Ameen Qudir

Published:
2020-04-01 15:53:58 BdST

বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ডা. জাবের


 

 

ছবি ও রিপোর্ট : সিলেট টুডে২৪.কম
____________________
সকালবেলা একজনের কল আসলো ডা. সৈয়দ এম আবরার জাবেরের মোবাইলে। তার বাবার হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এখন কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

ফোনে এমন উদ্বেগের কথা শোনেই বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন ডা. জাবের। কিছুক্ষণ পরই পৌঁছে যান রোগির বাড়ি।

এভাবে প্রতিদিন চিকিৎসা পরামর্শ চেয়ে অনেক ফোন আসে জাবেরের কাছে। ফোনে পরামর্শ দিয়ে একটি অটোরিকশায় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ডা. জাবের। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেন তিনি। শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যান। কারো ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে দেন। কারো রক্তচাপ মেপে দেন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে যার যার প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দিয়ে বাসায় ফিরেন।

হবিগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডা. সৈয়দ এম আবরার জাবেরের চেম্বার। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর এখন মাত্র ২ ঘণ্টা চেম্বারে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন তিনি। এছাড়া পাড়া প্রতিবেশিদের জন্য তার বাসার সামনে একটি রুমে চিকিৎসা পরামর্শ দেন।

করোনাভাইরাসের আতঙ্কে সারা দেশের মানুষ যখন ঘরে আবদ্ধ আছেন তখন হবিগঞ্জ শহরের পাড়া-মহল্লায় গিয়ে সেবা দিচ্ছেন এই চিকিৎসক। দেশের এই পরিস্থিতিতে মানুষজন যেন সাধারণ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য এই ভাবে চিকিৎসা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

ডা. সৈয়দ এম আবরার জাবের জানান, সকাল ১১টায় একটি অটোরিকশার সামনে হাতে লিখা ‘ডাক্তার’ স্টিকার লাগিয়ে, একটা বড় হেক্সিসল, ৩০টি মাস্ক, ইনফ্রারেড থার্মোমিটার, বিপি মেশিন, স্টেথোস্কোপ, গ্লাভস নিয়ে বের হন তিনি। হেক্সিসল নিয়েছেন নিজের, রোগীর হাত, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি পরিষ্কারের জন্য। নির্ধারিত রোগীদের বাড়ির সামনে যাওয়ার পর আশপাশের আরও অনেকেই এসেছেন সেবা নেওয়ার জন্য। তাদেরকেও চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য চেম্বারে রোগী দেখার ফিতে এনেছেন বৈচিত্র্য। তার চেম্বারে করোনাকালীন ফি নির্ধারন করেছেন ২ কেজি চাল, ১ কেজি আলু বা অন্য একটা সবজি, ১টি সাবান, ১ প্যাকেট গুড়ো সাবান। এই সামগ্রীগুলো তার নিজের জন্য নয়, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে যে নিম্ন আয়ের মানুষজন সংকটে আছেন তাদের দেওয়া হবে এই সামগ্রী।

এছাড়াও তিনি WHO এবং জাতীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে Covid 19 বিষয়ে ট্রেনিং সম্পন্ন করেন। স্বেচ্ছাসেবী ডাক্তার হিসেবে হটলাইনে ( ৩৩৩, ১৬২৬৩) সেবা দিচ্ছেন। ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন এলাকার রোগীদের সেবা দিচ্ছেন হটলাইনে।

ডা. জাবের মনে করেন ধনাঢ্য ব্যক্তি যারা চেম্বারে চিকিৎসা নিতে আসবেন তাদের অবশ্যই চিকিৎসা ফি দেওয়ার সামর্থ্য আছে। তাদের কাছ থেকে এই মুহূর্তে এই সামগ্রীগুলো পেলে আশপাশের দরিদ্র মানুষদেরকে পৌঁছে দেবেন।

ডা. সৈয়দ এম আবরার জাবের বলেন, নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই অটোরিকশা করে সেবা দিতে বের হয়েছি। যাদের সেবা দিয়েছি তাদের কারোরই সর্দি জ্বর ছিল না। সবারই ডায়াবেটিস, প্রেসারসহ অন্যান্য রোগ। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারী নিষেধাজ্ঞা ও আতঙ্কের কারণে মানুষজন ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালও বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি হাসপাতালে পিপিই'র অপ্রতুলতায় চিকিৎসকদের মাঝেও আতংক কাজ করে। এই মুহূর্তে সাধারণ চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক মানুষ। তাই অন্তত যে রোগীরা আমাকে স্মরণ করছেন তাদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘরে থাকার বিকল্প কিছু নেই। তাই আমি যখন ঘর থেকে বের হই আমার পরিবার পরিজনও অনেক চিন্তা করেন। তারপরও আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি চিকিৎসা সেবার উপর মানুষের বিশ্বাস ধরে রাখতে।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়