SAHA ANTAR

Published:
2023-02-24 00:32:52 BdST

মাত্র ১০ টাকায় রোগী দেখছেন ছেলে, নাম লিখছেন বাবা


রোগী কমপক্ষে শ’দুয়েক। তাঁদের জন্য বরাদ্দ প্রায় ২৫ হাজার টাকার ওষুধ। আর এর জন্য ডাক্তারের প্রণামী? মাত্র দশ টাকা! রোগী পিছু। দিলে ভাল। না দিতে পারলেও ডাক্তারের মুখে হাসি।

 

 


প্রশান্ত পাল
_______________

রোগী কমপক্ষে শ’দুয়েক। তাঁদের জন্য বরাদ্দ প্রায় ২৫ হাজার টাকার ওষুধ। আর এর জন্য ডাক্তারের প্রণামী? মাত্র দশ টাকা! রোগী পিছু। দিলে ভাল। না দিতে পারলেও ডাক্তারের মুখে হাসি।

স্রেফ এই কারণে, ফি মাসের প্রথম রবিবারটার জন্য মুখিয়ে থাকেন পুরুলিয়া-বাঁকুড়া সীমানা লাগোয়া অনেকগুলি গ্রামের মানুষজন। ওই দিন কলকাতার ডাক্তারবাবু আসেন মণিহারা গ্রামের ভিটেয়। প্রায় নিখরচায় রোগী দেখে দিয়ে যান মাসকাবারি ওষুধ। এমনটাই চলে আসছে বছর দু’য়েক ধরে।

 

পুরুলিয়ার কাশীপুর ও বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের সীমানায় মণিহারা গ্রাম। থানা কাশীপুর। অধিকাংশ বাসিন্দাই প্রান্তিক চাষি। কাছেপিঠে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বলতে ১০ কিলোমিটার দূরে তালাজুড়িতে। মণিহারা গ্রামে চিকিৎসক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেম্বারে এক দিনেই অন্তত দু’শো রোগী আসেন। স্থানীয় প্রৌঢ়া তুলসী ধীবর, আদরী গড়াইরা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে ডাক্তারের বড় অভাব। উনি আছেন বলে ভরসা পাই।’’ এমনই এক রবিবার চেম্বারে গিয়ে দেখা গেল, মণিহারার পাশের গ্রাম শিয়ালডাঙার বৃদ্ধা নুনিবালা গড়াই এসেছেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে। মাত্র ১০ টাকা দিলে মেলে চিকিৎসকের পরামর্শ, উপরন্তু সারা মাসের ওষুধ। নামমাত্র খরচে অস্ত্রোপচারের বন্দোবস্তও হয়ে যায়। সেই সমস্ত কথা শুনে বাঁকুড়ার শালতোড়ার মণিকা কর্মকারের মতো অনেকে এসেছিলেন দূর-দূরান্ত থেকে।

এক জন চিকিৎসকের এ হেন ব্যক্তিগত উদ্যোগের কথা শুনে পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও মানুষের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা যত সহজ করে পৌঁছে দেওয়া যায়, ততই ভাল। উনি সেই কাজটাই নিজের উদ্যোগে করছেন। আমি এই ব্যাপারে খোঁজ নেব।’’


বছর ছেচল্লিশের শান্তনুবাবুর জন্ম আসানসোলে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস, এমডি পাশ করে এখন কলকাতাতেই থিতু। স্ত্রী-ও চিকিৎসক। বিভিন্ন নার্সিংহোম এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষণ। রোগী দেখতে দেখতে জানালেন, বাবা সুভাষচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়েই দেশের বাড়িতে চেম্বার করার ভাবনা আসে। সত্তর ছুঁইছুঁই সুভাষবাবুও কম যান না। ছেলে আসার আগের দিনই আসানসোলের বাড়ি থেকে চলে আসেন মণিহারায়। ঘরদোর পরিষ্কার করান। চেম্বার চলার সময়ে রোগীদের নাম লেখেন, ওষুধ দেন।

কাকভোরে বালিগঞ্জের বাড়ি থেকে বেরনো। সঙ্গে প্রায় ২৫ হাজার টাকার ওষুধ। নিজের গাড়িতে মণিহারায় এসে বেলা ১১টা থেকে বিকেল প্রায় ৫টা পর্যন্ত রোগী দেখে অনেক রাতে আবার কলকাতায় ফেরা। কীসের টানে? শান্তনুবাবুর কথায় , ‘‘এই যে বুড়ো মানুষগুলো আমাকে আপন করে নিয়েছেন, আমাকে তুই করে বলেন— এটাই তো সব। শুধু এর জন্যই ছুটে ছুটে আসতে হয়।’’

এবিপি সংবাদ

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়