SAHA ANTOR

Published:
2020-10-05 18:05:38 BdST

ইউটিউব দেখে ডায়েটে মৃত্যুঝুঁকি: কি করবেন : কি করবেন না : জীবন বাঁচাতে ৭ জরুরি পরামর্শ



ডা. সুলতানা এলগিন


সহযোগী অধ্যাপক
মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
কনসালটেন্ট , ওসিডি ক্লিনিক ও জেরিয়াট্রিক ক্লিনিক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা
_____________________________

কথিত কিটো ডায়েট করতে গিয়ে সম্প্রতি দু:খজনক মৃত্যুর শিকার হলেন বলিউড নায়িকা মিষ্টি মুখার্জি। এর আগেও দক্ষিনের এক নায়িকা , পাকিস্তানেও বেশ কিছু তরুণ করুণ মৃত্যু বরণ করেছেন কিটোর কবলে। বাংলাদেশেও কিটো প্রেমিক আছেন লাখো লাখো।
তাদেরও শরীরে র বারোটা বাজছে বলিউড নায়িকার মতই। কিন্তু তারা সেলিব্রেটি নন বলে , সেসব খবর মিডিয়ায় আসছে না। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ।
প্রশ্ন হল, কিটো ভাল না মন্দ। কিটো ডায়েট একটি সুচিন্তিত প্রক্রিয়া। যিনি এটা চালু করেছেন , তিনি বিজ্ঞান মেনেই কিটো ডায়েটের কথা বলেছেন।
তিনি জানতেন না, তার কিটো ডায়েট নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত উপমহাদেশের কিছু ডাক্তার ফেসবুক লাইভ করে কিটোর বারোটা বাজিয়ে ছাড়বেন।
যে কিটো ডায়েট স্বাস্থ্য সচেতন প্রক্রিয়া , সেটাকে এই প্রচারক গোষ্ঠি রীতিমত মৃত্যুর হাতিয়ার বানিয়ে ফেলবেন।
স্বাস্থ্য প্রক্রিয়া মন্দ নয়। মন্দ বা প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ হল , বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নন, এমন কারও পরামর্শ মেনে তা অনুসরণ করা।

তা হলে কি করবেন / কি করবেন না
___________________________


১.
স্বাস্থ্য সচেতনতা চলবে। কিন্তু মঘার বুদ্ধিতে চলবে না। দায়দায়িত্ব হীন কোন ডাক্তারের শোনা কথায় যেমন কালিজিরা মধু খেতে যাবেন না। তেমনি কিটো ডায়েটও করবেন না।

২. কিটো ডায়েট পদ্ধতি অনুসরণ করবেন কি করবেন না; অতি অবশ্যিই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়ে তার সুনির্দিষ্ট পরামর্শ নিন। তিনি আপনার শরীরের ভালো মন্দ নানা দিক বিবেচনা করে; আপনার জন্য কোন ডায়েট দরকার, তা নির্ধারণ করে দেবেন । তিনি নানা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আপনার শরীরের অবস্থা আগে জানবেন । তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন।
তারপর নিয়মিত ফলো আপ করবেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। সেটা আপনার প্রয়োজনেই। কেননা, কিটো বা অন্য ডায়েট পদ্ধতি আপনার শরীরে কি প্রতিক্রিয়া করছে , সেটা জেনেই সঠিক পরামর্শ দেবেন।

৩. স্বাস্থ্য সচেতনতায় ফলো আপ বড় জরুরি। ফলো আপ পদ্ধতিকে অবহেলা করবেন না। ডাক্তার ভগবান বা আল্লাহ নন। তিনি মেডিকেল শিক্ষা বিজ্ঞান মেনে চিকিৎসা দেন।
ফলো আপর মাধ্যমে তিনি ওষুধের ভাল মন্দ দেখেন। কোন ওষুধ কার জন্য সঠিক, কোনটা সেট করে, সেটা দেখেন।

৪. করোনা কালে ডাক্তারের চেম্বারে সশরীরে যাওয়ার দরকার নেই। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারে র অনলাইন চেম্বারে পরামর্শ নিন। আপনিও বাঁচলেন। ডাক্তারও রক্ষা পেলেন। তবে অপারেশনসহ ক্ষেত্রবিশেষে নানা চিকিৎসায় সরাসরি ডাক্তারের উপস্থিতি অবশ্যই লাগবে। যে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অনলাইন ভিডিও চেম্বারে সম্ভব ; সে ক্ষেত্রে চেম্বারে যেতে হা পিত্যেস করবেন না।

৫. রংধনু বা বেগুনি নীল আকাশী সবুজ হলুদ কমলা, লাল খাবার খাবেন। মানে নানা রঙ এর খাবার ও ফলমূল খাবেন। সেটাও ডাক্তারি পরামর্শ মেনে।


৬. কিটো ডায়েট , অটোফেজি , উপবাস এসব নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার স্বাস্থ্য বিধি। এগুলো কোন ইউটিউব বিজ্ঞাপণ বা বয়ান দেখে ফলো করবেন না। অভিজ্ঞ ডাক্তারি পরামর্শ একান্ত আবশ্যিক। সজল উপবাস হল অটোফেজি। এটা স্বাস্থ্য বিজ্ঞান। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের সুবিধা পেতে নিজে নিজে কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না ।

৭. ডাক্তাররা নানা বিষয়ে এখন ইউটিউব বা ফেসবুক লাইভে নানা ভিডিও প্রচার করছেন । একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জানেন, কতটুকু বলতে হবে। বিশেষজ্ঞ ও দায়িত্বশীল ডাক্তার সবসময় ততটুকুই বলবেন, যা অনুসরণ করে মানুষের ক্ষতি হবে না। তিনি সব সময় জেনারেল
পরামর্শ দেবেন । কিন্তু কখনওই নির্দিষ্ট রোগীর সব কিছু না জেনে ওষুধপত্র বলে দিবেন না। রোগীকে সচেতন হতে বলবেন। নানা রোগের সিমটম বলবেন। কিন্তু অনলাইন ভিডিওতে সুনির্দিষ্ট রোগীকে না দেখে ওষুধ বলে দেবেন না। কিটো ডায়েট করবেন কি করবেন না; অটোফেজি করবেন কি করবেন না; সেটা নির্দিষ্ট ব্যাক্তি রোগীকে না দেখে কখনওই বলবেন না।
ইউটিউবে নাম কামাতে , বা ভিউজ কামাতে কিছু কিছু দায়িত্বহীন ডাক্তার দায়িত্বহীন কাজ করছেন। এদের প্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বিনে পয়সার ডাক্তারের বিনে পয়সার প্রেসক্রিপশন মেনে নিজেকে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দেবেন না। আপনার কিছু হলে আইনি পদ্ধতি অনুযায়ীও ওইসব দায়িত্বহীন ডাক্তারের কোন দায় নেই। কেননা, তিনি আপনাকে দেখে চিকিৎসা দেন নি। নিজের ভাল আপনাকেই বুঝতে হবে।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়