ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ

Published:
2021-04-15 15:09:23 BdST

দৈববশত করোনা যাবেনা: ফিরতে হবে বিজ্ঞানের দিকে


 

ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ
সহযোগী অধ্যাপক
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা

---------------------------------------------

 

কোভিড ১৯ একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই ভাইরাসের অভিযোজন ক্ষমতা, নিজেকে পরিবর্তন করে নেবার ক্ষমতা অপরিসীম। কোনো দৈববাদে বিশ্বাসী হয়ে যদি মনে করেন -এটি একসময় একা একা চলে যাবে, অদৃষ্টের উপর আস্থা রেখে যদি মনে করেন এই ভাইরাস দুর্বল হয়ে যাবে তাহলে মহা ভুল করবেন। লকডাউন সহ স্বাস্থ্যবিধি এই ভাইরাসের সংক্রমণের গতিকে খানিকটা ধীর করে দেয় কিন্তু এই ভাইরাসটি আগামী কয়েক দশক ধরে পুরো বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াবে এটাই বিজ্ঞানভিত্তিক অভিক্ষেপ। এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে বিজ্ঞানেরই শরণ নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
১. পলিভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে হবে: যে ভ্যাকসিন একাধিক ভ্যারিয়েন্ট কে প্রতিরোধ করবে। এজন্য আরো বেশি বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে হবে। নতুন নতুন হাসপাতাল ভবন তৈরি বা মারণাস্ত্র আবিষ্কার ও বিপণনের জায়গা থেকে পৃথিবীকে সরে এসে জনমুখী বিজ্ঞান গবেষণার দিকে নজর দিতে হবে। ভ্যাকসিন নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক স্বার্থ বা স্বার্থবাদী ভূরাজনীতি যাতে না হয় তারজন্য বিশ্ববাসীকে এক হওয়া উচিত, যদিও তা প্রায় অসম্ভব। তাই ভ্যাকসিন রাজনীতি ও ভ্যাকসিন অর্থনীতিকে বিবেচনায় রেখেই পলিভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে হবে। প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনে পৃথক পৃথক ভ্যাকসিন আবিষ্কার এর প্রয়োজন হতে পারে।
২. চিকিৎসা সক্ষমতা বাড়াতে জনস্বাস্থ্যের দিকে বেশি মনোযোগী হতে হবে : আইসিইউ বা টকলিজুমাব এর প্রতি বিনিয়োগ আর মনোযোগ কমিয়ে স্বাস্থ্যবিধি পালন এর দিকে , মানুষের সামষ্টিক আচরণ পরিবর্তন এর দিকে অধিক বিনিয়োগ আর মনোযোগ বাড়ানো উচিত। আর চিকিৎসা ক্ষেত্রে আক্রান্তের বেশিরভাগের জন্য যে ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োজন সেগুলো বাড়াতে হবে।
৩. "প্যানডেমিক: কোভিড ১৯ শেকস দি ওয়ার্ল্ড" বইতে স্লাভোজ জিজেক এর মতানুসারে পুরো বিশ্ব মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে: একটা মৌল সিদ্ধান্ত নিতে হবে, মানুষ কি "সারভাইভাল অব ফিটেস্ট" এর মত বর্বরতম থিউরিতে বিশ্বাসী থাকবে নাকি নব্য-সাম্যবাদকে ধারণ করে বৈশ্বিক সংহতির দিকে পা বাড়াবে। মনে রাখতে হবে এই ভাইরাসটি এমন একটি ভাইরাস যা "অল অর নান ল" অনুসরণ করে। অর্থাৎ এককভাবে অনেক রিসোর্স জমিয়ে কোনো ব্যক্তির বা জাতির ভালো থাকার সুযোগ নেই; সবাইকে একসাথে নিরাপদ থাকতে হবে। এরজন্য বৈশ্বিক সলিডারিটি বা নব্য-সাম্যবাদের বিকল্প নেই।

"দৈববশত কোভিড-১৯ বিশ্ব থেকে চলে যাবে", "আমার করোনা হবেনা" বা "আমার করোনা হলেও আমি মারা যাবোনা" এগুলি নিতান্তই "অপটিমিস্টিক বায়াস" । পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক।
করোনাকে রুখতে হলে আরো আরো আরো বিজ্ঞানচর্চার কোনো বিকল্প নাই।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়