Dr.Liakat Ali

Published:
2021-07-24 16:30:21 BdST

ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমি,- এর উপযোগীতা ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা


মোঃ আখলাক হোসেন

_________________________

মানব চরিত্রের প্রথম ও প্রধানতম উপাধানটি হচ্ছে তার ‘প্রতিভা’। এই প্রতিভা শব্দটি আমাদের অদ্যকার মূল প্রতিপাদ্য। পাঠক হয়তো ভাববেন এ নিয়ে আবার প্রবন্ধ রচনার প্রয়াস বা ঘটা করে কিছু লেখার কি এমন থাকতে পারে। উত্তরে বলবো হ্যাঁ আছে- কারণ উল্লেখিত ‘প্রতিভা’ শব্দটি যদিও একটি সাধারণ শব্দ বলেই আমাদের মাঝে পরিচিত তথাপি এর ব্যাপ্তি ও পরিধি এবং সর্বোপরি মানব জীবনে চরম উন্নতি ও সাফল্যেও মূলে উহাই একেমাত্র সম্বল। প্রতিটি মানবাত্মায় তার সুষ্ঠু, সুন্দর প্রতিভা সম্পদটি প্রথমত: সুপ্ত অবস্থায়ই বিদ্যমান থাকে। কেবলমাত্র প্রেরণা বা মনোবল, অধ্যবসায় ও ধৈর্যের সাথে সাধনা করলে জ্ঞান, দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমেই এর সুষ্ট বিকাশ ঘটানো সম্বভ। অন্যথায় নয়। সুতরাং একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই অনুমান করা যাবে যে এই শ্রেষ্ঠ সম্পদ প্রতিভার অধিকারী হতে হলে কি পরিমাণ ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সীমাহীন সাধনার প্রয়োজন হয়। সদিচ্ছা ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে সাধনা করতে পারলে বিরল প্রতিভার অধিকারী হওয়া যায় ড. মঞ্জুশ্রী এমনই এক উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত।
আমি এই প্রতিভা সম্পদের সামান্যতম কিছুও অর্জন করতে পারিনি। বলতে হয় অদৃষ্টের এক নির্মম পরিহাস। মাধ্যমিক শিক্ষা জীবনেই অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় বাাবা মারা যান। সংসারের আর্থিক টানা পোড়নের মাঝে কোন মতে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেই অনেকটা তড়িঘড়ি করেই একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী নিতে বাধ্য হই। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে জীবনে এক বিরল ব্যক্তিত্বের আশা যদিও অহরহ মনের মধ্যে কেঁদে মরছিল তবুও জীবনের প্রথমই শিক্ষকতার মত মহান পেশায় নিয়োজিত হতে পেরে নিজেকে কিছুটা সার্থক মনে করেছি। শিক্ষকতা পেশায় চলতি মিলেনিয়ামে বিশ বৎসর পূর্ণ হতে চলেছে, এর মধ্যে জীবনে চাওয়া ও পাওয়ার অনেক কিছু থাকলেও শ্রেষ্ঠ পাওয়া এই যে, শিক্ষকতা শুরুর প্রথম দিকের কিছু শিক্ষার্থী যারা পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকতা ও অন্যান্য সম্মান জনক পেশায় নিয়োজিত আছে তাতের আকুন্ঠ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। অন্যদিকে আমার নিজের প্রাথমিক শিক্ষক থেকে শুরু কওে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষক ও গুরুজনদের প্রতি আমার আনÍরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসার কমতি হবে না আজীবন। শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিভার বিকাশটা কেবলমাত্র আত্মা থেকে আত্মাতে সুষ্ঠ সম্প্রচার ও সম্প্রসারণের ব্যাপার। এর কোন বিকল্প নেই। ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমি আজ একটি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান যার মূল প্রেরণা সেই মহামূল্যবান ও ধ্রæব নক্ষত্র তুল্য উজ্জ¦ল প্রতিভা ‘ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী’। আদি নিবাস সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানাধীন ১ নং লামাকাজী ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রাম। জমিদার পরিবারের পুত্রবধু হয়েও যার মনের এক বিরল প্রতিভা সম্পন্ন মহান ব্যক্তিত্বের স্বপ্ন ও আশা ব্যক্তিগত জীবনে তাকে এক অনন্যা তাপসীর ভূমিকায় অবতীর্ন করেছিল। সেই অনন্যা জ্ঞান তাপসী, রতœগর্ভা মাতৃতুল্য মহিয়সী রমনীর সম্পর্কে কিছু লেখার দুঃসাহস আমার কোন মতেই হচ্ছিল না। কারণ আমি নিজে একজন অল্প শিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষক।
তারপরও মনে পড়ে একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের বাণী, “শ্রদ্ধার সাথে দান করতে পারলে শ্রদ্ধার সাথেই তা গৃহীত হয়”। জন জ্যাক রুশো যদিও বলেছেন,“শিশুর আসল শিক্ষক হচ্ছে প্রকৃতি”। অর্থাৎ প্রকৃতি থেকেই সে শিখবে তাকে জোর করে কিছু শেখানো যাবে না। তথাপি একথাটিও অনস¦ীকার্য যে প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেয়ার ব্যাপারেও শিশুকে শিক্ষার প্রতি প্রেরণা ও সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়ার প্রয়োজন আছে। বিংশ শতাব্দীর এই আকিলপুরে লেখা-লেখি বা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার এক অভিনব প্রেরণা হচ্ছে সুমন বিপ্লব নামে এক ছিন্নমূল বালক। যার অসীম প্রেরণা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ প্রায় পাঁচ বৎসর যাবৎ বাংলাদেশের এক অজোপাড়া গাঁ এই আকিলপুরে প্রথমে একটি ক্ষুদ্র পাঠাগার যা পরবর্তীতে একটি আদর্শ একাডেমিতে রূপ নিতে চলেছে। বলতে হয় সুমন বিপ্লবেরই দেয়া সীমাহীন প্রেরণার জোরে আজ আমার এই ক্ষুদ্রতম প্রয়াস। ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমি সম্পর্কে কিছু লেখার প্রয়াস আমার নিজের পক্ষ থেকে ঠিক শ্রদ্ধার সাথে কিছু দান করারই সামান্যতম চেষ্টা মাত্র। তাঁর বহু গুণগ্রাহী, ভক্ত ও সুধী পাঠক সমাজে তা কোনমতে গৃহীতহলে নিজের চেষ্টা ও সাধনাকে সফল মনে করতে পারি। বর্তমান বাংলাদেশে তথা গোটা মানব সমাজে যে হারে দিন দিন মানুষের মাঝে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও শ্রমবিমুখতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন সচেতন মহলের বিশেষ উদবিগ্ন ও চিন্তাগ্রস্থ হবারই কথা। আমাদের বর্তমান সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও কর্মবিমুখতার করাল গ্রাস থেকে রক্ষার চেষ্টা আজ আমাদের সবাইকে করতে হবে। আর তার জন্য প্রথমেই দরকার আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী শিক্ষার প্রচার ও প্রসার নিশ্চিত করা। কারণ কেবলমাত্র শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমেই মানুষ শ্রমশীল, সম্পদশালী ও সুখী সমৃদ্ধ হতে পারে। অন্য কোনভাবে তা সম্ভব নয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শ্রমবিমুখ মানুষ আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মত কোন দৈন উপায়ে প্রচুর ধন রতেœর মালিক হতে পারলেও তার আত্মায় প্রকৃত সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য একমাত্র উপলক্ষ বা অবলম্বন এ শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আমাদের বিশেষভাবে যতœবান হতেই হয়। এতে কোন প্রকার বিতর্ক বা দ্বিমতের অবকাশ নেই।
ছোটবেলা বাাবা, দাদা ও গ্রামের প্রবীণ মুরব্বীদের মুখ থেকে শুনেছি আকিলপুর গ্রামের অন্যতম জমিদার বাবু শ্রী শরচ্চন্দ্রধর চৌধুরীর পৌত্র শ্রী শৈলেন্দ্র কুমার চৌধুরী এই আকিলপুরেরই একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যার প্রতিটি চালচলন ও ব্যবহার আচরণে অধিকাংশক্ষেত্রে কেবল শিক্ষা ও উন্নত সংস্কৃতির ছাপ পরিলক্ষিত হতো। এর বাস্তব প্রমাণ আজ আমাদের চোখের সামনে প্রতীয়মান। কারণ ধনরতœ ও জমিদারী কারো ব্যক্তিগত স্থায়ী সম্পদ নয়। এইসব পার্থিব ধন-রতœ, অর্থ-সামর্থ মানুষের জীবনে বালির বাঁধের মত অথবা নদীর জলের মতই জোয়ারে আসে আবার ভাটায় শুকিয়ে যায়। শত চেষ্টা করেও তা ধরে রাখা যায় না। সামান্য সময়ের স্মৃতিচারণ করলে দেখা যায় এই জগতের কত রাজা মহারাজা, আমীর সওদাগর থেকে শুরু করে অনেক বিত্তশালীদের অবস্থা কালের চক্রে ভাগ্য বিপর্যয়ে সম্পূর্ণ নিঃস্ব ও বিলীন হতে খুব বেশি সময়ের দরকার হয় না। এ বিশ্বের সর্বত্র এমন অনেক ভাংগা গড়ার লাখো প্রমাণ ও নিদর্শন সদা বিরাজমান । কিন্তু পৃথিবী সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত যত জ্ঞানী গুণী শিক্ষানুরাগী বিজ্ঞজনের জন্ম হয়েছে এবং জীবনে যারা এই স্বর্গীয় সম্পদ শিক্ষার রতœ মালায় যে যত সমৃদ্ধ হতে পেরেছেন তাদের কেউ কোনদিন ইহজীবনে বা জীবনাবসানের পরও ঐসব নিঃস্ব শূন্য ধনীদের মত মানব মন থেকে বিস্মৃত বা বীতশ্রদ্ধ হন নি। প্রাচীন কালের বিজ্ঞজনদের মধ্য থেকে খৃষ্টপূর্ব দুই হাজার পাঁচশত বৎসর পূর্বের ব্যক্তিত্ব শ্রেষ্ঠ দার্শনিক সক্রেটিসের নাম থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যত মানব সন্তানই এই স্বর্গীয় সম্পদ পবিত্র শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও অনুরক্ত ছিলেন বা আজো আছেন এবং সুদূর ভবিষ্যতে থাকবেন। তাদের কারো মূল্য, মর্যাদা, সম্মান প্রতিপত্তি কোনদিন মানব মন থেকে নিঃশেষিত হবে না, হতে পারে না। এ কথাটি সম্পূর্ণ দৃঢ়তা ও নিশ্চয়তার সাথেই বলা যায়।
আমাদের শ্রদ্ধেয় গুরুজন বাবু শ্রী শৈলেন্দ্র কুমার চৌধুরী ছিলেন শিক্ষানুরাগী। তাঁর পরশে আমাদের মূখ্য আলোচনা ব্যক্তিত্ব ড. মঞ্জুশ্রী চৌধুরী যেন সোনায় সোহাগার মত নিজ জীবনকে উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত ও চির ভাস্কর করে তুলেছেন। এমন স্বর্গীয় সম্পদ শিক্ষায় সমৃদ্ধ গুণীজনদের কাছে আজ আমাদের এই অবহেলিত অশিক্ষিত সাধারণ মানুষদের একটাই মাত্র প্রত্যাশা আপনারা আমাদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে সাহায্য করুন। আপনাদের পদাংক অনুসরণের সুযোগ দিন। আমরা যেন আপনাদেরই দয়ায় আলোর পথে এগোতে পারি। ড. মঞ্জুশ্রী একাডেমির ভবিষ্যৎ কর্মসূচীর অন্যতম কাজ এলাকার শিক্ষা, সংস্কৃতিও আর্থসামাজিক উন্নয়নের দিকনির্দেশনা, প্রয়োজনীয় উপদেশ, পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা দান করে এ মানুষগুলিকে অধিক কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করুন। পরিশেষে সমাজের সকল শিক্ষানুরাগী, সামর্থশীল মহৎ ব্যক্তিত্বের কাছে আকুল আবেদন, আপনারা আমাদের দোয়া, আশীর্বাদ ও সার্বিক সাহায্য সহানুভূতি দান করুন। [লেখা-২০০০ সাল]

মো. আখলাক হোসেন
পিতা: মৃত মো. আলকাছ আলী
গ্রাম: আকিলপুর
পো: পরগনা বাজার-৩০৮৩, বিশ্বনাথ, সিলেট।

লেখা অধ্যাপক ডা শুভাগত চৌধুরী র সৌজন্যে পাওয়া 

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়