Ameen Qudir

Published:
2017-02-05 21:51:38 BdST

ডা. ফারহানা ও ডা. শর্মিষ্ঠা অসম্ভব ভদ্র ও বিনয়ী


 



ডা. মোশাররফ হোসেন
___________________________

যে খাতের সফলতার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিগত কয়েক বছর ধরে বিদেশের মাটিতে গিয়ে সহাস্যে পুরস্কার গ্রহণ করছেন,যে খাতে কোন কোন ইনডিকেটরে আমরা ভারত ও পাকিস্তান থেকেও ঢের এগিয়ে, সীমিত বাজেটের সর্বোত্তম ব্যবহার করে সারাদশের মানুষকে নিরন্তর সেবা দিয়ে যাচ্ছে সেই স্বাস্থ্য খাতের বিশেষত ডাক্তার দের নিয়ে যেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বা চলছে এটা আমাদের জন্য অশনি সংকেত।

একটা দেশ সুন্দরভাবে চলার জন্য সকল স্তরের পেশাজীবী দের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কোন পেশাজীবী দের হেয় করার প্রবণতা সমাজকে অনেক পিছিয়ে দেয়।এবারের এস এস সি পরীক্ষার বাংলা প্রশ্নপত্রে পরিমলের মতো যে কুলাঙ্গার শিক্ষক ডাক্তারদের হেয় করার জন্য তাদেরকে লোভী হিসেবে সারাদেশের প্রায় ১৫ লক্ষ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করলো সে বা তারা কার স্বার্থে বা কোন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এহেন জঘন্য অপচেষ্টা চালালো তার খতিয়ে দেখতে হবে।

যারা সমাজে হিংসা ছড়াতে তৎপর সে আর যাই হোক আদর্শ শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি হতে পারে না। হুমায়ুন আহমেদ এর কথা অনুসরণ করে বলা যায়, "সমাজে অনেক খারপ মানুষ আছে, কিন্তু একটা মানুষও খুঁজে পাওয়া যাবে না যে তার শিক্ষককে অসম্মান করে"। আমি বাংলাদেশের অনেক দেশবরেণ্য ডাক্তারদের দেখেছি যাঁরা তাঁর স্কুল শিক্ষককে পা ছুঁয়ে সালাম করে, এটাই বিনয় ও সৌন্দর্য। ভয় হয় যেভাবে বিভিন্ন দিক থেকে শুধুমাত্র ডাক্তার দের অপমান ও অপদস্থ করার হিড়িক উঠছে, অদূর ভবিষ্যতে কেউ ডাক্তারি পড়ার সাহস পাবে কিনা অথবা যারা আছেন তার এসবের ভয়ে ছেড়ে দেয় কিনা।


অনেক না পাওয়ার মাঝে স্বাস্থ্য খাতের অর্জন আমাদের বিশ্বের দরবারে অনন্য মর্যাদা দিয়েছে এটা ভুলে গেলে চলবে না।

ঢাকা মেডিকেলে যে দুইজন ডাক্তার গতকাল বর্বর হামলার স্বীকার হলেন তাদের দুইজনকে আমি ভাল করে চিনি। ডাঃ ফারহানা আফরিন আমার বন্ধুর স্ত্রী ও ডাঃ শর্মিষ্ঠা আমার ব্যাচমেট। দুইজনই অসম্ভব ভদ্র ও বিনয়ী। যারা ঢাকা মেডিকেলে কাজ করেছে তারা সবাই জানেন ঢাকা মডিকেলের শিশু মেডিসিন ও শিশু সার্জারি ওয়ার্ড গুলোতে কি পরিমাণ রাশ যায়।

তার মাঝেও এই দুই বিভাগের সার্ভিস গর্ব করারা মতো। এতো সবের মাঝে দুই জন চিকিৎসকের উপর ওয়ার্ডের কাঁচ ভেঙে হামলা করার সাহস যারা করে তারা কতো বড় জালেম, কতো বড় সন্ত্রাস, কতো বড় নিকমহারাম সেই কথা ভেবে গা শিউরে উঠে। আরে সন্ত্রাসের দল তোরা কি করে ভুলে গেলি কয়েক মাস আগেই তো এই দুই বিভাগ মিলে মায়ের পেটে গুলিবিদ্ধ হওয়া শিশুকে নিরলস পরিশ্রম করে সুস্থ্য করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলো।এটাতো একটা উদাহরণ আরো লক্ষ কোটি উদাহরণ তো আছেই।

 

কথায় আছে, "সামান্য স্বীকৃতি অফুরন্ত প্রেরণার উৎস"
যারা জরুরী মুহূর্তে নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে অনেক রোগীকে সহযোগিতা করে সেই ডাক্তারদের শরীরের রক্ত ঝড়িয়ে এই জাতি স্বীকৃতি দিলো।সবাই আন্দোলন করেন বিভিন্ন সময়ে নিজেদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানোরর জন্য আর আশ্চর্য হলেও সত্যি আমরা যাদেরকে দিন রাতের কথা চিন্তা না করে সেবা দিয়ে যাই তাদের হাতে যেন মাইর খেতে না হয় এই জন্য আন্দোলন করতে হয়।

 

কি করে এতো তাড়াতাড়ি তারা ভুলে গেল,যে খাদিজার বাঁচার সম্ভাবনা ছিলো শতকরা পঁাচ ভাগ তাকে কিন্তু আমাদের দেশের ডাক্তাররাই সুস্থ্য করে তুলেছে।যে বৃদ্ধ ডাস্টবিনের ময়লা খাচ্ছিল তাকে তুলে এনে চিকিৎসা দিয়ে নিজিদের পকেটের টাকা খরচ করে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে, ট্রী ম্যান আবুল বাজানদার যাকে ১৭ বার অপারেশন করে তার সবগুলা আঙুল মুক্ত করে তার হাতে আমাদের স্বাধীনতার অহংকার ও অর্জন পতাকা তুলে দিয়েছিল।এমন কি বসতভিটা ক্রয়ের জন্য তাকে ছয় লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছিলো কবির চৌধুরী স্যার।এগুলোর স্বীকৃতি কিন্তু দেয়া হয়নি।যারা গুণী জন কদর করে না তাদের মাঝে গুণী জন জন্মায় না।

___________________________

 

ডা. মোশাররফ হোসেন।

Dhaka Medical College & Hospital

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়