Ameen Qudir

Published:
2017-03-05 23:26:15 BdST

কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলির ঠকবাজির পর্দা ফাঁস





শেখর রায়
_________________________________

 

প্রয়াত বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সৃষ্ট কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ব্যাক্তি ও গোষ্ঠী পুঁজি দিয়ে গড়ে ওঠা হাসপাতাল, নার্সিং হোম রমরমিয়ে অতি লাভজনক বাণিজ্য করে যাচ্ছে। এক নামকাবাস্তে সরকারি লাইসেন্স নেয়া ও বছর বছর নাম মাত্র ফি দিয়ে, কোন সরকারি নিয়ম নীতি না তোয়াক্কা করে বল্গাহিন মুনাফা করে চলেছে এই প্রাইভেট কোম্পানি গুলি।

সিপিএম শাসনের শেষ দশ বছর রাজ্য চালানোর ভার ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপর। কিন্তু তিনি জ্যোতি বাবুর মন্ত্রশিস্যের মত একভাবে স্বাস্থ্য ব্যবসায় বেসরকারি উদ্যোগকে প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন আর দুর্বল করে গেছেন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালগুলি। পশ্চিম বঙ্গের এই বাম শাসনে সাধারন দরিদ্র মানুষেরা চিকিৎসা পরিসেবা পাবার অধিকার থেকে চূড়ান্ত ভাবে বঞ্চিত হয়েছিল। বিপরিতে সমগ্র চিকিৎসা ব্যবস্থাটি এই রাজ্যে ছিল অবহেলার শিকার। যার হাতে টাকা, প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে পরিসেবা পাবার অধিকার তার। যার টাকার জোর ছিল না, তার জন্য বিনাচিকিৎসা ও মৃত্যু ছাড়া আর কিছু জুটত না। ৩৪ বছর এই অপদার্থতা সহ্য করে অবশেষে গণ রোষে ও গণ ভোটে বিতারিত হয় এই তথাকথিত মার্ক্সবাদী নামধারী অপদার্থ রাজ্য শাসকদের দলবল।

পরিবর্তিত রাজ্য শাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাত্র ছয় বছরের মধ্যে রাজ্যে সরকারি চিকিৎসা পরিসেবার হাল বদলে দিতে সমর্থ হয়েছেন তিনি – যেটা অতি বাস্তব সত্য। মমতার সুযোগ্য নেতৃত্বে পশ্চিম বঙ্গের সরকারি চিকিৎসা পরিসেবা সমগ্র ভারতের মধ্যে একটি মডেল হতে পেরেছে। এই রাজ্যে সরকারী চিকিৎসা পরিসেবা সম্পূর্ণ ফ্রি। শহর কলকাতা, জেলা শহর বা প্রত্যন্ত গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আজ বিনা পয়সায় মেলে জীবনদায়ী ওষুধ, মেলে ইনডোর বা আউটডোরে নিখরচায় চিকিৎসা। স্বাস্থ্য পরিসেবা কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামতে ভিতর ও বাহিরের চেহারায় এসেছে পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা ও অভাবনীয় উন্নতি। প্রমান করতে পেরেছেন তিনি যে সদিচ্ছা থাকলে মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা যায়। তিনি আগে তার ঘর সামাল দিতে পেরেছেন খুবই সফল ভাবে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তার অধিকার জন্মিয়েছে বেসরকারি লুটেরা হাসপাতাল বা নার্সিংহোম গুলিকে শায়েস্তা করার। আর ঠিক এক জায়গায় বাম শাসকেরা ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

শহর কলকাতার বা সীমান্ত জেলাতে প্রাইভেট হাসপাতাল ব্যাবসাতে এক বিশাল সংখ্যায় খরিদ্দার সাপ্লাই করে বাংলাদেশী দালালরা, যাদের সাথে এই মুনাফাখোরদেরকে হাসপাতাল গুলির কমিশন দেয়ার ব্যবস্থা করা আছে। প্রতিদিন হাজার হাজার চিকিৎসা প্রার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা ও রাজধানী শহর ঢাকা থেকে আছড়ে পড়ছে পশ্চিম বঙ্গে। এই চিকিৎসা প্রার্থী রুগীরা ভিনদেশি, জানেনা ভারতের কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের কোন স্বাস্থ্য সম্পর্কীয় আইন বা অধিকার। জানলেও তারা ভাবেন যে ভারতের আইন এই ভিনদেশীদের জন্য প্রয়োগ নাও হতে পারে। তাদের এমন অনেক অসহায়তার পূর্ণ সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশী রুগীদেরকে এই প্রাইভেট হাসপাতালগুলি আর্থিক ভাবে লুণ্ঠন করে চলে। চিকিৎসার মান যেমন হোক না কেন, আল্লা মালিকের উপর সব ছেড়ে দিয়ে পরিনতি মেনে নিয়ে নীরবে ফিরে যায় নিজ দেশে। আর এই ঠকবাজি কারবারে হাজার হাজার কোটি টাকা ফুনাফা ঘরে তোলে এই স্বাস্থ্য ব্যবসাদারেরা।

এমন ভাবেই দিব্যি খেলা চলছিল। কিন্তু খেলা বিগড়ে গেল এই রাজ্যের কয়েকজন রুগীর সাথে এক খেলা খেলতে গিয়ে। কয়েক জন স্থানীয় রুগীর কুচিকিৎসায় অকাল মৃত্যু, বিশাল অঙ্কের বিল মেটাতে না পারায় রুগীর ঘর বাড়ির দলিল, ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটের সার্টিফিকেট, জাতিয় পরিচয় পত্র, গয়না গাটি এমনকি মৃতদেহ পর্যন্ত আটকে রেখে সমগ্র জাতির, সংবাদ মাধ্যম ও রাজ্য সরকারের রোষে পড়ে গেল খানদানি এপোলো হাসপাতাল, যার লাইসেন্স বাতিল করার জোরালো দাবী তোলা হয়েছে। বাইরের দেশের রুগীরা কোন লিখিত অভিযোগ বা থানায় কেস ডায়েরি না করলেও, নিজ দেশের নাগরিকদের করা শত শত অভিযোগ ফাইল বন্দী করে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রায় শতাধিক স্বাস্থ্য বাবসাদারদের কলকাতা টাউন হলে কান ধরে হিরহির করে টেনে এনে প্রকাশ্যে এদের কুকীর্তি ফাঁস করেছেন ও হুশিয়ারি দিয়েছেন যে এবার আর তোমাদের ছাড় দেয়া হবে না। সব তৈরি হও।

রাজ্য বিধানসভায় পাস হয়েছে কঠোর আইন যা প্রয়োগ হতে চলেছে এই ঠগ জোচ্চোরদের বিরুদ্ধে। এসব গুরুত্ব পূর্ণ ঘটনা সীমান্ত পাড়ে ঘটে চলে,কিন্ত বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, দপ্তরের উচ্চ নিম্ন পদস্থ কর্মী, চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের কোন তাপ উত্তাপ লক্ষ্য করা যায় না। ঢাকা এপেলো হাসপাতাল আরও ভয়াবহ ঠকবাজি করে, আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পার পেয়ে যায়, অতি দুর্বল এক সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করার কোন দিশা দেখা যায় না, সে দেশের হতভাগ্য মানুষ বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হয়, কিন্তু সরকারের কিছু করার থাকে না।
_______________________________

 

লেখক শেখর রায় । Editor-in-chief at The News
Former Column Writer at The Telegraph
Former Former Spl correspondent at frontier weekly
Former former commissioned writer journalist at The Economic Times

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়