SAHA ANTAR

Published:
2021-08-29 14:25:52 BdST

আই ডোনেশনের গল্প


 

পার্থ প্রতিম দত্ত মজুমদার,

চক্ষু চিকিৎসক,

শঙ্কর নেত্রালয় , চেন্নাই
________________
৭ই ডিসেম্বর ১৯০৫ সন | চেকোশ্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগের কাছে ছোট একটি শহর অলমুজ | জেলা হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের অপারেশন থিয়েটারের বাইরে একটা বেঞ্চে ঠায় বসে আছে এলিয়স গ্লোগার নামের এক মাঝ বয়সী পুরুষ | তার জীবন কিছু দিন আগে এক অবিশ্বাস্য মোড় নিয়েছে | হাঁস মুরগির খাঁচা চুন দিয়ে পরিষ্কার করতে গিয়ে সেই চুনের জল এসে পড়েছিলো তার মুখে - আর সেই থেকে তার দুটো চোখের কর্নিয়া ঝলসে গিয়ে সে আজ চার মাস হলো সম্পূর্ণ অন্ধ | শত চিকিৎসা করেও কিছু লাভ হয় নি | এই হাসপাতালের একজন ডাক্তার তাকে বলেছেন যে তিনি শেষ একটা চেষ্টা করে দেখতে চান ,তাই আজ সে এখানে | নিজেকে ভাগ্যের কাছে সমর্পন করে, ডাক্তারের ডাকের আশায় বসে | তাঁর ঠিক উল্টো দিকের বেঞ্চে বাবার সাথে বসে আছে ছোট্ট কার্ল | চার দিন আগে লোহার একটি টুকরো ছুটে এসে কেড়ে নিয়েছে এগারো বছরের এই ফুটফুটে ছেলেটির ডানচোখের দৃষ্টি | ডাক্তার একটি চুম্বক দিয়ে শত চেষ্টা করেও বের করতে পারেন নি সেই লোহার টুকরাটিকে। কার্লের ডান চোখটি লাল হয়ে ফুলে উঠেছে, অবিরত জল পড়ছে, আর শুরু হয়েছে অসহ্য যন্ত্রণা l পাছে আরো সাংঘাতিক কিছু ক্ষতি না হয়ে যায় ,তাই ডাক্তার বিধান দিয়েছেন কার্লের ডানচোখটি উপড়ে ফেলার | তাই কার্ল অপেক্ষা করছে কখন ডাক আসে অপারেশন থিয়েটার থেকে |

যে ডাক্তারের অপেক্ষায় কার্ল ও এলিয়স গ্লোগার বসা , তাঁর নাম এডওয়ার্ড কনরাড জিৰ্ম | ৭ ই ডিসেম্বর ১৯০৫ এই ছোট্ট শহরটিতে রচিত হলো এক নতুন অধ্যায় - ছোট্ট কার্লের ডানচোখ বের করে নিয়ে, তার স্বচ্ছ অংশটি (যাকে কর্নিয়া বলা হয় ) এডওয়ার্ড কনরাড জিৰ্ম প্রতিস্থাপন করেন এলিয়স গ্লোগারের দুই চোখে। কার্লের একই কর্নিয়া থেকে পাঁচ মিলিমিটার করে নিয়ে গ্লোগারের দু চোখে প্রতিস্থাপন করা হয় | আর গ্লোগার ফিরে পেলো তাঁর দু চোখের দৃষ্টি | যদিও কিছুদিন পর তাঁর ডান চোখের গ্রাফট (প্রতিস্থাপন করা স্বচ্ছ অংশটি ) খারাপ হয়ে যায় , কিন্তু তাঁর বাঁ চোখের দৃষ্টি আমৃত্যু ঠিক ছিল বলে জানা যায়। ঠিক এক বছর পর এডওয়ার্ড কনরাড জিৰ্ম ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত এক কনফারেন্সে এই যুগান্তরকারী আবিষ্কারের ঘোষণা করেন আর গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পদ্ধতি |

ভারতবর্ষে, প্রতি বছর ২৫ শে আগস্ট থেকে ৮ ই সেপ্টেম্বর পালন করা হয় জাতীয় চক্ষুদান পক্ষ (ন্যাশনাল আই ডোনেশন ফোর্টনাইট / National Eye Donation Fortnight) | এর উদ্দেশ্য জনসাধারণের মধ্যে চক্ষু দানের সচেতনতা গড়ে তোলা | (বাংলাদেশে পালিত হয় ২রা নভেম্বর জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস আর এই দিন কে মাঝে রেখে এক সপ্তাহ জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান প্রচার সপ্তাহ।) আমাদের দেশে বা সারা বিশ্বে, এখনো সংস্থাপিত হতে পারা চোখের অভাব - এক মাত্র মরণোত্তর চক্ষুদানের মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব| আসুন আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হই মরণোত্তর চক্ষুদানের জন্য - যাতে আগামী পৃথিবীর শত শত এলিয়স গ্লোগাররা ফিরে পায় তাঁদের চোখের দৃষ্টি |

বিঃ দ্রঃ একমাত্র চোখের স্বচ্ছ অংশ, যাকে কর্নিয়া বলা হয় তার প্রতিস্থাপন সম্ভব l রেটিনা বা চোখের নার্ভ বা শিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার পুনর্স্থাপন করা সম্ভব নয়

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়