SAHA ANTAR

Published:
2021-08-12 17:24:24 BdST

অ্যাপোলো হাসপাতালে মায়ের জঠরে শায়িত শিশুকে রক্ত দিয়ে বাঁচালেন চিকিৎসকরা


 

অভিরূপ দাস/ সংবাদ প্রতিদিন
________________

জন্মায়নি এখনও। তারই নাকি রক্তের সমস্যা। ভ্রূণের শরীরের রক্ত গলে জল! তা গিয়ে জমা হচ্ছে ত্বকের নীচে। জটিল এ অসুখের নাম ফিটাল হাইড্রপস্। কলকাতার (Kolkata) অ্যাপোলো হাসপাতালে মায়ের জঠরে শায়িত শিশুকে রক্ত দিয়ে বাঁচালেন চিকিৎসকরা।



অত্যন্ত বিরল এ অসুখ। ততটাই বিরল চিকিৎসা। বর্ধমানের বাসিন্দা রিমা চাকলাদার ২৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। আল্ট্রাসোনোগ্রাফির জন্য সম্প্রতি অ্যাপোলো হাসপাতালে এসেছিলেন। সেখানেই চিকিৎসকরা শারীরিক পরীক্ষা করে দেখেন জঠরের শিশুর শরীরে অত্যধিক জল জমে। কারণ? হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রক্তের এ অসুখের কারণও রক্তজনিত। শিশুটির মায়ের রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ। বাবার রক্ত বি পজিটিভ। এমতাবস্থায় মায়ের প্রথম প্রেগন্যান্সি তে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না। এক্ষেত্রেও হয়নি। দম্পতির প্রথম সন্তানের বয়স ৯ বছর। কিন্তু প্রথম সন্তান যদি পজিটিভ রক্ত গ্রুপ নিয়ে জন্মায় তাহলে পরবর্তী সন্তানদের রক্তাল্পতা জনিত বড়সড় সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমনটা হয়েছে রিমার গর্ভস্থ ভ্রূণের। হিমোগ্লোবিন নেমে গিয়েছিল ৩-এ। যা সাধারণত ১২-এর ঘরে থাকার কথা।


ব্যাখ্যা দিয়ে ডা. কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রথম বাচ্চাটির ব্লাড গ্রুপ পজিটিভ ছিল। এদিকে মায়ের শরীরে নেগেটিভ রক্ত। ওই বাচ্চা জন্মানোর পর থেকেই কিছু পজিটিভ ব্লাড সেল মায়ের শরীরে ঘুরপাক খাচ্ছিল। মায়ের শরীরের কাছে তা অচ্ছুৎ। তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলেছিল মায়ের শরীর। দ্বিতীয় বাচ্চাও যখন পজিটিভ ব্লাড গ্রুপ নিয়ে এল, সেই ব্লাড সেলকেই মারতে শুরু করল মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ভ্রূণের রক্ত জলে পরিণত হয়ে তা পেটে, বুকে এবং চামড়া নীচে জমতে থাকে। গর্ভস্থ ভ্রূণের চিকিৎসার জন্য তৈরি হয় বিশেষ মেডিক্যাল টিম। যে টিমে ছিলেন ডা. সীথারামামূর্তি পাল, ডা. কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়, ডা. সুমনা হক, ডা. মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়। ভূমিষ্ঠ হয়নি বাচ্চা। আর পাঁচজনকে যেভাবে রক্ত দেওয়া হয় সেভাবে তাকে রক্ত দেওয়া সম্ভব নয়। শিশু যখন জঠরে থাকে তখন অ্যাম্বিলিকাল কর্ডের মাধ্যমেই সে সবকিছু পেয়ে থাকে। মাতৃদেহের জরায়ুতে অবস্থিত প্ল্যাসেন্টার সঙ্গে যে নালির ভিতর দিয়ে ভ্রূণের বিভিন্ন পদার্থের আদান প্রদান ঘটে সেটাই অ্যাম্বিলিকাল কর্ড। এই কর্ডে সূঁচ দিয়েই প্রয়োজনীয় রক্ত দেওয়া হয় ভ্রূণকে।



এই ব্লাড ট্রান্সফিউশন না রক্ত সঞ্চালনের জন্যেও তৈরি হয় বিশেষ টিম। যে টিমে ছিলেন ডা. সুদীপ্ত শেখর দাস, ডা. জয়ন্ত কুমার গুপ্ত এবং শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। আপাতত ২০ মিলিলিটার দেওয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই ভ্রূণটিকে আরও কয়েকবার রক্ত দিতে হবে, যার জন্য তাঁরা প্রস্তুত। এ ধরণের সমস্যা সমাধানে বিয়ের আগেই রক্ত পরীক্ষার নিদান দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সেক্ষেত্রে আগে থেকেই সাবধান হওয়া যাবে। বিয়ের আগে এই সমস্যা প্রতিরোধে যথেষ্ট কার্যকরী প্রতিষেধক রয়েছে। বিদেশে এই টীকাকরণ করে ফিটাল হাইড্রপসের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমানো গিয়েছে। ডা. শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, প্রতিটি মায়েরই প্রথম প্রেগন্যান্সির শুরুতেই রক্তের গ্রুপ জেনে নেওয়া উচিত এবং প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো চলা উচিত। প্রথম প্রেগন্যান্সিতেই মায়েদের অ্যান্টি ডি ইঞ্জেকশন দিলে এই সমস্যা এড়ানো যায়।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়