ডাক্তার প্রতিদিন
Published:2020-04-19 19:27:27 BdST
"আপনার রাজ্যে বাসকারী ওড়িশাবাসীদের পেট ভরে খাওয়ান, যা টাকা লাগে আমি দেবো"
ডেস্ক
_____________________
"দেশের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে অনুরোধ- আপনার রাজ্যে বসবাসকারী ওড়িশা বাসীদের পেট ভরে খাওয়ান এবং সেই খাওয়ানোর জন্য যত টাকা খরচ হবে, সেই খরচের বিলটা পাঠিয়ে দিন। যা টাকা লাগে আমি দেবো।"
কে বলছেন এটা ? ওড়িশার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। না, এরজন্য তাঁকে কেন্দ্রের কাছে হাত পাততে হয়নি। কথায় আছে না, বাপ কা বেটা ! একবার শুনবেন নাকি ওনার বাপের বীরত্বের কাহিনী ......?
বাইশে জুলাই, 1947. দিল্লির আওরঙ্গজেব রোডের বাড়িতে স্ত্রীর সাথে ডিনারে বসেছিলেন Royal Air Force এর প্রাক্তন এক কমান্ডার । টিং টিং করে ফোন বেজে উঠতেই চোখ পড়লো ঘড়ির দিকে, রাত্রির দশটা !
হ্যালো বলতেই বুঝলেন ওপ্রান্তে ভাবী প্রধানমন্ত্রী নেহেরুজী, তার একান্ত সুহৃদ ও বটে । কিছুক্ষণ কথা বলার পর গম্ভীর মুখে ফোন ছেড়ে দিলেন ।
উদ্বিগ্ন স্ত্রী ততক্ষণে চেয়ার ছেড়ে পাশে দাঁড়িয়ে, "কি ব্যপার তোমায় এত tense দেখাচ্ছে কেন ? কার ফোন ! "
সংক্ষেপে বললেন এখুনি প্লেন নিয়ে বেরুতে হবে । ইন্দোনেশিয়া থেকে ডাচ আর্মির চোখ বাঁচিয়ে একজন VIP কে উদ্ধার করে আনতে হবে এখানে । নেহেরুজী যখন বলেছেন তখন এটা অত্যন্ত জরুরী কিন্ত সাথে তো একজন কো পাইলট চাই, জেনেশুনে কাকে নিয়ে যাবো এই বিপদের মধ্যে ?
স্ত্রী স্মিত হেসে বললেন, আমার যে নশো ঘন্টা বিমান ওড়ানোর লাইসেন্স আছে সেটা কি ভুলে গেলে ডার্লিং ? আমি যাবো তোমার সাথে ! বিস্মিত পতিদেবতাটি হতবাক হয়ে গেলেন তার বীরাঙ্গনা স্ত্রীর কথা শুনে । ঘরের অপর প্রান্তে শুয়ে থাকা নমাসের শিশু সন্তানের দিকে তাকিয়ে বললেন কিন্ত ওকে কে দেখবে ?
আরে ওকে তো ন্যানিই দেখে আর কয়েক ঘন্টার তো ব্যাপার, ওটা নিয়ে টেনশন কোরনা, এমনভাবে মহিলা বললেন যেন দুজনে কোন late night party তে যাচ্ছেন!
পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত, গাড়ী নিয়ে বেরুলেন দুজনে পালাম বন্দরের উদ্দেশ্যে যেখানে অপেক্ষা করছিল ওনার ব্যক্তিগত ডাকোটা বিমান । বিশেষ নির্দেশ পেয়ে ATC দিলো ছাড়পত্র আর তারপরেই উইংকমান্ডার সাহেব স্ত্রীকে পাশে বসিয়ে উড়ে গেলেন জাকার্তা অভিমুখে !
প্রেক্ষাপট: দ্বীপরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া 1816 সাল থেকে ছিলো ডাচদের অধীনে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান দেশটির দখল নেয় । তারা আত্মসমর্পণ করলে সুকর্ণর নেতৃত্বে 17ই আগষ্ট 1945 সেখানকার জাতীয়তাবাদী পার্টি নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে, যদিও অধিকাংশ দ্বীপে ডাচরা তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখে । মিত্রশক্তির চাপে তারা 25শে মার্চ 1947 এর মধ্যে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে স্বীকৃত হয় কিন্ত চালাতে থাকে নানান টালবাহানা । শেষমেষ 21শে জুলাই ডাচ সেনাবাহিনী মারডেকা প্যালেস ঘিরে ফেলে মন্ত্রীসভার সব সদস্যকে বন্দী করে । সুকর্ণ ও প্রধানমন্ত্রী সুলতান জাহরির আত্মগোপন করলেও সেনার কড়া নজরদারিতে দেশ ছাড়তে পারেন না । বিশ্ববাসী ও UNO কে প্রকৃত ঘটনা জানানোর জন্য জাহরির মুক্তি ছিলো ভীষণ দরকারি তাই তারা যোগাযোগ করেন নেহেরুজীর কাছে আর তারপরেই এই নৈশ অভিযান!
24শে জুলাই পালাম বিমানবন্দরে নিরাপদে ফিরে আসে সেই ডাকোটা বিমান, বেরিয়ে আসেন একমাত্র যাত্রী সুলতান জাহরির । সেইসাথেই যবনিকা পতন হয় রুদ্ধশ্বাস এক নাটকের ।
হল্যান্ডের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাবার পর কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ ইন্দোনেশিয়া ঐ পাইলটকে সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার 'ভূমিপুত্র' সম্মানে ভূষিত করে, যা আজ অব্দি আর কোন বিদেশীকে দেওয়া হয়নি ।
ভারত স্বাধীন হবার পর ইনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় খনি ও ইস্পাত দপ্তরের মন্ত্রী হন এবং পরবর্তী কালে পাশের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও হয়েছিলেন ।
এবার কি চেনা গেল নাটকের প্রধান চরিত্র গুলিকে ? .....
পাইলট ছিলেন বিজু পট্টনায়ক ও কো পাইলট তাঁর পাঞ্জাবী স্ত্রী লাহোরের মেয়ে জ্ঞান শেঠি, যিনি ছিলেন দেশের প্রথম মহিলা কমার্শিয়াল পাইলট
আর ক্রেশে শুয়ে থাকা শিশুটি ?
ওড়িশার আজকের মুখ্যমন্ত্রী নবীন চন্দ্র পট্টনায়ক!
____________________
সংগ্রহ রাহুল গঙ্গোপাধ্যায়
আপনার মতামত দিন: