ডাক্তার প্রতিদিন
Published:2020-05-12 14:58:59 BdST
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক ভাইয়ার আত্মকথা
প্রতিকী ছবি
তথ্য সূত্র ডা. শ্রীলা সরকার
______________________
আজকে মাসের দশ তারিখ। আমার তিন মাসের বাচ্চার গুড়ো দুধ শেষ হয়ে গিয়েছে চার দিন আগেই। এখনো বেতন পাইনি। হাসপাতাল থেকে বলে দিয়েছে যে ইনকাম কম তাই বেতন দিতে দেরি হবে৷ বাবা মাও অনেক অসুস্থ। যেখানে আমার এই মাসে উনাদের কিছু দেয়ার কথা ছিল সেখানে আমারই উনাদের কাছে এই সময় চাইতে লজ্জা লাগতেছে। আমার স্ত্রীকেও আমি তার পরিবারের কাছে নিষেধ করেছি। উনারা অনেক করেন আমাদের জন্য। আর কোন মুখে চাবো!
বেচারি টানা কয়দিন সেহেরি করেছে শুধু মাত্র সবজি ডাল দিয়ে। বাজার যেয়ে ভালো কিছু কেনার টাকাটা পর্যন্ত নেই। রিকশা ভাড়া বাঁচাতে অনেকটা পথ হেটেই হাসপাতালে যাচ্ছি। সেখানে নিজের টাকায় ভালো মানের পিপিই কেনাও তো বিলাশিতা। আগের টা নষ্ট হয়ে গেছে।
এই হচ্ছে এখন আমাদের ডাক্তারদের সার্বিক অবস্থা। অনেকেই ভাবেন ডাক্তার হলেই হয়তো কাড়িকাড়ি টাকা ইনকাম করে। কিন্তু আজ দেখি এর থেকে বড় অভিশাপ আর কিছুই নেই।
কোনদিন মাস শেষে হাতের জমানো কিছু টাকা দিয়ে প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য আনতে পারিনি ভালো একটা শাড়ি। সে মুখ ফুটেও কিছু বলেনি কখনো। তার বড়ভাইরা প্রতি বছর ঈদের আগে কিছু খরচ দিয়ে যায়। সেটা দিয়েই কিনে সে। আমার অনেক লজ্জা লাগে। কিন্তু কখনো না করতে পারিনা। নিজের দেয়ার মতো সামর্থ তো নেই। যেটুকু জমা হয় পুরোটাই দিয়ে দেই বাবা মার ওষুধের পিছনে।
কখনো মুখ ফুটে হয়তো এই চাপা কষ্ট গুলো কাউকে বলা হবে না। মাঝে মাঝেই সব কিছু ত্যাগ করে অনেক দূরে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তখনই চোখের সামনে ভেসে উঠে আমার ফুটফুটে মেয়েটার ছবি। আমার স্ত্রীর ছবি। পারিনা আর।
আশা বাঁধি একদিন হয়তো আমাদেরও সময় আসবে। ভালো সময়। কিন্তু যেই ভূল আমি করেছি সেই ভূল আর আমি আমার মেয়েকে করতে দিবোনা। আমার জীবনযুদ্ধে হয়তো আমি পরাজিত হয়েই বেঁচে থাকবো কিন্তু আমার সন্তান কে আমি কখনো হারতে দিবো না।
AD..
আপনার মতামত দিন: