ডা শাহাদাত হোসেন

Published:
2022-09-01 19:24:33 BdST

বরেণ্য শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম কিউ কে তালুকদার জাতীয় অধ্যাপক হলেন


অধ্যাপক ডা. এম কিউ কে তালুকদার

 

 

ডেস্ক
___________________

বাংলাদেশের বরেণ্য শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম কিউ কে তালুকদারকে পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশের সরকার।

৩০ আগস্ট ২০২২ শিক্ষা দপ্তরের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে " বাংলাদেশ জাতীয় অধ্যাপক (নিয়োগ, শর্তাবলী ও সুবিধাদি) সিন্ধান্তমালা-১৯৮১’ অনুযায়ী বিশিষ্ট শিশুবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম কিউ কে তালুকদার, চেয়ারম্যান, সেন্ট্রাল ফর উইমেন এন্ড হেলথ (সিডব্লিউসিএইচ)-কে নিয়োগের তারিখ হতে ৫ বছরের জন্য নিম্নোক্ত শর্তে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হলো।’

শর্তসমূহ

১. তিনি কোন গবেষণা সংস্থা বা শিক্ষায়তনের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে নিজের পছন্দমত ক্ষেত্রে গবেষণামূলক কাজ করবেন এবং যেক্ষেত্রে তিনি কাজ করবেন তা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন।

২. তিনি যে শিক্ষা/গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত থাকবেন সেই প্রতিষ্ঠানের নিকট তাঁর শিক্ষা/গবেষণামূলক কাজের বার্ষিক রিপোর্ট পেশ করবেন, সেই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানকে তাঁর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত রাখবেন।

৩. জাতীয় অধ্যাপক পদে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে তিনি জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর গ্রেড-১ অনুযায়ী বেতন-ভাতাদি ও অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্য হবেন। তিনি স্বীয় পদে অধিষ্ঠিত থাকা কালীন সময়ে অন্য কোন বেতনভূক্ত চাকরি করতে পারবেন না। জনস্বার্থে জারীকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।"

 

অধ্যাপক ডা. এম কিউ কে তালুকদার জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন ডাক্তার প্রতিদিন সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের গৌরব অধ্যাপক ডা. এম কিউ কে তালুকদারের এই সম্মান প্রাপ্তি চিকিৎসক সমাজের জন্য আনন্দের ও চিকিৎসা শিক্ষকদের জন্য সম্মানের বিষয়।

 

প্রফেসর ডা. এম কিউ কে তালুকদার ১৯৩৯ সালে সিরাজগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন বছর মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকার ইন্সটিটিউশন অব পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ-এ প্রফেসর ডা. নুরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ”সেন্টো’ নামক মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত হন এবং লন্ডনে পাড়ি জমান। সেখানে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন হতে পুষ্টিবিজ্ঞানের উপর ডিপ্লোমা করেন। প্রফেসর ডা. এম কিউ কে তালুকদার ১৯৭২ সালে ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ হতে বায়োলজিকাল সায়েন্স এর উপর পিএইচডি করেন। এছাড়াও তিনি রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান, গ্লাসগো থেকে শিশুস্বাস্থ্যের উপর ডিপ্লোমা এবং এমআরসিপি করেন রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান, লন্ডন হতে। এখান থেকে তিনি ১৯৮৮ ফেলোশিপ অর্জন করেন।

১৯৭৯ সালে প্রফেসর ডা. এম কিউ কে তালুকদার সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা শিশু হাসপাতালে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে অধ্যাপক পদে ঢাকার ইন্সটিটিউশন অব পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ-এ নিযুক্ত হন। এই প্রতিষ্ঠানে কর্তব্যরত থাকাকালীন তিনি বাংলাদেশ জার্নাল অব চাইল্ড হেলথ এর উপর কাজ শুরু করেন। এছাড়া তিনি প্রফেসর ডা. এম আর খানের সহচার্যে ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সারাদেশের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দেন।

তিনি ১৯৯৯ সালে ঢাকার মাতুয়াইলে প্রশিক্ষণ, গবেষণা এবং শিশুরোগ ও স্ত্রী ও প্রসূতিরোগের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ইন্সটিটিউশন অব চাইল্ড এন্ড মাদার হেলথ প্রতিষ্ঠা করেন। সরকারি চাকরি হতে অবসর গ্রহণের পর তিনি আশুলিয়া-য় অবস্থিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ওমেন আন্ড চাইল্ড হেলথ – এ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন।

প্রফেসর ডা. এম কিউ কে তালুকদার জনস্বাস্থ্য গবেষণা এবং পুষ্টি সম্পর্কিত বাংলাদেশের জাতীয় নীতি প্রণয়নেও ভূমিকা পালন করেন। তিনি মাতৃদুগ্ধ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং মাতৃদুগ্ধ পানের ওপর গুরুত্বারোপ করে ২০১৩ সালে গৃহীত হওয়া ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য, বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত শিশুর বাড়তি খাদ্য ও উহার ব্যবহারের সরঞ্জামাদি (বিপণন নিয়ন্ত্রণ) আইন’ প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৫ সালে বাংলা একাডেমি প্রফেসর ডা. এম কিউ তালুকদারকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। ২০১১ সালে তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির স্বর্ণপদক লাভ করেন। ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় সমাবর্তনে তাঁকে সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়