SAHA ANTAR

Published:
2022-02-26 23:20:02 BdST

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘স্মল’-এ তথ্য শব্দতরঙ্গকে ব্যবহার করে মাত্র ৫ দিনেই বানানো যাবে মানুষের হাড়


 


নিজস্ব সংবাদদাতা/ আনন্দবাজার পত্রিকা


অবিশ্বাস্য!

মানুষের হাড় এ বার বানানো যাবে শব্দতরঙ্গকে ব্যবহার করে। খুবই অল্প সময়ে। মাত্র পাঁচ দিনেই।


এত সহজ উপায়ে এত কম সময়ে এত নির্ঝঞ্ঝাটে মানুষের হাড় কৃত্রিম ভাবে বানানোর কোনও উপায় এত দিন জানা ছিল না আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের।

এ বার সেই অভিনব পদ্ধতির উদ্ভাবন করলেন অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আরএমআইটি)-র বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদরা। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘স্মল’-এ। বুধবার।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই পদ্ধতির ফলে অনেক অল্প সময়ে অনেক কম খরচে ক্যানসার, দুর্ঘটনা বা নানা ধরনের স্নায়বিক রোগে ক্ষয়ে যাওয়া হাড় প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে।

গবেষণাটি চালানো হয়েছে গবেষণাগারে। মানুষের উপরে তা এখনও পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। গবেষকরা মানুষের হাড় বানিয়েছেন স্টেম সেল থেকে। যা কোনও রোগীর চর্বি কোষগুলি থেকে নেওয়া হয়েছে। আর পাঠানো হয়েছে অত্যন্ত উচ্চ কম্পাঙ্কের— ১০ মেগাহার্ৎজের শব্দতরঙ্গ, যার অভিঘাতে স্টেম সেলগুলির নির্দিষ্ট কয়েকটি অংশ খুব দ্রুত (মাত্র পাঁচ দিনে) মানুষের হাড়ের কোষে পরিবর্তিত হয়েছে। পাঁচ দিনে বদলে যাওয়ার জন্য প্রতি দিন ১০ মিনিটের জন্য স্টেম সেল-গুলিকে রাখতে হয়েছে ওই উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গের সামনে।

এই পদ্ধতির অভিনবত্ব কোথায়?

স্টেম সেল-গুলিকে জীববিজ্ঞানে বলা হয় ‘সুপার পাওয়ার’। মহাশক্তিধর এই কোষগুলি থেকে মনুষ্যেতর বিভিন্ন প্রাণী তাদের ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সারিয়ে তোলে। সেই অঙ্গগুলিকে বদলে নতুন রূপ দেয়। রোগে বা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রতিস্থাপনের জন্যেও এখন নানা দেশে স্টেম সেল ব্যবহার করা হচ্ছে। তা নিয়ে গবেষণা চলছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেই সব পদ্ধতির বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। সেগুলি সময় ও ব্যয়সাপেক্ষও।

আরএমআইটি-র ভাইস চ্যান্সেলার্স রিসার্চ ফেলো অ্যামি গেলমি বলেছেন, ‘‘এত উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গ এর আগে এত সহজে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি স্টেম সেলকে হাড়ের কোষে এত অল্প সময়ে বদলে দেওয়ার জন্য। এই পদ্ধতি দেখিয়েছে হাড় গজানোর ওষুধ প্রয়োগ না করেও মানুষের হাড় তৈরি করা যায় খুব সহজে এই পদ্ধতিতে। স্টেম সেলের উপরেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় খুব সহজে।’’

এই পদ্ধতিতে গবেষণাগারে একটি ডিশে সিলিকন তেল ও অন্যান্য রাসায়নিকের মিশ্রণে রাখা হয়েছিল স্টেম সেলগুলিকে। এক পাশে সেগুলিকে রেখে অন্য পাশে রাখা হয়েছিল একটি মাইক্রোচিপ। এর মধ্যবর্তী জায়গায় ১০ মেগাহার্ৎজের শব্দতরঙ্গ তৈরি করে তা স্টেম সেল-গুলির উপর পাঠানো হয়েছিল।

স্টেম সেল মানবদেহের এমন সব কোষ যেগুলি থেকে শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোষ তৈরি করে নেওয়া সম্ভব। এই ধরনের কোষ মানবদেহের প্রায় সর্বত্রই থাকে।

এ ক্ষেত্রে কোনও রোগীর অস্থিমজ্জা থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করা হয়নি। যে হেতু তা রোগীর পক্ষে খুব যন্ত্রণাদায়ক। স্টেম সেলগুলি সংগ্রহ করা হয়েছিল চর্বির কোষগুলি থেকে। যেখান থেকে স্টেম সেল সংগ্রহ করা হলে রোগী তা প্রায় টেরই পান না। এই পদ্ধতির বাড়তি সুবি‌ধা, যে সব উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে‌ছে আর সেগুলিকে যে ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তাতে রূপান্তরের এই প্রক্রিয়ার জটিলতা, সময় ও খরচ সবই অনেক কমে গিয়েছে। ফলে, মানুষের হাড় তৈরি করে তা প্রতিস্থাপন করার কাজটাও সহজতর হয়ে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে।


গবেষকরা জানিয়েছেন, ওই উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দতরঙ্গ যে চাপ সৃষ্টি করেছে তাতেই স্টেম সেলগুলি বদলে গিয়েছে মানুষের হাড়ের কোষে।

গবেষকদের আশা, এই পদ্ধতিকে অদূর ভবিষ্যতে গবেষণাগারের বাইরে আনা যাবে। ব্যবহার করা যাবে বাণিজ্যিক ভাবে। এমনকি, স্টেম সেল— আর রোগীর দেহ থেকে সংগ্রহ করতে হবে না। তা বায়োরিঅ্যাক্টর দিয়ে কৃত্রিম ভাবে তৈরিও করে নেওয়া যেতে পারে।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়