Ameen Qudir

Published:
2020-04-10 23:54:07 BdST

করোনা চক্র:চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের এক অন্য রকম জীবানুযুদ্ধ!


ডাঃ এস এম মুইজ্জুল আকবর চৌধুরী
_______________________

"করোনা চক্র"
#চিকিৎসকসহ_স্বাস্থ্যকর্মীদের_এক_অন্য_রকম_জীবানু_যুদ্ধ!
বাচতে হলে জানতে হবে।

এখন দিন রাত সমান।
অদৃশ্য শত্রু কখন হানা দেয় জানা নাই।
করুণাহীন করোনা আমাদের প্রতিটি সেকেন্ড কেড়ে নিয়েছে। দিন রাত সারাক্ষন করোনা আতংক। সচেতনতাই যুদ্ধ জয়ে সহায়ক শক্তি আর
চিকিৎসক, নার্স,স্বাস্থ্যকর্মী আর হাসপাতাল হচ্ছে সামনের সারির যোদ্ধা আর যুদ্ধ ময়দান।
আসুন, সচেতন হতে যোদ্ধা আর যুদ্ধ ময়দান সম্পর্কে কিছু জানি।
করোনা হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার, নার্স অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের রোষ্টার দেখুন আর দেখুন কর্মরত সকল পর্যায়ের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মচক্র।

♦১♦
ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে প্রত্যেক ডাক্তার/ নার্স/ স্বাস্থ্যকর্মীর দৈনিক ৮ বা ১২ ঘন্টা ডিউটি।
ডিউটি মানে রোগীর সেবা-যত্ন-পরিচর্চা~ মানে দুরত্ব নয় সার্বক্ষণিক সংস্পর্শ।
(ডিউটিতে আসার আগে পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে আসবেন→ কারো কারো জন্য হয়তো শেষ বিদায়!!)

‌‍ ↓
ডিঊটি শেষে বাসায় ফেরা হবে না, হাসপাতালে বা নির্ধারিত স্থানে থাকতে হবে।
তারপর পরের দিন ডিউটি....

এভাবেই ৭ দিন বা যতদিনের রোস্টার →

এরপরঃ
না, বাড়ি যেতে পারবেনা!!
১৪ দিনের কোয়ারান্টাইন।

সুস্থ থাকলে

১৪ দিন পর ৭দিনে জন্য পরিবারের কাছে যেতে পারবেন

→ ৭ দিন পর আবার ডিউটিতে যাবেন।
আর

আক্রান্ত হলে চিকিৎসাধীন হবেন

চিকিৎসায় সুস্থ হলে পরিবারের কাছে যাবেন
আর
সুস্থ না হলে (আর কখনো পরিবার-পরিজন, সন্তান কারো সাথে দেখা হবেনা, মৃত্যুর পর সরাসরি..........!)

♦২♦
অন্যান্য হাসপাতাল বা চেম্বারঃ

অনেক রোগীর ভীড়ে~
উপসর্গ বিহীন করোনা রোগী
সাসপেক্টেড করোনা রোগী
অন্যান্য রোগী যারা করোনায় আক্রান্ত কিন্তু সনাক্ত হয়নি।

হাসপাতালে ( বহিঃবিভাগ বা আন্তঃবিভাগ)
বা চেম্বার

↓সংক্রমণ

ডাক্তার /নার্স/ স্বাস্থ্যকর্মীর আক্রান্ত
(সুপার স্প্রেডার)

২-১৪ দিন ইনকিউবেশন পিরিয়ড
(উপসর্গ বিহীন কিন্তু নিজেদের অজান্তেই রোগ ছড়াতেই থাকবে)

(সুপার স্প্রেড)

সহকর্মী, রোগী, রোগীর স্বজনসহ সংস্পর্শে আসা সকল মানুষ সংক্রমণের ঝুঁকিতে

অনিয়ন্ত্রিত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন
(পরিবার/ সমাজ / দেশ)

অগনিত আক্রান্ত → রোগ ও রোগীর বিস্তার
↓ ↓
↓ লক ডাউন

আক্রান্ত চিকিৎসক/স্বাস্থ্যকর্মী কোয়ারান্টাইন বা চিকিৎসাধীন
আর
হাসপাতাল/ইউনিট লক ডাউন

চিকিৎসায় সুস্থ হলে পরিবারের কাছে যাবেন
আর
সুস্থ না হলে (আর কখনো পরিবার-পরিজন, সন্তান কারো সাথে দেখা হবেনা, মৃত্যুর পর সরাসরি........)


হাসপাতাল বন্ধ → রোগীর ভোগান্তি, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী সংকট।

★★
(ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতাল বা চেম্বারে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা যুদ্ধে কর্মচক্র সংক্ষিপ্ত আকারে দেখানোর চেষ্টা করা হলো।)

বিঃ দ্রঃ♠

ডিউটি ও কোয়ারান্টাইন থাকা কালীন সময়ে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপদ আবাসন ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ( ★কখন হবে আল্লাহই জানেন...)
ইতিমধ্যে অনেকেই কোয়ারান্টাইন ও ডিউটিতে আছেন। এই অল্প সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী আবাসন ও খাদ্য সংকট হচ্ছে। কিন্তু এই সংখ্যাটা দিন দিন বাড়তে থাকবে। তাই চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নিরাপদ আবাসন, খাদ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য অতীব গুরত্ব দিয়ে তড়িৎ সমাধান করতে হবে।)

চিকিৎসা সেবা অক্ষুন্ন রাখতে ও কমিউনিটি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রনে সুপার স্প্রেডার( চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী)দের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
নতুবা হাসপাতাল /চেম্বার হবে যমপুরী আর চিকিৎসক /নার্স/স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজের অজান্তেই আত্মঘাতী যমদূত।
জরুরি সেবা চালু রেখে হাসপাতালে সীমিত আকারে জরুরি বহিঃবিভাগ চালু করে, বহিঃবিভাগ ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ রাখতে হবে। ( সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রন করতে)

আমার জানা মতে চিকিৎসকরা প্রনোদনা চাইনি, (প্রনোদনা চেয়েছে ঐসব অথর্ব শট সর্বখেকোর দল) চিকিৎসকরা চেয়েছে জীবানুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সাহস, অনুপ্রেরণা, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আর চেয়েছে আক্রান্ত হলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা।

একটা বিশেষ অনুরোধ, অদৃশ্য জীবাণুর বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণ...এই সময় চিকিৎসকদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা, সাহস, স্বীকৃতি দিতে না পারেন..দয়া করে অসন্মান আর অপমান করবেননা।
আরেকটা কথা, এই জীবাণু যুদ্ধে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরাই মুল যোদ্ধা..ওরা জিতলেই আপনারা জিতবেন, দেশ জিতবে। বিশ্বাস রাখুন, চিকিৎসকরা আপনাদের পাশে থাকবে, যুদ্ধ ছেড়ে কোথাও যাবেনা।

আপনাদের আরেকটা অনুরোধ, ঘরে থাকুন...ঘরে থাকুন এবং ঘরে থাকুন। একান্ত বাধ্য না হলে ঘর থেকে বের হবেন না, আপনার ঘরেও কাউকে আসতে দিবেন না। শুধুমাত্র একান্ত জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হলে হাসপাতালে যাবেন, চেষ্টা করুন ঘরে বসেই চিকিৎসা নিতে, আপনাদের সেবা দিতে চিকিৎসকদের ফোন ও হট লাইন খোলা।। ফোনে বা হট লাইনে চিকিৎসককে না পেলে জরুরি সেবায় নিয়োজিত আইনশৃংখলা বাহিনীকে অবহিত করুন। আবার বলছি, ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন।
__________________________

ডাঃ এস এম মুইজ্জুল আকবর চৌধুরী
সহকারী অধ্যাপক, হৃদ রোগ বিভাগ ইন-চার্জ,করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ

সাংগঠনিক সম্পাদক, বিএমএ চট্টগ্রাম।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়