Ameen Qudir

Published:
2017-01-21 16:08:04 BdST

সন্তান, স্ত্রী নাতির মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে রাষ্ট্রের কাছে আবেদন


ডা. প্রভাতী তরফদার
___________________________

 

 

অসহায় এক পিতা ও স্বামীর করুণ অাকুতি ঝরে পড়ল তার লেখা এক চিঠিতে। চিঠি তো নয়,
মৃত্যুর জন্য আবেদন । তাও রাষ্ট্রের কাছে।

 

প্রাণঘাতি রোগে আক্রান্ত ২ সন্তান , স্ত্রী ও নাতির মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে সকরুণ আবেদন করেছেন মেহেরপুর শহরের বেড়পাড়ার তোফাজ্জেল হোসেন।

‘ডুকিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি’আক্রান্ত তার পরিবার সদস্যরা।

তোফাজ্জল হোসেন একসময় পান-বিড়ি বিক্রয় করতেন। তাঁর স্ত্রী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। দু'ছেলে বিছানাগত। মেয়ের একমাত্র ছেলেও একই রোগে আক্রান্ত। বড় ছেলে আবদুস সবুর (২৪), ছোট ছেলে রায়হান হোসেন ও নাতি সৌরভ হোসেন (৮) ‘ডুফিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি’ রোগে আক্রান্ত। দেশে ও ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে দোকানসহ সহায়-সম্বল সব বিক্রি করেছেন তিনি। এখন অর্থাভাবে তাদের মুখে দু’বেলা দু’মুখো ভাত তুলে দিতে পারছেন না।


মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হাবিব ইফতেখার আহমাদ জানান, সাধারণত মায়েদের কাছ থেকে ছেলেসন্তানরা এ রোগে আক্রান্ত হয়, মেয়ে সন্তান না। তবে ওই মেয়ের গর্ভের পুত্র সন্তানও একই রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যা এই পরিবারে ঘটেছে। ক্রোমোজমগত কারণে ছেলেদের এ রোগ হয়।

 

এদিকে, দুই ছেলের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালের পাশাপাশি ভারতের কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেছেন তোফাজ্জেল ।
পাওয়া তথ্য মতে,

ভারতের কেয়ার হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ গৌরাঙ্গ মণ্ডল, তপন কুমার বিশ্বাস, ভারতের কোঠারি মেডিক্যাল সেন্টারের শিশু বিশেষজ্ঞ ড. স্বপন মুখার্জি সবুরের মল-মূত্র, রক্ত, কফ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন 'ডুকিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি' ডিজিজ হয়েছে। দেশের কয়েকজন চিকিৎসকও একই কথা বলেছেন।

সন্তানদের চিকিৎসার জন্য তোফাজ্জেল হোসেন দেশের বিভিন্ন ধর্নাঢ্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দূতাবাসেও ছুটে গেছেন। ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস সহযোগিতা দিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কাছে এ রোগের ওষুধ কী জানতে চায়। শত শত চিকিৎসক ইন্টারনেটে জানিয়েছেন, এখনো এই রোগের কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। ফলে তোফাজ্জেল হতাশ হয়ে পড়েন।

তোফাজ্জেল হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার বাড়ি পরিদর্শন করেছেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ। তিনি পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের কিছু ব্যয় বহনের ঘোষণা দেন। মিডিয়াকে জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক। আবেদনটি পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এই পরিবারের জন্য আমি সাধ্যমত চেষ্টা করবো। সমাজের সবাইকে অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

______________________________

ডা. প্রভাতী তরফদার , মেহেরপুর।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়