Dr. Aminul Islam

Published:
2020-09-29 15:54:50 BdST

ডা. রিতা ফারিয়া: উপমহাদেশ থেকে প্রথম বিশ্বসুন্দরী শিরোপা বিজয়ী


 

ডেস্ক
______________________

ছিলেন মেডিকেল কলেজ ছাত্রী। ডাক্তার হওয়াই ছিল তার পরম সাধনা। তিনি ডাক্তার হয়েছিলেনও । সেবা দিয়েছেন বিশ্বজুড়ে লাখো রোগীকে।
মেডিকেল পড়াশোনা কালেই নিয়েছিলেন আশ্চর্য এক চ্যালেঞ্জ। কঠিন চ্যালেঞ্জ।বিশ্বসুন্দরী হওয়ার মত কোন প্রস্তুতি ছিল না তার। তারপরও মনোবল , ইচ্ছা র জোরে তিনিই হন ভারতবর্ষ তথা উপমহাদেশ ও এশিয়া মহাদেশ থেকে প্রথম বিশ্বসুন্দরী শিরোপা বিজয়ী। বিস্ময় সৃষ্টি করে বিশ্বমঞ্চে।

১৯৬৬ সালের ১৭ই নভেম্বর। রিতা ফারিয়া বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার মঞ্চে তখন দুরু দুরু বুকে অপেক্ষা করছেন। চেহারায় অবশ্য সেটা প্রকাশ পাচ্ছে না। সেই বছর মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে অংশ নিয়েছিলেন আরো ৬৬ জন প্রতিযোগী। তাদের সবাইকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে এসেছিলেন রিতা।
৭৪ বছর বয়সী রিতার চোখে আজও সেই সন্ধ্যাটি জ্বলজ্বল করে ওঠে।
লন্ডনে আসার সময় তেমন কিছুই ছিল না রিতার কাছে। একটি ধার করে আনা শাড়ি আর বাথিং স্যুট। তবে সেই পোশাকটিও ছিল অনেক কম মানানসই। অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপকেরা প্রথমেই না করে দেন পোশাকটিকে। রিতার কাছে বাকি ছিল কেবল ৩ পাউন্ড আর একটি ছোট্ট মেক-আপের বাক্সভর্তি কিছু প্রসাধনী। প্রসাধনীর মধ্যে অবশ্য বেশি ছিল লিপস্টিক। আর তেমন কিছু ছিল না তখন ঠিক করে নিজেকে সাজানোর জন্য। ব্যবস্থাপকদেরকথা শুনে রিতা নিজের তিন পাউন্ড খরচ করে পোশাক আর জুতো কেনেন। সেই জুতো আর পরা হয়নি কখনো। তবে সেটা যত্ন করে গুছিয়ে রেখেছেন রিতা। কেন? কারণ, এই সবকিছুই তাকে মনে করিয়ে দেয় নিজের সংগ্রামের কথা, ভালোলাগার সেই দিনটির কথা।
তথ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, গোয়া মিডিয়াম।
ফারিয়ার জন্ম হয় মাতুঙ্গায়। সেখানে মধ্যম আয়ের এক পরিবারে বেড়ে ওঠেন তিনি। ফারিয়ার বাবা ছিলেন মিনারেল ওয়াটার কোম্পানির এক সামান্য কর্মচারী। অন্যদিকে মা ছিলেন মেরিন লাইনে একটি স্যালুনের মালিক। রিতা ফারিয়ার জীবনটাও হয়তো এমন কিছু হয়েই থেকে যেত, থমকে যেত মা-বাবার সাথে খুব সাধারণ কোনো কাজ করার মাধ্যমে। কিন্তু তা হয়নি। নিজের ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার কারণে সবার নজরে পড়ে যান রিতা। সেখানেই সবাই তাকে মডেলিং করার কথা বলেন। রিতার বান্ধবী ৭৪ বছর বয়সী সিসিলিয়া মেনেনেজ রিতার কথা বলতে গিয়ে হাসেন। বেশ ছিমছাম আর গোছালো ছিল রিতা. জানান তিনি। যেকোনো সময় নিজেকে গোছাতে অনেক বেশি সময় নিতেন রিতা। তবে নিজেকে কীভাবে সুন্দর এবং সাবলীল লাগবে সেটা ঠিক বুঝতে পারতেন। তবে মডেলিং নয়, বরং একজন চিকিৎসক হতে চাইতেন রিতা, জানান সিসিলিয়া।

মেডিকেল কলেজ ছাত্রী রিতা ফারিয়ারমোটেও গুরুত্ব দিয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার ইচ্ছে ছিল না। তবে মজার কিছু মনে হয়েছিল তার পুরো ব্যাপারটিকে। আর তাই বোন ফিলোমেনার তোলা নিজের কিছু ছবি তিনি জমা দেন প্রতিযোগিতায়।

