DESK

Published:
2024-08-28 12:08:07 BdST

বন্যার্তদের জন্য ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে চলেছেন ডাক্তার,মেডিকেল শিক্ষার্থীরা



ডেস্ক
__________________

বন্যার্তদের জন্য নাওয়া খাওয়া ভুলে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে চলেছেন ডাক্তার, মেডিকেল শিক্ষার্থী সমন্বয়ে গঠন করা জরুরি মেডিকেল দলগুলো । তারা বন্যা এলাকায় নিয়ে গেছেন জরুরি চিকিৎসা , ওষুধ এবং খাবারও। মানুষ মানুষের জন্য। চিকিৎসকরা সর্বত্র দূর্গতদের জন্য । আর্ত পীড়িত মানুষের জন্য।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ:
ঢামেকের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে
বন্যার্ত পরিবারগুলোকে চিকিৎসা , খাবার, পানি, আর্থিক সাহায্যের উদ্যোগ নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি । ঢাকা মেডিকেল কলেজের সন্ধানী ও নতুন বিল্ডিংয়ের নিচতলায় এবং শহীদ মিনারে ওষুধ সংগ্রহ চলমান রয়েছে।

 

ওষুধ ও চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রী বিতরণেও পিছিয়ে নেই প্রতিষ্ঠানটি। ঢামেকের পক্ষ থেকে উদ্ধার সামগ্রীও দেওয়া হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে বন্যা দুর্গতদের জন্য জরুরী তহবিল থেকে নোয়াখালী যুব রেড ক্রিসেন্টকে সুইমিং বোট, চায়না বাশি, লাইফ জ্যাকেট, পেশেন্ট ক্যারিং স্ট্রেচার, হেড লাইট এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদান করা হয়। ওই বোটের মাধ্যমে গর্ভবতী নারীসহ অনেক অসহায় মানুষকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।


বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় বন্যার্তদের জন্য পাঁচ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা উপহার দিয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

এর আগে বন্যার্তদের সহযোগিতায় দেশের মোট ১৫টি মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা একদিনের বেতন দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর বাইরেও বিভিন্ন মেডিকেলের চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে এসেছেন।

 

বন্যার্তদের জন্য কাজ করে যাওয়া ইমার্জেন্সি মেডিকেল টিম সদস্যদের অক্লান্ত কর্ম তৎপরতা নিয়ে একটি অনন্য লেখা লিখেছেন কুমুদিনী মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওহাব মিনার । তিনি জানান,
"গত দুইদিন সতের সদস্যের মেডিকেল টিম কিছু খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নিয়ে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য প্রত্যন্ত দুর্গম অঞ্চলে চলে যায়।
আমাদের প্রথম টিমের একটিভ মেম্বার ডা. প্রীতির এক নন মেডিকেল বন্ধু জনাব ইফতেখার হামিদ সাহেবের সহযোগিতায় দু'দিন যাবত সফলতার সাথে মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করে। রাতে তার বাড়িতেই থাকে। বিলের মাঝে ভাসমান বাড়িতে অপূর্ব আতিথেয়তা।
ওরা সবাই তরুণ। ‌ তরুণ্যের জোয়ার ও ঢেউ একবার মেতে উঠলে সেটা যে ঠেকানো যায় না তা আমরা সবাই অতি সম্প্রতি ছাত্রদের আন্দোলনে প্রত্যক্ষ করেছি। এখানেও তাই।
শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে আটজন ছাত্রদের একটা গ্রুপ ছিল। ‌ টিমের নেতৃত্বদানকারী নারী চিকিৎসক কুমুদিনী মেডিকেলের স্টুডেন্ট জাফরিন খান ছিল ওর নন মেডিকেল স্বামী হাবিব কেসহ। হাবিব দু'দিনের কর্ম অভিজ্ঞতার যে বর্ণনা দেয় তা একটা পুস্তক হয়ে যেতে পারে। বলছে " স্যার আমরা চিকিৎসা দিতে গিয়ে এত ব্যস্ত ছিলাম যে একটা ভালো ছবি তুলতেও পারিনি"।‌

 

 

কথাটা শুনে আমার মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেল।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ছাত্র ডা. তানভীর
এখনো কুমিল্লা আছে। ২২ তারিখ রাতে এসেছে এবং আমার কাছে ছুটি চাচ্ছে- আজ যেতে চায়। নিজের চেহারা তো আয়নায় দেখে না, তাই বুঝতে পারছে না।
ছেলেটার শরীর পুরো পুড়ে গেছে, তাকানো যায় না। দেখে আমারই কান্না পাচ্ছে।
এরমধ্যে মানিব্যাগ হারিয়েছে। মোবাইল পানিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। চশমা কাদায় পড়ে গিয়েছিল- হাতিয়ে উদ্ধার করে চোখে লাগিয়ে ঠিকঠাক দেখছে এখন।
নুরজাহানে রাত ১১ টায় খাবার শেষে এক এক করে সবাই ওদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল। পুনর্বার আসার আশ্বাস দিয়েছে, বন্যার্তদের পাশে এসে না দাঁড়ালে অন্যায় হতো-মন শান্তি পেত না বলে উল্লেখ করেছে - বিশেষ করে বরিশাল থেকে যারা এসেছে - ওদের অভিন্ন একই বক্তব্য।
" একটা মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করেছি ,দেশপ্রেমের স্বাক্ষর রাখতে পেয়েছি -আমরা ধন্য"।
তানভীর ও জাফরিনকে কেন্দ্র করে ওদের অনেক কথা, গল্প এবং দফায় দফায় ছবি তোলা। ততক্ষণে আমি সেন্ট্রাল মেডিকেল এর এম্বুলেন্সে উঠে বসে পড়েছি। ‌ কারণ বারোটা বেজে গেছে ইমারজেন্সির এম্বুলেন্স নিয়ে এসেছি।
আমার মাথায় শুধু একটাই ভাবনা খেলছিল- আমরা যে পারি তার টুকরো টুকরো বিচ্ছিন্ন উদাহরণ বিভিন্ন সময় আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি। তারপরও জাতিটা এভাবে মুখ থুবরে পরে আছে কেন!! শুধুমাত্র সঠিক নেতৃত্বের অভাবে।
জাতীয়ভাবে আমাদের পরিচালনা করার মত কোন যোগ্য নেতৃত্ব এতদিন পাইনি। ‌ দু'একজন যারা এসেছিলেন সময় তাদের দাঁড়াতে দেয়নি।

 

 

চিকিৎসকরা সমাজের বিচ্ছিন্ন কেউ নয়। তারপরও আমাদের নিজেদের পরিচয়টা জাতির সামনে নিজেদেরকে তুলে ধরতে হবে। অন্য কেউ এসে এই কাজটি করবে না।
আপনারা যারা মেডিকেল টিম নিয়ে মাঠে আছেন।
অবশ্য অবশ্যই আপনাদের সুকর্ম শত ব্যস্ততার মধ্যেও সাধারণের জন্য তুলে ধরবেন। আর হাতে পায়ে ধরে সিনিয়রদের এই কাদা পানিতে নিয়ে আসেন- বলেন যে স্যার যত উঁচুতে অবস্থান করেন না কেন এটাই হবে আসল ঠিকানা। এসে একটু রিহার্সাল দিন।
আজ আমাদের মেডিকেল টিম নিয়ে আমরা যাব ফুলগাজী ও পরশুরাম। ‌ ওদিকের অবস্থা ভালো না। পরশুরামের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছেন- "আপনারা আসেন আমাদের এখানে কিছু নেই, মানুষজনের অবস্থা ভালো না"।
আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
সবার জন্য শুভকামনা।"

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়