Ameen Qudir

Published:
2016-11-17 19:03:24 BdST

মাগো মা , ও গো মা


 

 

ডা. আশীষ দেবনাথ
_____________________________

আমার মায়ের কথা আমি কেমন করে বলব। গানের কথায় বলব ! মধুর অামার মায়ের হাসি চাঁদের মত ঝরে ।
আমার মা আজ অসুস্থ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ভার্সিটিতে ভর্তি আছেন তিনি। শনিবার তার অপারেশন। নিশ্চয়ই বিধাতার অপার দয়ায় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন। সকলের আশীর্বাদ প্রার্থী আমি।


আমি আজ সত্যিকারের উদভ্রান্ত। সারাক্ষণ চোখের সামনে বিশাল এক মনোপর্দায় মায়ের মুখ খানা ভেসে রয়েছে। আমি দেখতে পাচ্ছি মাকে। দেখছি , তিনি হাসিমুখে তাঁর আশীর্বাদ আর কল্যাণের হাত খানা আমার মাথার ওপর দিয়ে রেখেছেন।
আমি যতই মাথা সরাতে যাই , মায়ের হাতখানা সরানো যাচ্ছে না।
মা মাগো।
মায়েরা এমনই হয়। বাবাকে হারিয়েছিলাম সেই কম কম বয়েসে। মাই আমার সব। মাই আমার পৃথিবী। জননীই জগতদাত্রী।
আজ আমি মধ্য বয়েসে এসে পৌঁছেছি, মায়েরই আশীর্বাদে। মায়ের কল্যাণে। মা আমাকে হাতে ধরে ধরে পৃথিবীর কঠিন সব রাস্তা পেরিয়ে এই আজকের বয়েস পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন।

 


ক্লাশ ফাইভে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া । মা আমার অসাধারন সংগ্রামী।৬৫ যুদ্ধে তাকে বিয়ে দিয়ে তার পিতৃকুল ভারতে চলে যান। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

৭১এ মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্প নিজ বাড়ীতে সামলান। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের মা বা ভগ্নি ছিলেন তিনি মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস। মাকে সেজন্য কঠিন পরিনাম ভোগও করতে হয়েছে বার বার।

৭২ এ রাজাকারের হামলা হয় বাবাকে মারার জন্য। সে যাত্রা প্রাণের ওপর দিয়ে বেঁচে যান তিনি। ৮০ সালে আমার বাবার হঠাৎ মৃত্যু।
তখন আমি কিশোর । স্কুলের গন্ডিও পেরুনো হয় নি। মা অামাকে আর বোনকে নিয়ে একাই মহাজীবন সংগ্রাম চালিয়ে এসেছেন আজ অব্দি। বিনিময়ে কি দিতে পেরেছি মাকে।

 

মাকে কি কিছু দেয়া যায়। সন্তানের কাছে পৃথিবীর কোন মা-ই কখনও কিছু চান না।
মায়েরা শুধু আশীর্বাদ দেন। ভালবাসা স্নেহ আশীর্বাদ দেন। সন্তানের মঙ্গল কল্যাণ শুভতা প্রার্থনা করেন জীবনভর।
বিনিময়ে মায়েরা কিছু পান না। চানও না।
জগতের সেরা সম্পদ মায়ের আশ্রয়। আমি মহা সৌভাগ্যবান , সেই মহাআশ্রয় সর্বদা পেয়ে চলেছি।


কত লড়াই, সংগ্রামের স্মৃতি মাকে নিয়ে।
৯২তে বাবরী মসজিদের ঘটনায় বাড়ীতে হামলা মন্দির, নাটমন্দির ভাংচুর। তিনি বাড়ীতে থাকেন তখন । ২০০১ সালে নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় মায়ের মামাকে কুপিয়ে ৬ টুকরা করে। বাবা মারা যাওয়ার পর তিনিই আমাদের দেখতেন। কারন আমাদের সম্পদ। ২০০৭ সালে স্থানীয় চেয়ারম্যান আমাদের বাড়ী দখলের চেষ্টা করেন।

মা তখন অগ্নিমূর্তি হয়ে একাই লড়াই করেছেন। আমার মা যেমন সর্বদা আমার ও সন্তানদের এবং পাড়াপ্রতিবেশীর জন্য মাথার ওপর ছায়া; তেমনি তিনি মানুষের লড়াইয়ে অগ্নিকন্যাও। সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ এবং চেয়ারম্যান জেলে।তারপর মামলা করেন যা চলছে।

 

 


আমরা ভাইবোন দুইজন। ছোটবোনের স্বামী চট্টলা টিবি হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট। বড়নাতি বুয়েট থেকে ইলেকট্রিক্যালে পাশের অপেক্ষায়। শেষ বর্ষ।
আমি আসলে দিশাহারা। আমার জায়গা জমির হিসাব আমি এখনো জানিনা।
বাবা মারা গেলে আমরা ভাইবোনও পড়ার কারনে বাইরে বেশ কয়েক বছর। ।
মা তখন কি করেন।
কয়েক বছর পর বাড়ি গিয়ে আবিস্কার করি, আমাদের মা সকলের মা হয়ে উঠেছেন। তিনি বাড়ীর ও আশেপাশের পোলাপানকে পড়িয়ে সময় কাটাতেন। সেই সুবাদে সবারই মাতৃজননী তিনি। স্বামীসুখ বেশিদিন পাননি। আমি নগন্য পুত্র তাঁর। পাশকরে মাকে কাছে রাখতেই নোয়াখালি ছাড়িনি।

 

বাবা যখন মারা যায় তখন আমি ক্লাশ এইটে পড়ি। বোন পড়ে ক্লাস থ্রিতে। মা একাই দশ হাতে সংসার সমুদ্র সাঁতরে গেছেন। দু:খের কোন আঁচ আমাদের গায়ে লাগতে দেন নি। সংসারের সকল আগুনের আঁচ ও যন্ত্রনা একাই সামলে আমাকে ডাক্তার বানালেন। মেয়েকে মাষ্টার্স পাশ করিয়ে ডাক্তারের কাছে বিয়ে দিলেন।

সেই মাতৃজননী আজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন। অসুস্থ তিনি। দীর্ঘ সংগ্রামে ক্লান্ত। শনিবার অপারেশন হবে অাশা করছি। বড়ভাই দের এবং বন্ধুদের ঐকান্তিক সহযোগিতায় BSMMU তে ভর্তি করালাম মা'কে।

আমি সবার আশীর্বাদ প্রার্থী।। আমার মায়ের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা চাই সকলের ।

অশেষ কৃতজ্ঞতা কৃতজ্ঞতা জানাই সকলের প্রতি।

 


__________________________

 

 


লেখক :ডা. আশীষ দেবনাথ। প্রাক্তন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ _ সিএমসি ২৮ ।
নোয়াখালির প্রথিতযশা চিকিৎসক।
Anaesthesiologist & Intensivist at Anaesthesiology & Intensive Care Services

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়