রিতার বয়স তখন ২৩ বছর। মুম্বাইয়ের গ্র্যান্ট মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী যে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে সেটা ভাবাটা হাস্যকর ছিল সবার কাছে। অনেক বেশি অপ্রত্যাশিতও বলা চলে ব্যাপারটিকে। তবে অনেকটা খেলার মতো ভেবেই মিস বোম্বে প্রতিযোগিতায় নিজের ছবি জমা দেন রিতা ফারিয়া।

নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে গিয়ে একটু রিতা ফারিয়া মিডিয়ায় বলেন, সেই সময় বেশ সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে মিস বোম্বেতে। আয়োজকেরা ঠিকভাবে জানতেন না যে কীভাবে সুন্দরী প্রতিযোগিতা করতে হয়। চারপাশে ছড়িয়ে ছিল অব্যবস্থাপনা। আয়োজকেরা একটা সময় জানতে পারেন যে, এই প্রতিযোগিতায় সাঁতারের পোশাক পরতে হয় মেয়েদের। তাদের কাছে সাঁতারের পোশাক পরা মানে ছিল বিচারকদেরকে মেয়েদের পা ঠিক আছে কিনা সেটা দেখার সুযোগ করে দেওয়া। তাই মিস বোম্বে প্রতিযোগিতায় শাড়ি খানিকটা উপরে তুলে মেয়েদের পা ঠিক আছে কিনা প্রতিযোগিতার জন্য সেটা বিচার করতে শুরু করেন।

তবে এই প্রতিযোগিতায় রিতা ফারিয়া নিজের দেশ থেকে প্রথম কেউ ছিলেন না। এর আগে ভারত থেকে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া হয় ১৯৫৯ সালে। আয়োজকেরা এত বেশি আনাড়ি ছিলেন যে, রিতার কাছে খুব বেশি পোশাকও ছিল না বাইরে গিয়ে দেশকে উপস্থাপন করার জন্য। অবশ্য, মায়ের সাহায্যে বেশ কিছু পোশাক নিজের সাথে নেন রিতা। তবে মিস ইন্ডিয়া জিতে যাওয়ার পর আয়োজকেরা বুঝতে পারেন যে, রিতার কাছে পাসপোর্ট নেই।

খুব দ্রুত অনেক ঝামেলার মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হয় ভিসা আর পাসপোর্টের। একটি কাঠের রেপ্লিকা, আর কিছু অর্থ পান রিতা ফারিয়া মিস ইন্ডিয়া জেতার পর। মোট ১৫ হাজার রুপি। সেইসময় সংখ্যাটি খুব একটা কম কিছু ছিল না। নিজের সবটুকু টাকা মায়ের হাতে দিয়ে দেন রিতা। রিতার মা কিছু এতিম শিশুদের জন্য কাজ করতেন। তাদের জন্য খরচ হয় টাকাগুলো। কারো মাথায় তখন খেলা করেনি যে রিতা বাইরে যাবে এবার আর সেখানে তার টাকার দরকার পড়বে।

নিজেকে লন্ডনে পুরপুরি বেমানান বলে মনে হয় রিতার। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত সেই দেশের প্রতিযোগীকে ডেকে নিয়ে যায় দূতাবাসে। কিন্তু রিতার বেলায় তেমন কিছুই হয়নি। লন্ডন অবশ্য এর মধ্যে যতটা সম্ভব দেখার চেষ্টা করেন রিতা। নিজের মেধাই তাকে সেরা ২৫ এ নিয়ে গিয়েছিল বলে মনে করেন রিতা। সেইসাথে উঁচু হওয়ার সুবিধা তো ছিলোই, বলেন তিনি। অন্যদের যখন বিশ্ব সুন্দরী হওয়ার কারণ এবং পরবর্তী লক্ষ্য ছিল সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলা কিংবা ভালো গৃহিণী হওয়া, রিতা তখন বিচারকদের জানান যে, কেন তিনি চিকিৎসক হতে চান। শিশুদের এবং শিশুর মায়েদের ভালোর জন্য গাইনি চিকিৎসক দরকার বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। বিচারকেরা মুকুটের জন্য বেছে নেন রিতাকেই।

রিতা ফারিয়া জানতেন যে অভিনয়কে বেছে নিলে তার চিকিৎসা সংক্রান্ত পড়াশোনা আর হবে না। তাই পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। তারপর এপিডেমোলোজিস্ট হিসেবে কাজ করেন বোস্টনে। পরবর্তোতে আয়ারল্যান্ডে জুনিয়র হসপিটাল ডক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ডেভিড পাওয়েলকে বিয়ে করেন তিনি। সংসার আর চিকিৎসা সেবা- উপমহাদেশের প্রথম মিস ওয়ার্ল্ড বিজয়ী রিতা ফারিয়া বাকিটা জীবন কাটিয়েছেন সেবা করেই।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়