Dr. Aminul Islam

Published:
2021-11-29 00:17:22 BdST

ডাক্তার দাদা:বরিশালের বিভিন্ন থানায় যার সেবা পেতে অপেক্ষায় থাকে অযুত মানুষ


 

 

দীপংকর গৌতম
বাংলা দেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
---------------------------------------------------


আমার দাদা মানে আমাদের বিশাল একান্নবর্তী সংসারের বড় ভাই-আমাদের বড়দা একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। দাদা খুব রাশভারী স্বভাবের মানুষ। কিন্তু ঘরে তিনি কতোটা সরস এবং রসিক তা ভেব শেষ করা যাবে না। দাদা আমাদের ভাই-বোনদের ভিতরে মুলত দ্বিতীয়।কিন্তু বড়দির ছায়া আমরা বঞ্চিত বহু আগে থেকে।তিনি থাকেন কাটাতারের ওপারে রাজনীতির কূটকৌশলী মহাত্মা গান্ধীর সীল মারা মুূদ্রার দেশে।ফলে দাদাই বড়। আমাদের বাবা-মা নেই তাই বড়দা মেজদা তাদের জীবদ্দশা থেকেই সক্রিয়।

ডাক্তার  দাদার নাম  ডা. আশুতোষ গৌতম।  তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।  


আমার দাদা দক্ষিনবঙ্গের স্বনামখ্যাত চিকিৎসক। তার চিকিৎসার সুনাম মেহনতী মানুষের ভেতরে বেশী। দাদার কাছে গেলে ফেরার আগে দাদা-বৌদি টাকা দেবেন এটা জানা কথা। কিন্তু সে টাকা হাতে নিয়ে খরচ করতে কষ্ট লাগে। ৫টাকা ১০টাকার নোটের আধিক্য বেশী।দাদা ভিজিট গুনে নেন না।যে পারে না- দেয় না।যা দেয় তাতেই দাদা তুষ্ট থাকেন, গুনেও দেখেন না। অযথা টেস্ট দেয়া বা অযথা ওষুধ লেখা দাদা স্বভাবে নেই।একটা কি দুটো ওষুধের আধিক্য বেশী।মানুষকে কত সাশ্রয়ী চিকিৎসা দেয়া যায় সে ব্যাপারটা তার কাছে মুল।একজন চিকিৎসককত নীতিনিষ্ঠ এবং গণমানুষের হয়ে ওঠে তা দক্ষিনবঙ্গের রিক্সা-বাস চালকদের সাথে কথা বললে বোঝা যাবে।
দাদা ময়মনসিংহ মেডিকেলের ছাত্র ছিলেন। যাওয়া-আসা অনেক কষ্টের ছিলো।৩ দিন লাগতো যেতে।আমি তখোন অনেক ছোট।দাদার বাড়ি আসা আমাদের কাছে উৎসবের মতো ছিলো।ডাকঘর থেকে আসতো চিঠি।বাবার কাছে শুনে আমরা উৎসব মনে করতাম। এখন আমি অজস্র অনুষ্ঠানে ওই শহরে বলতে যাই। মেডিক্যাল কলেজ চোখে পড়তে আমি আপ্লুত হই।ওর ইটগুলো দেখি।আমার দাদার স্মৃতির শহর দেখে আমি আপ্লুত হই। দাদা এখানে অনেক কৃচ্ছতা সাধন করে পড়তেন। তারমধ্যেও সবার জন্য কিছু না কিছু আনতেন। নৌকা ছিলো আমাদের জল-জংলা এলাকার একমাত্র বাহন। দাদা নৌকায় আসবে কখন কখন ভিড়বে তরী আমরা সে অপেক্ষায় থাকতাম।ছুটি ফুরালে যাওয়ার দিন আসতে আাসতে মা কান্নাকাটি শুরু করতেন।যাওয়ার দিন আমাদের স্বজন শুভানুধ্যায়ীরা আসতো। দাদার নৌকা অদৃশ্য হওয়ার পর আমরা সবাই খালের ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতাম। মা খুব কাঁদতেন।একটু ভালো খাবার রান্না হলে মা হোস্টেলের খাবার বর্ননা মনে করতেন। আর খুব কষ্ট পেতেন। দাদাকে পড়াতে বাবা-মা অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন।আর সুদিনের অপেক্ষা করতেন।আমার দাদা বাবা-মার যোগ্য সন্তান। দাদা এলাকার সব মানুষদের শুকনো মুখগুলো মনে রেখেই আজ অবধি চিকিৎসা করছেন।আমাদের পরিবারটাও ভাই-বোনদের ভাগাভাগির বাইরে। আমাদের এলাকায় বোধকরি এটাও একটা দৃষ্টান্ত। আমরা সবাইকে সবাই ধারন করি, সম্মান করি।

দাদা বাবা-মায়ের কোন আশা অপূর্ণ রাখেননি।বোনদের বিয়েসহ ভাইদের দাঁড় করানো কোনখানে দাদার অবদানের কমতি নেই ছিলো না। তার নিজের সন্তান দুজনই উচ্চশিক্ষিত। একজন সফল মানুষ আমার দাদা।

সম্প্রতি তিনি অবসরে গেছেন। তার অবসরের টাকার একটি অংশ তিনি ভাই-বোনেদের সাম্যবাদী ভিত্তিতে সুসম বন্টন করেছেন। দাদা অবসর নিলেও তার অবসর নেই। বরিশালের বিভিন্ন থানায় তার জন্য অপেক্ষা করে থাকে অযুত মানুষ।তিনি মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছেন।সবাই আমার দাদার নিরোগ ও সুস্হ জীবন কামনা করবেন। দাদার মতো একজন নিবেদিত চিকিৎসক একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়