Ameen Qudir

Published:
2017-01-20 15:19:28 BdST

“চিকিৎসা সেবা আইন ২০১৬” (খসড়া) প্রসঙ্গে




ডা. বাহারুল আলম
_____________________________

চিকিৎসা ও চিকিৎসক সংক্রান্ত যাবতীয় আইন প্রণয়ন করবে BMDC , সহায়তা দিবে BMA, কায়েম (বলবৎ) করবে রাষ্ট্র, -- অন্যথায় যে আইনই প্রণীত হোক তা রোগী সুস্থতার সহায়ক হবে না ।
.

বাস্তবে হওয়া প্রয়োজন,--“রাষ্ট্র তার পীড়িত নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হবে এবং রোগী চিকিৎসার প্রয়োজনে চিকিৎসকরা যে পরামর্শ দেবে, রাষ্ট্র সে ধারায় আইন প্রণয়ন ও বলবৎ (কায়েম) করবে” ।
..

আইন প্রস্তুত ও প্রয়োগের বিষয়ে দর্শন থাকতে হয়, যা মানুষকে আইন মানার জন্য সক্রিয় করে তোলে । যে আইন দর্শন সমৃদ্ধ নয় তা অকার্যকর । দর্শনের মধ্যে বাস্তবতার সংমিশ্রণ থাকা প্রয়োজন। তা না হলে দর্শন সমৃদ্ধ আইনও অকার্যকর থাকবে।

চিকিৎসক ও চিকিৎসা রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করলে সুফল পাওয়া যাবে না। মনস্তাত্ত্বিকভাবে চিকিৎসক নিজেকে বিদ্যমান পরিবেশ ও প্রতিবেশ- এর অনেক ঊর্ধ্বে ভাবে । কারণ আহত, পীড়িত , মুমূর্ষু মানুষকে সে সুস্থ করে তোলায় নিজেকে ঐশ্বরিক শক্তির অধিকারী ভাবে।

এ কারণেই চিকিৎসকদের সুশৃঙ্খল করার জন্য প্রাচীনকাল থেকেই ‘হিপক্রেটিক ওথ’ বা শপথের কথা চালু আছে। রাজা বা রাজদরবারে আইন দিয়ে কখনো চিকিৎসক ও চিকিৎসা নিয়ন্ত্রিত হত না। চিকিৎসা বিজ্ঞান চর্চায় এথিকস মানার জন্যই শপথ নিতে হয়। ওথ বা শপথ গ্রহণকারী চিকিৎসককে রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলে তা হয় শপথের পরিপন্থী। সংক্ষুব্ধতা প্রকাশ করুক বা না করুক মনস্তাত্ত্বিকভাবে চিকিৎসক অপমান বোধ করে এবং * আইন তখনই অকার্যকর হয়। চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের জন্য আইন প্রণেতাদের আইন প্রণয়নের পূর্বে এটি উপলব্ধি করা প্রয়োজন ।

চিকিৎসককে কি করতে হবে তা চিকিৎসা জ্ঞান-ই তাকে শিখিয়ে দেয়। ‘চিকিৎসা শিক্ষা’ ও পরবর্তীতে ‘ইন্টার্নশিপ’- এ দু’য়ের সমন্বয়ে রোগীর চিকিৎসায় কি কি নিয়ম মানতে হবে চিকিৎসক সেটা ভালভাবেই জানে। এ সংকান্ত যে কোন আইন প্রণেতাকে অবশ্যই দক্ষ, অভিজ্ঞ চিকিৎসা বিজ্ঞান জ্ঞানী হতে হবে। অথবা একাধিক চিকিৎসা জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আইন প্রণয়ন করতে হবে।

আইন প্রণেতারা মনে রাখে না , রোগী ও নাগরিক এক নয়। রোগী নাগরিক হলেও, যে মুহূর্তে সে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় সে মুহূর্ত থেকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের আওতায় চলে আসে এবং শুরু হয় চিকিৎসকের লব্ধজ্ঞান, মেধা , ওথ ও মেডিকেল এথিকসের প্রয়োগ। রাষ্ট্রীয় আইন সেখানে অকার্যকর। ওথ বা এথিকস ভঙ্গকারী চিকিৎসকের বিচার পৃথিবীর সকল সভ্যদেশে স্বাধীন সার্বভৌম মেডিকেল কাউন্সিল করে থাকে ।

রাষ্ট্রীয় আইন নাগরিকদের জন্য থাকাই বাঞ্ছনীয়। নাগরিক হিসাবে তা সমভাবে চিকিৎসকের উপর প্রযোজ্য। সংকট হয় তখনই রাষ্ট্র যখন তার নিজ আইন দ্বারা ‘চিকিৎসা ও চিকিৎসক’ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।বাস্তবে হওয়া প্রয়োজন, “রাষ্ট্র তার পীড়িত নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হবে এবং রোগী চিকিৎসার প্রয়োজনে চিকিৎসকরা যা বলবেন সে আইন রাষ্ট্র প্রণয়ন ও বলবৎ করবে”।

উপনিবেশ ও উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার জন্য ঘটনাটি সম্পূর্ণ উল্টো ঘটছে । ফলে আইন প্রণেতারা সন্তুষ্ট থাকলেও চিকিৎসক ও রোগীর ক্ষেত্রে অকার্যকর ও অসন্তুষ্ট সৃষ্টি করে । চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবে BMDC, সহায়তা করবে BMA, রাষ্ট্র সেটি অনুমোদন ও বলবৎ (কায়েম) করবে।
_________________________________

লেখক ডা. বাহারুল আলম প্রখ্যাত লোকসেবী চিকিৎসক। পেশাজীবী নেতা। সুবক্তা ও সুলেখক।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়