Ameen Qudir

Published:
2017-01-28 16:26:47 BdST

'যাদের মনে রাখে না কেউ'


 

 

ডা. রাজীব দে সরকার

__________________________

শুরু হলো 'পুলিশ সেবা সপ্তাহ ২০১৭'। এই সার্ভিসের সকল সদস্যের প্রতি শুভকামনা রইলো।

লাঠি যার হাতে থাকে, মানুষ কখনোই তাকে 'ভালো' বলে মেনে নিতে পারে না। তাই জন্ম থেকেই আমরা পুলিশকে শত্রু হিসেবেই জানি। অথচ পুলিশের এই লাঠি ধরা আমাদের জন্যই। সাধারণ মানুষের জন্যই।

সেবার জগতে আমাদের সাথে অর্থাৎ চিকিৎসকদের সাথে আমি পুলিশদের বেশী মিল খুঁজে পাই। পুলিশ বলতে আমি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল সদস্যদের কথাই বলছি। কর্তব্যের কাছে দিন রাত বলতে কিছুই নেই ডাক্তার আর পুলিশদের। ঈদ নাই, পূজা নাই, সরকারী ছুটির দিন নাই, ঝড়-বন্যা কিছুই নাই। শুধু নেই বললে ভুল হবে এই দিনে বাড়ে ডিউটির ঘনঘটা।

ঈদের দিনে কিংবা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার দিনে একজন ডাক্তার হয়ে পেশাজীবী হিসেবে কেবল ইউনিফর্ম পরা পুলিশকেই পেয়েছি আমার পাশে।

পুলিশকে গালমন্দ করা অবশ্য একটি সুধী মহলের দৈনন্দিন সুশীলতা। অথচ কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়ায় ধর্মপ্রাণ ইবাদতরত মানুষদের বাঁচাতে গিয়ে ঝড়ে যায় পুলিশের ২টি প্রাণ। গুলশান হামলায় ৭৯ নং সড়কেও শেষ হয়ে যায় পুলিশের দুইজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জীবন। এরকম উদাহরণ বা মন খারাপের গল্প একটি দুটি নয়।

বাংলাদেশ পুলিশ এর ওয়েবসাইটে ঢুকেছিলাম আজ। আমি জানি এই ওয়েবসাইটে ঢোকা মানুষের সংখ্যা অনেক কম। আমিও খুব একটা ব্যতিক্রম নই। ওয়েবসাইটের Sacrifice in Action অংশে ক্লিক করলেই সাল অনুযায়ী প্রতিবছর কর্তব্য পালন করতে গিয়ে নিহত হওয়া পুলিশ সদস্যদের নাম ঠিকানা ও মৃত্যুর কারণ দেখা যায়।

একটি সার্ভিসের মানুষেরা শুধু মাত্র কর্তব্যের জন্য জীবন দিচ্ছেন, ইউনিফর্ম পড়ে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছেন - এই ব্যাপারগুলো কী জাতি হিসেবে আমাদের এখন আর নাড়া দেয় না?

অথচ সমালোচনার শেষ নেই এই সার্ভিস নিয়ে। এদিক থেকেও ভীষণ মিল আমাদের সাথে। কাজ যারা বেশী করবে, গালি তারা বেশীই খাবে। অথচ আমাদের দেশের পুলিশের গুণকীর্তন শোনা যায় সুদূর ইউএন মিশনের থেকে। বীরত্বের জন্য দেশ পায় পদক ও সম্মান।

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশে আধুনিক কিছু বিভাগ এর যাত্রা শুরু হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, সিআইডির ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেন্টার এসব বিভাগের সফলতার গল্প শোনা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

পত্রিকার একটি লাইন হঠাৎ মনে পড়ে গেলো... "এই সংঘর্ষের একই গ্রামের ৪ জন মানুষ ও একজন পুলিশ মারা যায়"। আমরা কী পুলিশদের মানুষের কাতারে ফেলতে ভুলে গেলাম? তাদেরও ক্ষুধা আছে, অসুখ আছে, রাগ আছে, অভিমান আছে, ঘর আছে, ঘরে প্রিয়জন আছে, একটা ফুটফুটে চেহারার সন্তান আছে।

পুলিশের কাছে সহায়তা নেবার আগে, পুলিশকে সহযোগিতা করার মনোভাব গড়ে তোলা প্রয়োজন। সেবা নেবার আগে সেবা গ্রহণের মানসিকতা প্রয়োজন।

বাঙ্গালি জাতির অকৃতজ্ঞতার ইতিহাস বড় প্রাচীন।
আসুন খারাপকে খারাপ বলার পাশাপাশি ভালো কে 'ভালো' বলার সাহস ও সদিচ্ছা ধারণ করি।

====================

ডাঃ রাজীব দে সরকার
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), পোস্ট গ্রাজুয়েশন অধ্যায়নরত
বিশেষ কর্মকর্তা
কো-অর্ডিনেশন ও মিডিয়া মনিটরিং সেল
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়