গু কালারের জার্নালিজমের বদৌলতে "আপা ডাকায় মারধর" হিসেবে পড়ে ফেলেছো। সেই ফ্যানের সুইচ কোথায় আপা বলাতেই নাকি মেরেছে এরকম গাইন্জোট্টিদের গল্প নিউজ দিয়েছে হাম্বাদিকেরা।

 

চিকিত্‍সকদের তীব্র সুদান খেয়ে মোটামুটি এখন সবাই সত্যি ঘটনাটা জানো ফেইসবুক পোস্ট থেকেই। নারী চিকিত্‍সক বলেছিলোঃ ফ্যানের সুইচ কোনটা এটা আয়াকে জিজ্ঞেস করেন আর এই শীতের মধ্যে আপনার ফ্যান লাগবে কেনো?

রোগীর এটেন্ড্যান্ট বলেছেঃ আপনার মতো হট মাল হাসপাতালে থাকলে গরম তো লাগবেই।

স্বাভাবিকভাবেই সাইকোলজির প্রফেসর মেন্ডেলের মতে,এই পরিস্থিতিতে ৬৬ভাগ লোকই মনে করবেনঃ চিকিত্‍সককে মাল বলছে এতেই মারধোর করার কী আছে?

তাদের জন্য বাকি ঘটনাঃ এই কথোপকথন শুনে ফেলে আরেক ছেলে ইন্টার্ন। স্বাভাবিকভাবেই সে এসে প্রতিবাদ করে কেনো ঐ লোক এরকম ওয়ার্ড ইউজ করেছে!

উত্তরে রোগীর এটেন্ড্যান্ট নিজের বাপের নাম "মোহাম্মদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী" বলে দাবী করে এবং শাসানো শুরু করে। অতঃপর এই উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডায় ।

একপর্যায়ে আশেপাশে আরো মানুষ জমা হতে থাকে।

এরকম জায়গার মব সাইকোলজি কেমন হতে পারে সেটা প্রফেসর সাঈদের সাইকোলজির বইতে স্পষ্ট লেখা আছে।

যেহেতু আশেপাশে দর্শক জমে গেছে। দুইদলই চাইবে গলাবাজিতে আপাতঃ জয় লাভ করতে।

গলাবাজি খুব দ্রুতই গালিবাজিতে পরিণত হয়। এবং গালিবাজি খুব সহজে হ্যান্ড চার্জিং এ পরিণত হয়। সেদিন তা ই হয়েছিলো।

যেহেতু একটা হাসপাতাল ইন্টার্নরাই চালায় এবং তাদের হাসপাতালে এসে তাদের গায়ে হাত দিয়ে কেউ চলে যাবে এরকমটা সম্ভব নয় অতঃপর বাধ্য হয়ে সেই রোগীর এটেন্ড্যান্টকে নিজের হাড্ডি আস্ত রাখতে, কানে ধরে উঠবোস করতে হয়েছে। যে জিনিসটার ভিডিও ভাইরাল হয়।

এবং আল্টিমেটলি সবসময়ের মতো সকল দোষ ডাক্তারেরই হয়। ৪জন ইন্টার্নীকেই কেবল শাস্তি পেতে হয়েছে।

এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে সারাদেশের ইন্টার্নীরা কর্মবিরতিতে। আর সবার মতো করেই আমিও দোষ দিবোঃ ডাক্তারদেরই। সব দোষ ডাক্তারেরই।

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা মেয়েকে মাল বলে দেখো, ওর ব্যাচমেটদের সামনে। শরীরের কয়টা জয়েন্ট স্ট্যাবল থাকে?

প্রভোস্ট, প্রক্টর, শাহবাগ থানা পুলিশ পরে আসো। আগে তোমারে দুইচ্যা নিই।

কিসের কান ধরে উঠবোস? প্রথমে তারে ধরে মারতা এবং এরপর চিকিত্‍সকসুলভ আচরণের মাধ্যমে তাকে ধরে স্ট্রেচারে করে ইমার্জেন্সি এন্ড ক্যাজুয়াল্টিতে নিতা এবং প্রয়োজনে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করার ফর্মালিটিটা পূরণ করতে পারতো ।

ব্যাপারটা হচ্ছেঃ কোন এক অদ্ভুত কারণে সবাই ধইরাই নিছেঃ ডাক্তাররা আছেই সবার লাথি উষ্ঠা খাইতে।

ইয়েসঃ এটার জন্য দোষ কিন্তু তোমাদেরই। খালি মোটামোটা গাইটন ডেভিডসন পড়বা আর ব্রয়লারের জীবন কাটাবা।

তোমাদের উপরে আঘাত আসে,কারণ জীবনে একটা আঘাতের রিপ্লাই দাও নাই। তোমাদের ইম্যুউন সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফালতু লেভেলের মাইক্রোঅর্গানিজম তোমাদের attack করে ৬মাসের ইন্টার্নশীপ কেড়ে নিতে পারে।

এটা হইছে তোমাদের প্রপার একশন না নেওয়াতে। তোমরা কে সেটাই জানো না। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী তোমার পদমর্যাদা কোথায় সেটা তোমরা জানো না।

তোমরা জানো না কেমনে জুনিয়ার হ্যান্ডেল করা লাগে। বিশ্বাস করোঃ মিলিটারি একাডেমির একটা সেকেন্ড টার্ম ক্যাডেটও নিজের ওয়ারেন্ট তোমাদের চেয়ে ভালো চিনে।

কিসের আপা কিসের আপু? ডাক্তারকে এসে স্যার বা ম্যাডাম না ডাকলে সেই রোগীকে গেট আউট বলা শিখতে হবে সে রোগী বা এটেন্ড্যান্ট যতবড় হোক।

নিজের অধিকার নিজের বাইর করা লাগবে।

না হয় তোমাদের বর্তমান চিকিত্‍সক নেতারা তেলবাজ চাটুকার নপুংশক ।

তোমরা নিজেরাও একদিন তো সিনিয়র হবা। সেদিন যাতে জুনিয়রদের ভুলে না যাও। ভুলে না যাও তুমি কী ফেইস করে বড় হইসো।

প্রফেসর ডক্টর গ্রেগর সাঈদ মেন্ডেল ইন্টার্ন চিকিত্‍সকদের এই দাবী আদায়ের কর্মবিরতিকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন। আমি হোয়াইট কোট কমিউনিটির পাশে আছি।

দরকার আছে ভায়া। চালাইয়া যাও। মানুষ কাটিয়া জীবিকা নির্বাহ করি, আমি জানি মানুষের সাইকোলজি।

অনেক প্রফেসর ডাক্তার নাকি এদের পকেটেই থাকে। আর একেকজনের ৩৪টা করে বাপ। কোন বাপ নেতা, কোন বাপ খেতা, আবার কোন বাপ মন্ত্রী মিনিস্টার।

এবার দেখাইয়া দেও, ডাক্তার থেকে সেবা পাওয়া কতটা দুর্লভ হতে পারে। খুব বেশি সস্তা হয়ে গেছে ডাক্তার মালেরা। ডাক্তারের প্রয়োজনীয়তাটা বুঝুক। সব ঠিক হয়ে যাবে।

শেষ করবো সবার বাপের বাপ এবং প্রফেসর মেন্ডেলের চেয়েও বড় সাইকোলজিক্যাল গেইমার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের উক্তি দিয়েঃ "যখন তুমি ভদ্রলোকের সাথে খেলবে, ভদ্রলোকের মতোই খেলো। আর যখন তুমি বাস্টার্ডের সাথে খেলবে, নিশ্চিত করো তুমি ওর চেয়েও বড় বাস্টার্ড, না হলে তুমি খেলায় হেরে যাবে।"

কর্মবিরতি চলতে থাকুক। খেলা চলুক। শুধু দাবী আদায় না, চিকিত্‍সকদের মূল্যায়ন আর সম্মান করানো শেখানোর স্বার্থে ইন্টার্ন চিকিত্‍সকদের এই আন্দোলনকে সর্বাত্মক সমর্থন করছি।"""

##আবু সাঈদ নূর আহমেদএর লেখা এখানে শেষ ।

_________________________

ভূমিকা : আহির ফা হিয়ান বুবকা। নির্বাহী সম্পাদক , ডাক্তার প্রতিদিন।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়