Ameen Qudir

Published:
2017-02-07 16:41:29 BdST

ডিগ্রির দেখা কই : লাইব্রেরীতে বয়সের বলি রেখা



 

ডা. মো. তরিকুল হাসান
__________________

 

বিএসএমএমইউ এর বটতলাটা সন্ধার পর বসার জন্য খুব ভালো একটা জায়গা। কিছু আলো কিছু ছায়ার খেলায় মৌন একটা পরিবেশ।

মন খারাপ করলে চুপিচুপি বন্ধুদের কোলাহল ছেড়ে অন্ধকারে বসলে মন ভাল হয়ে যায়।

এখানে অন্ধকারে ড্রাইভাররা জমিয়ে আড্ডা দেন। খুব সম্ভবত পৃথিবীতে ড্রাইভারদের সবচেয়ে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়।

অলস আর অপেক্ষমান মানুষদের মাথায় দার্শনিক ভাবনা ঘোরাফেরা করে। আমি এখন জসিম ভাইয়ের সঙ্গে বসে গল্প করছি।

জসিম ভাই একজন বিশিষ্ট ড্রাইভার। একটু পর রাত দশটা বাজবে। 'বড় আফার ছুটি অইব তখন'।

আগ্রহী শ্রোতা পেয়ে তিনি বিচিত্র ভঙ্গীমায় আমাকে বিএসএমএমইউ লাইব্রেরীর বর্ণনা দেন।

বিভিন্ন বয়েসী একদল চিকিৎসক খুব ভোরে এখানে এসে পৌছান। কেউ তাদের ছোট্ট শিশুকে তাদের নানা-নানী বা দাদুর কোলে রেখে সন্তপর্ণে টেবিল থেকে তুলে নেন ভারী ডেভিডসন বইটা। তারপর মুখে একটু পানির ঝাপটা দিয়ে ভোরের আলসে ঘুমটাকে দুর করে ছোট একটা হাই তুলে বেসিনের আয়নায় চোখ রাখেন।

আয়নাটা খুব অবাক করে দেয়। বয়সের বলি রেখা বেড়েই চলছে। অথচ ডিগ্রির দেখা কই?

'না, আরো পড়তে হবে। আমি বোধহয় ফাকি দিচ্ছি!' ভাবতে ভাবতে পা বাড়ায় ওরা।

বটতলাটা থেকে সামান্য দুরে একটা লিফট।
লিফটের সামনের লম্বা লাইনটাতে একসময় সিরিয়াল আসে। লিফট থেকে নামলে লোহার চকচকে বাধা পেরোলে সেই পুরনো মায়ামাখা লাইব্রেরীর কাঠের খোপগুলো!

এখানেই পেরোয় যৌবনের উত্তাল দিনগুলো। 'একঘেয়ে সময়' আর 'খুব ক্লান্তি' হয় সঙ্গী।

আমি মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভার জসিম ভাইয়ের মুখে এই লাইব্রেরীর গল্প শুনি। বেশ ভালো লাগে। আর গল্পটাকে মনে হয় খুব আপন। কেননা এতো আমারই গল্প . . আমাদেরই গল্প!

_______________________________


ডা. মো. তরিকুল হাসান
চিকিৎসক
রমেক

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়