Ameen Qudir

Published:
2017-02-27 17:25:38 BdST

রোগ কখনো আইন মেনে হয়না : ক্লিনিক্যাল সাইন দেখে ডাক্তারকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়


 

ডা. মিনা আহমেদ
_____________________________


কিছুদিন আগে আমার মামার একিউট এপেন্ডিসাইটিস হল।
প্রথমেই পেট ব্যথার জন্য তিনি অফিসের ডাক্তার কে দেখান।ডাক্তার উনাকে ব্লাড কাউন্ট করতে দেন।ব্লাড কাউন্ট আসে ৭০০০(টোটাল কাউন্ট),নিউট্রোফিল মাত্র ৫৮ %.ডাক্তার উনাকে এসিডিটির সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করেন।উনিও দিব্যি অফিস করা,দৈনন্দিন এক্টিভিটি চালিয়ে যেতে থাকেন।কিন্তু ব্যথা কমেনা।

এবার আমি উনাকে আবারো ব্লাড কাউন্ট আর আলট্রাসনোগ্রাফি করতে বলি ।(আমি তখনো উনাকে এক্সামিন করার সুযোগ পাই নি,উনি আনোয়ারা থাকেন) ।


উনি শহরে এসে শেভরন থেকে আলট্রাসনোগ্রাফি এবং ব্লাড কাউন্ট করান।
উনি রিপোর্ট নিয়ে যখন আমার বাসায় এলেন,এক্সামিন করলাম।ক্লিনিক্যালি এপেন্ডিসাইটিস।
এবার শেভরনের রিপোর্ট দেখলাম।আলট্রাসনোগ্রাফি নরমাল।যথারীতি ব্লাড কাউন্ট ৫৩০০ আর নিউট্রোফিল ৬২ %.

এবার অফিসের ডাক্তার কে আমার বুঝানোর পালা,কেন উনার এপেন্ডিসাইটিস! কারন অফিসের ডাক্তার রেফার না করলে মামা অপারেশনের জন্য ছুটি পাবেন না।

অফিসের ডাক্তারের সাথে আমার ফোনে কনভার্সেশন:

আমি: ভাইয়া, পেশেন্টের এপেন্ডিসাইটিস।উনাকে ত হসপিটালাইজ করা দরকার।
ডাক্তারঃ উনাকে আমি দেখসি।টেস্ট ও করাইসি।
এপেন্ডিসাইটিস না উনার।আপনি ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট দেখসেন?
আমিঃ জ্বী,দেখেছি।ব্লাড কাউন্ট নরমাল।তবে উনার এটা এপেন্ডিসাইটিস।
ডাক্তারঃ ৭০০০ ব্লাড কাউন্টে কি এপেন্ডিসাইটিস হয়?
আমিঃ জ্বী ভাইয়া।এটিপিক্যাল প্রেজেন্টেশন থাকতে পারে।কিছু পারসেন্টেজ এ নরমাল ব্লাড কাউন্ট পাওয়া যায়।বিশেষ করে এডাল্ট বা এলডারলি পেশেন্ট এ ক্লিয়ার কাট ব্লাড পিকচার না ও পাওয়া যেতে পারে।
ডাক্তার: কিন্তু উনার সিমটম তো বলতে গেলে নাই ই এখন।উনি ত দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন।আমার নিজের ই এপেন্ডিসাইটিস হয়েছিল,সিভিয়ার পেইন হয়।


আমি: জ্বী ভাইয়া।তা তো ঠিক ই বলছেন।কমন ফিচার সিভিয়ার পেইন। কিন্তু আমি উনাকে এক্সামিন করে যেটা পেলাম,সেটাকে আমি ত ইগ্নোর করতে পারছিনা।শুধু ল্যাব রেজাল্টের উপর নির্ভর করে ক্লিনিক্যাল সাইন গুলোকে পাত্তা না দেয়া কি ঠিক হবে?


