ডেস্ক

Published:
2021-05-01 02:40:09 BdST

“জাতীয় স্বাস্হ্য সার্ভিস কমিশন”গঠন সময়ের দাবী


 


অধ্যাপক ডা: দীপক নাগ

———————————————————-
এই ক’দিন আগে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেল। সর্বোচ্চ স্কোর ৮৫ নিয়ে কেউ ঢাকা আবার ৬৫-৭০ নিয়ে উদাহারন স্বরুপ কেউ কুস্টিয়া/কক্মবাজার মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। অধিকাংশ বেসরকারি মেডিকেলের অবস্হা আরও শোচনীয়। সেগুলোতে টাকার বদৌলতে ৪৫-৫০ স্কোরের ছাত্ররা ডাক্তার হওয়ার সুযোগ পাবে।মেধার পার্থক্যটা লক্ষ্য করেছেন? এক কথায় বিশাল। কিন্তু এরা সবাই একই ডিগ্রি নিয়ে এ দেশের জনগনেরই চিকিৎসা করবে। প্রতিস্ঠান ভেদে শিক্ষক সংখ্যা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান এবং চিকিৎসা শিক্ষা উপকরনাদির কথা উল্লেখ করা এখানে বাহুল্য মাত্র।

আরেকটি উদাহরণ দেই, আরো ক’দিন আগে ডিপিসির মাধ্যমে সরকারি ডাক্তারদের প্রমোশন হল। বিধি আর নীতির কথা বাদই দিলাম। শুধু অপরিকল্পিত সংখ্যায় কোন কোন বিষয়ে ডাক্তার হয়ে বের হওয়া অথবা পদ ও পদবীর অপ্রতুলতার কারনে কোন কোন ডিসিপ্লিনের ১০ বৎসর সিনিয়র এবং উচ্চ ডিগ্রি থাকা সত্বেও প্রমোশন পাননি। অপর পক্ষে এমন নজীর তো আছে ভুরি ভরিই যে সরকারী ডাক্তারের ছাত্র অনেক বেসরকারি মেডিকেলে অধ্যাপক হয়েছেন তার শিক্ষকের অনেক পূর্বেই। নামের আগে তো সবাই লেখেন অধ্যাপক, ক’জন দেখে উনি কোন প্রতিস্ঠানের?

এমন উদাহরণ আরও অনেক দেওয়া যাবে। আনুপাতিক হারে ষ্পেশালিটি হাসপাতাল, মেডিকেল শিক্ষক সংখ্যা, চাকুরীর বয়স সীমা, পদন্নোতির নীতিমালা, গ্রেড এবং স্কেল ইত্যাদির গরমিল তো আছেই। আমি শুধু বলতে চাই, এর একটা সুরাহা দরকার এবং করতেই হবে। প্রশ্ন হলো কে বা কারা করবে এর সমাধান? এটা বলা অনুস্বীকার্য যে রাষ্ট্রকেই এটার দায়িত্ব নিতে হবে। অনেকে বলেন এটা ডিজি হেলথের এবং স্বাস্হ্য মন্ত্রনালয়ের কাজ। মনে রাখতে হবে উক্ত দুই অফিস স্পেশালিষ্ট ডাক্তার তৈরী করে না, শুধু সহায়তা করে মাত্র। অনেকে পদন্নোতির ক্ষেত্রে বিএমডিসির নীতিমালার কথা বলে। প্রশ্ন হচ্ছে বিএমডিসির কি সেই সাংগঠনিক কাঠামো আছে যে দেশের শতাধিক মেডিকেল কলেজের এতগুলো ডিসিপ্লিনের প্রাতিস্ঠানিক গঠন ও পদন্নোতির বিষয়গুলো দেখভাল করা? আবার কেউ কেউ বিএমএ এর দায়িত্ব আছে বলে মনে করেন। বিগত বিসিপিএস এর নির্বাচনে এটাও একটা ইসু হয়েছিল। আমার মতে, উল্লেখিত অফিসগুলোর কর্তব্য আছে বটে কিন্তু একটিরও এককভাবে এই কাজগুলো করার মত একতিয়ার বা জনবল নাই এবং এটি বিচ্ছিন্ন ভাবে করাও সম্ভব নয়। ডিজি অফিস ও মন্ত্রনালয় শুধু প্রয়োগকারী সংস্হা হিসাবে কাজ করতে পারে। তাই, অতি প্রয়োজন একটি নীতিনির্ধারনি এবং সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠানের।

এজন্য আমার সুস্পস্ট প্রস্তাবনা হচ্ছে, উল্লেখিত কাজগুলি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সুচারুভাবে করার পরিকল্পনার জন্য একটি “জাতীয় স্বাস্হ্য সার্ভিস কমিশন” গঠন করা যেতে পারে। উক্ত কমিশনে ডিজি হেলথ, মন্ত্রনালয়, বিএমডিসি, বিসিপিএস, বিএমএ, মেডিকেল ইউনিভার্সিটি ও সিলেকটেড মেডিকেল কলেজের প্রতিনিধি থাকতে পারে। কমিশনের কমিশনারবৃন্দ নিয়মিত বৎসর ব্যাপী এবং সার্বিকভাবে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবা বিষয়ে নীতি নির্ধারণ ও দেশের চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের সুপারিশ করবেন। উপরে উল্লেখিত সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি তা প্রয়োগকারী সংস্হা হিসাবে কাজ করবে। এ ব্যাপারে কারো ভিন্নমত থাকতে পারে, তবে আমি মনে করি বিরাজমান পরিস্হিতিতে এরকম একটা বিষয়ে আলোচনা অতি আবশ্যক।

অধ্যাপক ডা: দীপক নাগ
বিভাগীয় প্রধান, রেটিনা বিভাগ
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট
dr.dipak.nag@ gmail.com

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়