SAHA ANTAR
Published:2020-12-06 01:35:40 BdST
মানসিক চিকিৎসায় সাইকিয়াট্রিস্ট এর ব্রেইন সার্জারী
ডা. সাঈদ এনাম
_________________________
পূর্বে মানসিক রোগের চিকিৎসায় ফ্রন্টাল লোবোটমী করা হতো। নিউরোসার্জনরা পুরো স্কাল বোন কেটে ইথানল দিয়ে ফ্রন্টাল লোবের সকল নিউরো কানেকশন ব্লক করে পরে পুরো ফ্রন্টাল লোব কেটে ফেলা হতো। এতে সিজোফ্রেনিয়া, ম্যানিক রোগীদের সিমটম কমে আসতো।
ইতালিয়া সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. এমারো স্কাল বোন না কেটেই ফ্রন্টাল লোব অপারেশন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তিনি চোখের ভিতর অরবিটাল ফিসার দিয়ে ফ্রন্টাল লোবোটমি করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যাহা পরে নিউরোসার্জন রা তাঁকে অনুসরণ করেন।
অরবিট দিয়ে সাইকিয়াট্রিস্ট এমারোর আবিষ্কৃত ফ্রন্টাল লোবোটমি পদ্ধতির নাম ট্রান্স অর্বিটাল লোবটমি।
লোবোটমি থেকে ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন,
মানসিক রোগের চিকিৎসায় সাইকিয়াট্রিস্টদের অভাবনীয় সাফল্য....
যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির বোন রোজমেরী কেনেডি ছিলেন মানসিক রোগী। তার মুড সুইং হতো, ডিপ্রেশন হতো। মাঝেমধ্যে প্রচন্ড খিচুনী হতো এমনকি কখনো কখনো তিনি মারাত্মক ভায়োলেন্ট হয়ে যেতেন।
চিকিৎসার জন্যে এক পর্যায়ে রোজমেরী কেনেডির র লোবোটমি করা হয়। ( সাইকোসার্জারীঃ অপারেশন করে ব্রেইনের একটা অংশ কেটে ফেলা )
সে যুগে মানসিক রোগের চিকিৎসায় আজকের মতো কোন কার্যকরী মেডিসিন ছিলোনা। সাইকোসার্জারীই (এক ধরনের অপারেশন যাতে করে ব্রেইন সামনের অংশ, কপালের উপরের অংশ কেটে ফেলা) ছিলো প্রচলিত। এ ছাড়াও ইলেকট্রো-কনভালসিভ থেরাপি হাইড্রোথেরাপি এবং ইনসুলিন শক থেরাপি ছিলো চিকিৎসা।
প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির বোনের মানসিক অসুস্থতা খবর তাদের পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের কথা বিবেচনা করে দীর্ঘদিন গোপন রাখা হয়। এমননি তার ব্রেইন সার্জারী বা 'লোবোটমি'র কথাও গোপন রাখা হয় বেশ কয়েক বছর।
লোবোটমি হলো এক ধরনের অপারেশন যার মাধ্যমে ব্রেইনের সামনের অংশ অর্থাৎ কপালের অংশ যা আমাদের আচার আচরণ বিবেক বিবেচনা নিয়ন্ত্রণ করা সে অংশ পুরোপুরি কেটে ফেলা হয়।
লোবোটমি করার পর রোজী কে বেশ কয়েক বছর একটি বিশেষ মানসিক হাসপাতালে সবার অগোচরে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হয়।
১৯৪০ সালে আমেরিকান নিউরোসার্জন ডা. ফ্রীম্যান ও ডা. ওয়াটস লোবোটমি অপারেশনের জন্যে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তারা কপালের উপরের অংশের হাড় কেটে ব্রেইন অপারেশন করতেন।
পরে ইটালিয়ান সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. এমাররো লোবোটমি অপারেশনের আধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
তিনি চোখের ভিতর দিয়ে লোবোটমি করার এক বিষ্ময়কর পন্থা আবিষ্কার করেন যা সাইকো-সার্জারী বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এর নাম সুপ্রা অরবিটাল লোবোটমি। এ পদ্ধতিতে খুব অল্প সময়ে মাত্র ১০ মিনিটেই রোগীর ব্রেইন অপারেশন সম্পন্ন হতো।
চিকিৎসা বিজ্ঞান এগিয়েছে৷ এগিয়েছে মানসিক রোগের চিকিৎসা। সাইকিয়াট্রিস্টদের নিরবিচ্ছিন্ন গবেষণার ফলে এখন আর লোবোটমির প্রয়োজন হয়না।
মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় আবিষ্কৃত হয়েছে নানান রকমের কার্যকরী ঔষধ। এখন ব্রেইন না কেটেই রোগীর ব্রেইনের ত্রুটিপূর্ণ অংশ বিশেষ পন্থায় ইলেকট্রনিক ওয়েভ দিয়ে সারিয়ে তোলা হয়। এর নাম ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন।
বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে মানসিক চিকিৎসায় অভাবনীয় সাফল্য এসেছে বটে, মানসিক রোগ নিয়ে মানুষের সচেতনতার তেমন অগ্রগতি হয়নি।
মানসিক রোগীদের পাগল বা ভুতে ধরা আখ্যা দিয়ে তাদের ভন্ড কবিরাজ, ভন্ড পীর দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।
এমনকি কখনো কখনো ঘোরতর মানসিক রোগীদেরকে 'আধ্যাত্মিক জগতের মহা পুরুষ' সাজিয়ে 'ডেরা' বানিয়ে তাদের দিয়ে ব্যবসা বানিজ্য করার খবর ও পাওয়া যায় পত্র পত্রিকায়।
ডা. সাঈদ এনাম
(ডিএমসি)
ব্রেইন ও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক সাইকিয়াট্রি
সিলেট মেডিকেল কলেজ।
আপনার মতামত দিন: