Dr. Aminul Islam
Published:2021-03-27 15:30:16 BdST
সংহতির বার্তা :বাংলাদেশ–ভারত এগিয়ে যাবে একসঙ্গে: মোদি
ফাইল ছবি
ডেস্ক/ প্রথম আলো
বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে এসে ২০ মিনিটের যে কথামালা সাজিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তাতে দিয়েছেন সংহতির বার্তা। বলেছেন বাংলা দেশ ভারত এগিয়ে যাবে একসঙ্গে। তথ্য প্রথম আলো।
অভিন্ন ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে মোদি বলেছেন, উন্নতি করতে হলে দুই দেশকে চলতে হবে একসঙ্গে। কারও কূটচালে যেন এই সম্পর্কে চিড় না ধরে, সেদিকে সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ইতিহাস মনে করিয়ে দিয়ে সোনার বাংলার লক্ষ্য অর্জনেও একই ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদি।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার আয়োজিত ‘মুজিব চিরন্তন’ উৎসবের সমাপনী পর্বে শুক্রবার সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সকালে ঢাকায় আসা মোদি বিকেলে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বোন শেখ রেহানাও ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।
এরপর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও সম্মানিত অতিথি মোদিকে নিয়ে মঞ্চে আসন নেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে ভারত সরকার বঙ্গবন্ধুকে যে গান্ধী শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছে, সেই পুরস্কার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার হাতে তুলে দেন মোদি। শেখ রেহানা আবার ‘মুজিব চিরন্তন’ স্মারক তুলে দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
‘স্বাধীনতার ৫০ বছর ও অগ্রগতির সুবর্ণরেখা’ শিরেনামে এ দিনের অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইেডন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শুভেচ্ছাবার্তা উপস্থাপনের পর মোদি বক্তৃতা মঞ্চে ওঠেন।
বাংলাদেশ ও ভারত সংস্কৃতির ঐকতানের প্রকাশ হিসেবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ভারতের কোণে কোণে সব দলের সমর্থন পেয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন। এক্ষেত্রে নিজ দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকাও স্মরণ করেন তিনি।
তখন নিজের ভূমিকা তুলে ধরে মোদি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের মুক্তির জন্য শামিল হওয়া ছিল আমার জীবনের প্রাথমিক আন্দোলনগুলোর একটি।’ তখন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে জানান তিনি।
একপর্যায়ে বাংলায় মোদি বলেন, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলব না।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের জওয়ানদের রক্ত দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মোদি বলেন, দুই দেশের মধ্যে এমন সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, যা কোনোভাবেই ভাঙবে না। কোনো কূটনৈতিক চালের শিকার হবে না।
মোদি বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তির আজ ৫০ বছর। আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ বছর। উভয় দেশের জন্য এক মহান অভিযাত্রা। ভারত ও বাংলাদেশকে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে, তাহলে আমরা সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।’
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বকে তার সামর্থ্য দেখিয়ে চলছে। এখন কেবল সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আর দেরি করা যাবে না। ‘কোটি কোটি লোক এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য আমাদের লক্ষ্য এক। আমি আত্মবিশ্বাসী, ভারত–বাংলাদেশ মিলে দ্রুতগতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।’
এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে প্রেরণা নেওয়ার আহ্বান জানান মোদি।
বাংলাদেশের ৫০ উদ্যোক্তাকে ভারতে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের কাছ থেকে শিখব। তাদেরও শেখার সুযোগ হবে।’
ভারতের তৈরি কোভিড টিকা বাংলাদেশে ব্যবহার হওয়ায় নিজের খুশির কথাও বলেন মোদি।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভারতের শাস্ত্রীয় সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর পরিবেশনায় বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে নির্মিত নতুন রাগ ‘মৈত্রী’ পরিবেশন করা হয়।
সুবর্ণজয়ন্তীর লোগোও উন্মোচন করা হয় অনুষ্ঠানে। এই লোগোর নকশা করেছেন রামেন্দু মজুমদার এবং প্রদীপ চক্রবর্তী। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশের সেনা নৌ ও বিমানবাহিনীর সম্মিলত একটি পরিবেশনা দেখানো হয় অনুষ্ঠানে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয় এতে।
‘পিতা দিয়েছে স্বাধীন স্বদেশ, কন্যা দিয়েছে আলো’ শীর্ষক থিমেটিক কোরিওগ্রাফিও ছিল অনুষ্ঠানে। আতশবাজি ও লেজার শোর মধ্য দিয়ে ১০ দিনের এই উৎসবের যবনিকা টানা হয়।
সংবাদ প্রথম আলো
আপনার মতামত দিন: