Ameen Qudir
Published:2017-02-13 20:51:46 BdST
মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারের শিকার এক ডাক্তার ম্যাজিস্ট্রেটের সত্য কাহিনি
ডাক্তার প্রতিদিন
__________________________
তিনি একজন ডাক্তার। লোকসেবী । রোগীর কষ্টে কখনওই তিনি স্থির থাকতে পারেন না। কর্তব্য কাজেও তিনি অকুতোভয়।
কর্মসূত্রে তিনি সরকারের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট । নির্ভিক। সাহসী , সৎ ও লোভহীন। নিজের সংসারের টানাপড়েন তিনি মেটান অবসরের সময় বাড়তি পরিশ্রম করে।
দু:সাহসী অভিযান পরিচালনা করতে গিয়েই তিনি এখন কোন কোন অসৎ মিডিয়ার কোপানলে।
যে কিনা জনসেবী; তাকেই মিডিয়া বানিয়ে দিয়েছে জনশত্রু।
তার অদম্য কাজে ক্ষতিগ্রস্তরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডায় লিপ্ত। তাকে তারা রাজনৈতিকভাবে মিথ্যাপরিচয় দিয়েও কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা চালায়।
তাই বলে দমে যান নি তিনি। অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। তার নাম
ডা. তায়েব-উর-রহমান আশিক ।
কয়েকদিন আগে বগুড়া থেকে সংবাদদাতার পাঠানো একটি খবর প্রকাশ হয় ডাক্তার প্রতিদিনে। সেই লেখায় নাম উল্লেখ না করে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কথা বলা হয়। তার পর সেই খবরের সূত্রে অনেকেই যোগাযোগ করেন ডাক্তার প্রতিদিন দপ্তরে।
তাদের পরিস্কার বক্তব্য , একজন সৎ নির্ভিক সরকারি কর্মকর্তা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
তার সম্পর্কে যা সত্য , সঠিকভাবে তা তুলে ধরা হোক।
এসব লেখার মধ্যে যেটি সবচেয়ে মর্মস্পর্শী সেটি অামরা প্রকাশ করছি সত্যাসত্য যাচাই করে।
দীর্ঘ পত্র লিখেছেন একজন চিকিৎসক , যিনি ডা. আশিককে খুব ভাল ভাবে জানেন। সম্পাদক ডা. সুলতানা আলগিন বরাবরে লেখা পত্রটি আমরা প্রায় অবিকৃতভাবে তুলে ধরলাম।
''
শ্রদ্ধেয় ম্যাডাম,
প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই সত্যি ঘটনা জানার আগ্রহ প্রকাশ করার জন্য এবং আমাকে বলার সুযোগ দেয়ার জন্য।
আমি ডাক্তারপ্রতিদিনের একজন একনিষ্ঠ পাঠক এবং শুভাকাংখী। কিন্তু এমূহুর্তে আমি চাইনা আমার বক্তব্য আমার নাম দিয়ে ছাপা হোক। আমি শুধু আপনাকে অবহিত করার জন্য লিখছি।
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমি এমন একটা কাজ করি , প্রশাসন, পুলিশ, আনসার, কাস্টমস সহ বিভিন্ন ক্যাডারের যত কর্মকর্তাদের কিছু ক্লাস আমাকে নিতে হয়। সেই সূত্রেই বগুড়ার ম্যাজিস্ট্রেট ডা আশিকের সাথে আমার পরিচয়। আশিক ডাক্তার হলে ও প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেছেন। এমন আরো হাতে গোনা কিছুসংখ্যক ডাক্তারের সাথে আমার পরিচয় হয় যারা ডাক্তার হয়ে ও পুলিশ কিংবা অন্য ক্যাডারে যোগ দিয়েছে। ডাক্তার হবার কারণে স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের চেয়ে তাদের সাথে আমার সম্পর্ক সবসময়ই বেশি আন্তরিক।
আশিক ম্যাজিস্ট্রেট হলে ও তার নিজের আসল পরিচয় কখনোই ভুলে যাননি। ছুটির দিনে প্র্যাকটিস করার জন্য সে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত অনুমতি নিয়েছেন (সে চিঠির কপি নীচে সংযুক্ত করে দিলাম)। অতএব, প্র্যাকটিস করে সে কোন অবৈধ কাজ করেননি। তাকে হেয় করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে লেখা হয়েছে যে তিনি অবৈধভাবে চেম্বারে বসে গেছেন।
বগুড়া শহরে ভুয়া ডাক্তার, ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে উঠা ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এসবের জন্য আশিক ছিলেন মূর্তিমান আতংক। সরকারী নিয়মের মধ্যে থেকেই এদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন এবং যথানিয়মে শাস্তি দিয়েছেন। এমনকি ভুয়া ডাক্তার হাতেনাতে ধরার জন্য ছদ্মবেশে রোগী পাঠিয়ে ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন। বাংলাদেশে এমন কতগুলো উদাহরণ আছে যেখানে ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এমন সোচ্চারভাবে কোন ম্যাজিস্ট্রেট অবস্থান নিয়েছেন?
