Dr. Aminul Islam

Published:
2021-01-21 01:38:19 BdST

কেন মডার্না বা ফাইজার না নিয়ে অক্সফোর্ড টিকা বেছে নিল বাংলাদেশ



ডেস্ক
____________________

মডার্না বা ফাইজার বনাম অক্সফোর্ড টিকা বিতর্ক কম নয়। চলছে অবিরাম। কিন্তু জনস্বার্থে বিষয়টি সুরাহা দরকার। বাংলাদেশের মানুষের জন্য কোনটি ভাল , তাও জানা দরকার।
বাংলাদেশে আসছে অক্সফোর্ড , কেন মডার্না বা ফাইজার নয়। বিষয়টি তথ্যসহ সুন্দভাবে ব্যখ্যা করেছেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল(BSH)এর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: মো: সোহাইলুল ইসলাম । সাধারণ পাঠক মনের নানা প্রশ্নের সাবলীল জবাব তুলে ধরেছেন তিনি। জনস্বার্থে লেখাটি প্রকাশ করা হল।

 

মনুষ্য বসবাসকারী এ গ্রহের করোনা পীড়িত অন্যান্য সবার মত বাংলাদেশীরাও যেন বাহুর কাপড় গুটিয়ে মাংস ফুলিয়ে অধীর আগ্রহে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে,কখন বাড়ীর প্রিয় মানুষটির আগমনের মত ভ্যাকসিন আসবে আর অক্সফোর্ড নামের একটা সস্তির সুঁই তার বাহুতে প্রবেশ করবে।
সুখবর!কিছুদিনের মধ্যেই অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন এদেশে আসছে।তবে কেন মডার্না বা ফাইজার নয়? সে প্রশ্নের উত্তর জানতে, বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত চারটি ভ্যাকসিনের বৈশিষ্টগত পার্থক্যগুলো জেনে নিই।
১। m-RNA ভ্যাকসিন : ফাইজার / BioNtech এবং মডার্না।
ফাইজার / BioNtech এবং মডার্না কোম্পানীর ভ্যাকসিন গুলো যে প্রযুক্তিতে তৈরী হয়েছে সেই পদ্ধতিতে আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে ক্যানসার চিকিৎসায় প্রথমবারের মত Anti Cancer Protein তৈরী হয়।
এই পদ্ধতিতে “spike protein” তৈরী করার সিগনাল কোড সম্বলিত এক বিশেষ ধরনের messenger RNA শরীরে ভ্যাকসিনটির মাধ্যমে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।আর শরীরের স্বাভাবিক কোষগুলো এই জিনেটিক ফরমূলা থেকে তৈরী করে বিপুল পরিমান “spike protein”, যা করোনা ভাইরাস সংক্রমনের প্রধান অস্ত্র।কিন্তু এই ক্ষেত্রে ভাইরাস বিহীন যে spike protein তৈরী হয় তার কোন সংক্রমন ক্ষমতা নেই,আছে শুধু ইম্যিয়ুন সিস্টেমকে উদ্দিপিত করে এন্টিবডি তৈরীর ক্ষমতা যা ভবিষ্যতের করোনা আক্রমনকে প্রতিহত করবে।
সুবিধা:
এই ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকরি ক্ষমতা (Efficacy) অনেক বেশী।FDA এর মতে প্রায় ৯৫%।
অসুবিধা:
ফাইজারের ভ্যাকসিনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো,এটা অবশ্যই মাইনাস ৭০ ডিগ্রী সেনট্রিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষন করতে হয়,তা না হলে এর ভেতরে রক্ষিত messenger RNA সমুহ অতিরিক্ত তাপ-সংবেদনশীল হওয়ায় নস্ট হয়ে যায়।মডার্ণার ভ্যাকসিনকে বেশী দিন কার্যকর থাকতে হলে মাইনাস ২০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় সংরক্ষন করতে হয়।এত কম তাপমাত্রায় কোল্ড চেইন মেইনটেইন করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ logistically জটিল ও কঠিন।তাই সংগত কারনেই এই ভ্যাকসিনের দাম অতি উচ্চ এবং সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণজ্বনিত পরিবহন জটিলতার কারণে স্বল্প দামে আমাদের মত তৃতিয় বিশ্বের দেশ সমুহে এই m-RNA ভ্যাকসিন সরবরাহ করা কিছুটা দুরূহ ব্যাপার।
২।ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন: অক্সফোর্ড /AstraZeneca এবং রাশিয়ার স্পুটনিক ফাইভ।
অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা শিম্পান্জীর দেহ থেকে এডিনোভাইরাস সংগ্রহ করার পর তাকে প্রথম নিস্ক্রিয় করে ।তারপর সেখানে জীন প্রকৌশলের মাধ্যমে স্হাপন করে করোনা ভাইরাসের spike protein ।এই ধরনের একটি ভ্যাকসিনকে বলা হয়”Viral vector vaccine”।মানুষের শরীরে ইন্জেক্শানের মাধ্যমে প্রবেশের পর,এই spike protein শরীরের ইম্যিউন সিস্টেমকে উদ্দিপিত করে এন্টিবডি তৈরী করে।
রাশিয়ার ” স্পুটনিক ফাইভ” স্পাইক প্রোটিনের বাহক হিসেবে একই সাথে দুইটি পৃথক ধরনের এডিনোভাইরাসকে ভেক্টর হিসেবে ব্যবহার করে,যেগুলো সাধারনত মানব শরীরে সাধারন সর্দি কাশির জ্বর করে থাকে।
সুবিধা:
এগুলো প্রস্তুত করা অনেক সহজ এবং সস্তা।এই ভ্যাকসিন গুলো স্টান্ডার্ড রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রায় ছয়মাস পর্যন্ত সহজেই টিকে থাকে।এই কারনে দেশ থেকে দেশান্তরে কোল্ড চেইনের মাধ্যমে পরিবহনের কোন ঝামেলা নেই।দামে সস্তা হওয়ায় এবং প্রচলিত পদ্ধতিতে কোল্ড চেইন ব্যবহার করে পরিবহন সুবিধার কারনে এই ভ্যাকসিন গুলো তৃতিয় বিশ্বের দেশ গুলোর জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
অসুবিধা:
এগুলোর কার্যকারিতার হার ফাইজার এবং মডার্নার ঘোষিত মাত্রার চেয়ে কম অর্থাৎ ৭০%।তবে উপযুক্ত কন্ডিশানে কখনো কখনো ৯০% বলে দাবী করা হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, অন্যান্য ড্রাগের মত শুধুমাত্র Safety বা Efficacy নয়,প্রায়োগিক দিক থেকে কোন্ ভ্যাকসিন কোন্ দেশে সহজেই deploy করা সম্ভব,সেটাই ভ্যাকসিন প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়।
৩।পৃথিবীতে উল্লেখযোগ্য ভ্যাকসিন সমুহ উন্নয়ন করতে কোনটির কত সময় লাগে:
Polio: ৭বৎসর(১৯৪৮-১৯৫৫)
Measles: ৯ বৎসর(১৯৫৪-১৯৬৩)
Chicken Pox: ৩৪ বৎসর(১৯৫৪-১৯৮৮)
Mumps: ৪ বৎসর(১৯৬৩-১৯৬৭)
Human papilloma virus: ১৫ বৎসর(১৯৯১-২০০৬)
Corona virus(Pfizer/BioNTech): ১১ মাস(২০২০)
HIV: প্রায় ৪০ বৎসর ধরে উন্নয়নের কাজ চলছে।
মনে রাখবেন,ভ্যাকসিন পেলেও,মাস্ক ছাড়বেন না,যতদিন পর্যন্ত একটিও কোভিডে মৃত্যুর দুর্গন্ধ এ গ্রহটিতে উৎসারিত হয়।আশাকরি,একদিন মুকুট চূর্ণ হবে করোনার আর বাংলাদেশে “আবার বসবে মেলা বটতলা হাটখোলা,অঘ্রানে নবান্নের উৎসবে”।
___________________
প্রফেসর ডা: মো: সোহাইলুল ইসলাম
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল(BSH)

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়