ডাক্তার: ক্লিনিক্যাল সাইন পেয়েছি বলেই তো টেস্ট করালাম।আর্জেন্ট করিয়েছি।কিন্তু নরমাল আসছে।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া,আমরা একটা সেকেন্ড অপিনিয়ন নিই? আপনি প্লীজ একটু রেফার করে দেন,আমরা সার্জারির একজন প্রফেসার স্যার কে দেখাই।
ডাক্তারঃ ঠিক আছে,তা করা যাবে।
আমিঃ থ্যাংক ইউ ভাইয়া।

এরপর প্রফেসর স্যার কে দেখানো হল।উনি এপেন্ডিসাইটিস ডায়াগনোসিস করলেন।ফিটনেস এর টেস্ট দিলেন।পর দিন ই ল্যাপারোস্কপিক এপেন্ডিসেক্টমি করা হল।অসংখ্য ব্যান্ডস এডহেশন পাওয়া গেল।হয়ত আগেও অনেক এটাক হয়েছে।হিস্টোপ্যাথলজি তেও এপেন্ডিসাইটিস পাওয়া গেল।

এত বড় গল্প বলার কারন হল,রোগ কখনো আইন মেনে হয়না।ক্লিনিক্যাল সাইন দেখে ডাক্তার কে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।


সার্জারির বই তে লেখা আছে এপেন্ডিসাইটিস হলে ব্লাড কাউন্ট বাড়বে,নিউট্রোফিলিক লিউকোসাইটোসিস হবে।

 

আমার মামার ক্ষেত্রে তা হয়নি বলে অফিসের ডাক্তার কনভিন্সড না যে এটা এপেন্ডিসাইটিস।উনার দিক থেকে উনি রাইট।আইনের দিক থেকেও উনি রাইট।
আবার আমরা ল্যাব টেস্টের তোয়াক্কা না করে ক্লিনিক্যাল সাইনের উপর সিদ্ধান্ত নিলাম অপারেশনের।রোগীর জন্য যা ওই মুহূর্তে একমাত্র অপশন।

 

এখন যদি আইন পাস হয়ে যেত,উনার কি সিদ্ধান্ত হত? যেহেতু ব্লাড কাউন্ট নরমাল,এপেন্ডিসাইটিস না।কাজেই উনিও যেভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন,পেটের চিনচিনে ব্যাথা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে আর অফিস করতে থাকতেন।ইন দ্য মিন টাইম উনার ব্যান্ডস এডহেশনের কারনে ইন্টেসটাইনাল অবস্ট্রাকশন হত।
তারপর গ্যাংগ্রিন তারপর সেপসিস..... আমি আর ভাবতে পারিনা।

 

চিকিৎসা বিজ্ঞান একটা সায়েন্স।হাজারো ক্যালকুলেশন,জ্ঞান অভিজ্ঞতা আর তার বাস্তব প্রয়োগের একটা আর্ট।আইন দিয়ে চিকিৎসা কে বাগ মানানো যায়না।বড়জোর তার স্বাভাবিক গতি কে হত্যা করা যায়।

 

উপযুক্ত মাধ্যমের প্রতি অনুরোধ,চিকিৎসার উন্নতি চাইলে রেফারাল সিস্টেম চালু করে দেন।আপনারা যা চাইছেন,তা শুধুমাত্র এই একটা পরিবর্তনের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন।বই এর লাইন রোগীর শরীরে অক্ষরে অক্ষরে পাওয়া যায়না।ডাক্তার তার হিউম্যান ব্রেইন ব্যবহার করেই রোগীর সর্বোচ্চ মংগল সাধন করেন।

 

এ কারনে,কম্পিউটার কখনো চিকিৎসক হতে পারবে না।আইন দিয়ে চিকিৎসা কে নিয়ন্ত্রন করা আর একটা কম্পিউটারের সামনে ব্রেইন হেমোরেজের রোগীর আরোগ্য আশা করা একই কথা।

আইন হওয়া উচিত।তবে অবশ্যই সেটা রেফারাল সিস্টেমের উপর।পৃথিবীর সব উন্নত দেশে এটা আছে।আইন হওয়া উচিত এন্টিবায়োটিক বিক্রির স্বাধীনতার উপর।আইন হওয়া উচিত দালাল ব্যবসার উপর।আমাদের দেশের গরীব অবুঝ মানুষ দের চুষে খাচ্ছে যে ব্যবসা।আরো অনেক অসংগতি নিয়ে আইন হওয়া উচিত।কেউ যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষ কে এই বিষয় গুলি বুঝাতে পারত!
কেজানে,হয়ত বুঝতেও পারেন তারা।মিরাকল ত পৃথিবীতে কতই ঘটে।নাহয় মিরাকলের আশায় রইলাম।

____________________________


লেখক: ডা. মিনা আহমেদ। কনসালটেন্ট, সার্জারি, বান্দরবন।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়