আশিক এমন করতে পেরেছেন কারণ নিজে একজন ডাক্তার এবং ডাক্তারদের পেশাগত সম্মানের প্রতি তার শ্রদ্ধা রয়েছে।
আমরা এখন ডাক্তারদের ম্যাজিস্ট্রেসি নিয়ে সোচ্চার হচ্ছি। অথচ একজন ম্যাজিস্ট্রেট যখন ডাক্তারদের সপক্ষে কোন কাজ করছেন আমরা তাকে খলনায়ক বানিয়ে দিচ্ছি!!!
শাস্তি পাওয়া এক ক্লিনিকের মালিকের ভাগ্নে হলো বগুড়া প্রেসক্লাবেরবড় নেতা । তিনি আশিকের কাছে গিয়েছিলেন তদবির করার জন্য। কাজ না হওয়াতে তিনি স্বউদ্যোগে আশিকের সম্মানহানী করার জন্য বানোয়াট খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত করার ব্যবস্থা করেছেন। বাংলাদেশের ডাক্তারদের কি উচিত না এমন খারাপ একটা সময়ে আশিকের পাশে দাঁড়ানো?
ক্লিনিক মালিকের সাথে নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে পঞ্চম তলায় একত্রে থাকার বিষয়টা বলি। আশিক চাইলেই সরকারী বাসায় থাকতে পারেন। কিন্তু তার স্ত্রী যেহেতু ঢাকায় থাকে সেহেতু তার বড় বাসা প্রয়োজন নেই। তাই আলাদা মেসে থেকে বাড়িভাড়ার টাকাটা বাচানোর চেষ্টা করেন।
এখানে একটা ব্যাক্তিগত কথা বলা ঠিক হবে কিনা জানি না, কিন্তু সত্য তুলে ধরার তাগিদে না বলেও পারছি না যে , বিশ্বস্ত সূত্রে অঅমরা জেনেছি ,
২০১৪/২০১৫ সালে তার মা মারা যান। সে সময় আই সি ইউ র বিল এসেছিলো প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। পরিবারের সামর্থ্য না থাকায় বড় ছেলে হিসেবে তিনি ব্যাংক লোন নিয়ে এই টাকা পরিশোধ করেন যা এখন বেতন থেকে কিস্তির মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিশোধ করছেন।
ছুটির দিনে রোগী দেখলে হয়তো তার কিছু বাড়তি ইনকাম হয়। তবে সেজন্য তিনি কাউকে রোগী পাঠাতে বাধ্য করেননি।
ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সমিতি তাকে মোবাইল কোর্ট না করার জন্য অনেক টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছে। সে যদি একজন অসৎ মানুষ হতো তাহলে অতি সহজেই টাকা নিয়ে এই ব্যাংক লোন শোধ করে দিতে পারতেন । আশিক ঘুষের টাকা প্রত্যাখ্যান করেছে। নিজে মেসে থেকে কষ্ট করে টাকা জমিয়ে এই টাকা পরিশোধ করছেন। এমন একজন মানুষকে অসৎ বলা কি আমাদের উচিত ম্যাডাম?
এই হচ্ছে, দেশের একজন সৎ কর্মকর্তার জীবন কাহিনী। যিনি সততা রক্ষার জন্য সারাদিন হাড় ভাঙা খাটুনির পর আবার অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন লোন শোধ করার জন্য । তিনি অসৎ পথ বেছে নেন নি, এই কি তার অপরাধ।
পিজিটি লিখে প্র্যাকটিস করার প্রসঙ্গ এসেছে। স্বীকার করছি এটা তার ভুল হয়েছে। কিন্তু ম্যাডাম পেরিফেরিতে প্রফেসরদেরকে ও দেখেছি এফ আই সি এস, এফ এ সি এস, বি সি এস (স্বাস্থ্য) এসব লিখে প্র্যাকটিস করতে। ঢাকা শহরের বাস্তবতায় যেটা অন্যায় পেরিফেরিতে সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সর্বজনস্বীকৃত। তারপর ও আমি স্বীকার করে নিচ্ছি এটা অন্যায়। তবে এই সামান্য অন্যায়ের জন্য এতবড় শাস্তি তার পাওয়া উচিত না।
আশিক বগুড়ায় কর্মরত থাকা অবস্থায় সফলতার সাথে শতাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন । সবগুলোর লিংক দেয়া সম্ভব না। যতদিন সে বগুড়ায় কর্মরত ছিলো কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু বলে নাই। মজার ব্যাপার হলো সে বদলী হবার সাথে সাথেই এতদিনের শোধ নেবার জন্য ক্লিনিক মালিক সমিতি তার বিরুদ্ধে লেগেছে।
ম্যাডাম সকল ছবি, স্ক্রীনশট আর লিংক নীচে সংযুক্ত করে দিলাম। সবগুলো দিতে পারিনি। আরো অনেক আছে। আশা করি আশিকের উপকার হয় এমন কিছু আপনি লিখবেন।
অামাদের সকলের উচিত রাষ্ট্রের এমন একজন সৎ নির্ভিক নির্লোভ ডাক্তারকর্মকর্তার পাশে দাঁড়ানো। তাকে সাহস ও অনুপ্রেরনা যোগানো।
ডাক্তার প্রতিদিন সেই ভূমিকা পালন করবে , এটাই সবাই প্রত্যাশা করি।
আপনার মতামত দিন: