Dr. Aminul Islam
Published:2020-07-13 15:23:24 BdST
বরিশাল কলেজকে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত কলেজ নামকরণের দাবিতে কৃতজ্ঞতা আন্দোলন
এই কলেজের অঙ্গনেই তার রোপন করা তমাল বৃক্ষতলে ভারতবর্ষ মুক্তি আন্দোলন ও বরিশালের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বহু যুগান্তকারী তৎপরতার শুরু হয়েছিল। (ছবি বায়ে )
ডা. আমিনুল ইসলাম
_________________
বরিশাল নগরী মানেই মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তর দানে ও শিক্ষা-কল্যাণে প্রসারে গড়ে ওঠা।
শহরের অশ্বিনী কুমার দত্ত টাউন হল তারই মহানকর্ম। ভারতখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রজমোহন কলেজ, ব্রজমোহন স্কুল তারই মহান অবদান। বরিশাল সরকারি কলেজ তারই বাড়িতে স্থাপিত । এই বাড়িতেই সূচিত হয় ভারতমুক্তি আন্দোলনের অনেক প্রদীপ্ত উদ্যোগ। এই কলেজের অঙ্গনেই তার রোপন করা তমাল বৃক্ষতলে ভারতমুক্তি ও বরিশালের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বহু যুগান্তকারী তৎপরতার শুরু হয়েছিল।
সেই অশ্বিনী কুমার দত্তর নামে বরিশালে কোন প্রতিষ্ঠান নেই। অথচ বিজ্ঞজনের মতে বরিশাল শহরের নাম তার নামে হলেও যেন কৃতজ্ঞতার শেষ হবে না।
এবার বরিশাল বাসী দাবিতে সোচ্চার : মহাত্মা
অশ্বিনী কুমারের বাড়িতে করা মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারী কলেজ, বরিশাল নামকরণ করে অন্তত: তাঁর স্মৃতি ও কর্মের প্রতি সামান্য শ্রদ্ধা জানিয়ে বরিশাল বাসী ধন্য হোক।
এ নিয়ে বরিশালবাসী এক গনবিবৃতি দিচ্ছেন। চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষক , কল্যাণকর্মী , সাধারণ বরিশাল বাসী সকলেই এই বিবৃতিতে শামিল হয়েছেন। সেই বিবৃতি প্রকাশ হল।
বৃটিশ আমলে বরিশালের শিক্ষা, রাজনীতি এবং জ্ঞান অন্বেষণে পুরোধাব্যক্তিত্ব ছিলের অশ্বিনী কুমার দত্ত।তিনি কালের সারথি । বৈষয়িক বাসনা ত্যাগ করে বরিশালের মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চরম ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন তিনি। পিতার নামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ব্রজমোহন বিদ্যালয় ও ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয়। দুটো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানিই তৎকালীন অবিভক্ত বাংলা ও ভারতে শ্রেষ্ঠত্বের আসন অর্জন করে নিয়েছিল। তাঁর তত্ত্বাবধানে ও নেতৃত্বে ব্রজমোহন মহাবিদ্যালয় ’প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাত হয়েছিল। বরিশালের সামাজিক-রাজনৈতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে এই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অবিস্মরনীয় হয়ে আছে। দেশভাগের পরে তাঁর উত্তরাধিকারীগণ দেশত্যাগে বাধ্য হলেও, তাঁর বাসভবনে গড়ে ওঠে আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বরিশাল নাইট কলেজ। এই কলেজের অঙ্গনেই তার রোপন করা তমাল বৃক্ষতলে বরিশালের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বহু যুগান্তকারী তৎপরতার শুরু হয়েছিল। তিনি অর্জন করেছিলেন মহাত্মা খেতাব। মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশে ক্রমশ নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কলেজটি সরকারীকরণের পরে সরকারী বরিশাল কলেজ নামে স্বীকৃত হয়। বরিশালের প্রগতিশীল মানুষজনের প্রতিবাদের পরেও তার বাসভবনটি সংরক্ষণ না করে ভেঙ্গে ফেলা হয়। শিক্ষা-চিন্তা-সংস্কৃতি-বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জন্য যে বরিশাল একসময় বিশ্বব্যপী খ্যাতি অর্জন করেছিল সেই বরিশালের অন্যতম স্রষ্টা মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তকে ধীরে ধীরে বিস্মৃত করে ফেলার নানামুখী অপতৎপরতা শুরু হয়েছে দীর্ঘদিন থেকেই। তাঁর বাসভবন ভেঙে ফেলা, পাকস্থানী আমলে অশ্বিনী কুমার টাউনহলকে আইয়ুব খানের নামের সঙ্গে মিলিয়ে একে টাউনহল নামকরণ করা, ব্রজমোহন বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়কে বিএম স্কুল ও বিএম কলেজ নামে জনমানসে পরিচিত করে তোলা এই নানামুখী সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল তৎপরতারই অংশ। বরিশালের প্রগতিশীল ও সচেতন মানুষজনের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারী বরিশাল কলেজের নামকরণ এই বিরল ও মহান ব্যক্তির নামে করার সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের বিবেচনাধীন থাকার কথা আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি। আমরা গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, একটি প্রতিক্রিয়াশীল মহল মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে সরকারী বরিশাল কলেজের নামকরণের বিরোধীতার অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছেন প্রকাশ্যে সমবেত হয়ে। আমরা এই অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জানাই।
অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীলতায় বিশ্বাসী সকলের পক্ষ থেকে আমরা এই ধরনের অপতৎপরতা বন্ধে প্রশাসনিক কঠোর উদ্যোগ কামনা করছি। অবিলম্বে সরকারী বরিশাল কলেজের নামকরণ মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে করে গেজেট নোটিফিকেশন জারি করে নামকরণকে বাস্তবতা দেওয়ার দাবি করছি। মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের ত্যাগ ও অবিস্মরনীয় অবদান আমরা কোনোভাবেই বিস্মৃত হতে দেবো না।
মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত সরকারী কলেজ, বরিশাল দাবিতে আমরা এক জোট এর পক্ষে এই বিবৃতি পেশ করছি।
(কপি করে প্রচার করার জন্য অনুরোধ ও আগাম
ধন্যবাদ জানাচ্ছি।)
_________________INFORMATION______________
আপনার মতামত দিন: