Ameen Qudir

Published:
2020-03-22 01:48:17 BdST

করোনায় আগামীতে নাগরিক দায়িত্ব



ডা. অসিত মজুমদার
লোকসেবী চিকিৎসক
_____________________

করোনায় সারা বিশ্ব কাবু। এটা আমরা সবাই জানি। করোনার এই মহামারি থেকে রক্ষা পেতে সরকারের পাশাপাশি আমাদের নিজেদেরও কিছু দায়দায়িত্ব আছে। আগামী দিনে সুস্থ থাকতে সরকারের পাশাপাশি আমরাও কিছু নাগরিক দায়িত্ব পালন করি এবং অন্যকে দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করি।

সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্য অনুযায়ী করোনায় দরিদ্র দেশগুলোতে মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হতে পারে। তবে একথা ঠিক প্রয়োজনীয় সতর্কতা এবং সচেতনতা আর সঠিক ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে আমরা মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কোটায় রাখতে পারি।

প্রথমেই আমরা কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে বিদেশ হতে আগত এবং সন্দেহভাজন কেউ স্বেচ্ছায় কোয়ারান্টাইনে চলে যাই।
আমরা ঘরে এবং ঘরের বাইরে সবাই সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব ৬ ফুট দূরত্ব মেনে চলি।
সরকার নির্দেশিত নিয়ম মেনে চলি। যথাসম্ভব চোখ, মুখ, নাকে হাত লাগাব না। কোন কিছু স্পর্শ করলে তারপর অবশ্যই ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানিতে হাত ধুইব। ঘরের বাইরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করব।

নিজ দায়িত্বে জনসমাগম হবার সুযোগ তৈরী করব না। সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ সব ধরণের গণজমায়েত এবং গণপরিবহণ এড়িয়ে যাব।

অফিস, কর্মস্থলে শুধুমাত্র জরুরী সেবা চালু রাখব। স্টাফ অলটারনেট করে অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশ রোটেশনে ডিউটি করব। বাকীরা বাসায় অবস্থান করবে। বাইরে খুব প্রয়োজন না হলে ঘুরাঘুরি করলে প্রাতিষ্ঠানিক এবং সরকারী উভয় প্রকার জরিমানার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আমাদের সকলের মনে রাখা দরকার আপনার হাঁচি-কাশির সাথে বের হওয়া করোনা ভাইরাস পিতলের উপর বেঁচে থাকতে পারে ৪ ঘন্টা, কাঠের উপরে ২৪ ঘন্টা,প্লাস্টিক-স্টেইনলেস স্টিলে বেঁচে থাকতে পারে ২ থেকে ৩ দিন। এমনকি আপনার হাঁচি-কাশির সাথে বের হওয়া করোনা ভাইরাস ৩ ঘন্টা পর্যন্ত বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে মাটিতে পড়ার আগ পর্যন্ত। একবার শুধু ভাবুন আপনি চিকিৎসকের কাছে যাওয়া পর্যন্ত কত জায়গায় স্পর্শ করবেন। সুতরাং এ অবস্থায় আপনি মোবাইলে চিকিৎসা পরামর্শ নিতে পারেন।

আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে সর্দি-জ্বর মানেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নয়। তবে সব সর্দি কাশিতেই করোনা সম্পর্কিত সব রকম সতর্কতা অবশ্যই নিতে হবে। সচেতন হই, আতঙ্ক নয়। নিজে সুস্থ থাকি। অন্যকেও সুস্থ থাকতে সহযোগিতা করি।

সরকারী বেসরকারি উভয় পর্যায়ে জনসচেতনতামূলক লিফলেট, রেডিও, টেলিভিশনে দেয়া নির্দেশনা মেনে চলি এবং অন্যকে মেনে চলতে অনুরোধ করি।

সবাই লক্ষ্য করলে দেখবেন, ইতালিতে মৃত্যুহার ৭.৯ শতাংশ আর জার্মানিতে ০.২ শতাংশ । কারণ কি? কারণ জার্মানে সচেতনতা, সতর্কতা আর তাড়াতাড়ি ডায়াগনোসিস।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা মাইক রায়ান বলেন জার্মানিতে আছে আগ্রাসী টেস্ট পদ্ধতি। ফলে মৃদু সংক্রমণও ধরা পড়েছে । ‍
জার্মানির রবার্ট কক ইন্সটিটিউট এর অধ্যাপক লথার ওয়িলার বলেন প্রথম থেকেই জার্মানে ডাক্তারদের বলা হয়েছিল সন্দেহভাজন সব লোকজনকে টেস্ট করাতে ।
করোনা ভাইরাস দমনের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মন্ত্র হলঃ টেস্ট, টেস্ট আর টেস্ট আর বিশেষজ্ঞরা বলেন জার্মানির প্রবল আর তেজিয়ান টেস্টিং কর্মসূচী অনেক সংক্রমণ আগে ভাগে ধরা পড়েছে আর মৃত্যু হার কমেছে ।

গত ১৯ মার্চ লন্ডনের অধিকাংশ হাসপাতালে ওপিডি বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে, বিশেষ প্রয়োজনে ভিডিও কলের মাধ্যমে , অনলাইনে এবং টেলিফোনে রুগীরা ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। বাংলাদেশেও এখন করোনা ক্রাইসিস পিরিয়ডে মোবাইল, ফেসবুক, হোয়াটসএপ বা স্কাইপিতে জরুরী চিকিৎসা নিতে পারেন।

ইংল্যান্ডের মত জায়গায় রুটিন অপারেশন বা সার্জারী করা ৯০℅ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখানেও আমরা খুব প্রয়োজন না হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এড়িয়ে চলি।

বৃটিশ সরকার কিছু কিছু গাড়ী কোম্পানীকে গাড়ীর বদলে ভেন্টিলেটর বানানোর নির্দেশ দিয়েছে। আমাদের দেশে পিপিই, স্যানিটাইজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাতে ব্যবসায়ীমহল সামাজিক দায়বদ্ধতা হিসেবে উৎপাদন করতে পারেন।

ইউকে সরকার চার থেকে পাঁচ মাসের Massive Disaster Management-এর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশে অন্ততঃ ছয়মাস সময়ের জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রস্তুত থাকা দরকার।
এক্ষেত্রে খাবারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের মজুদ নিশ্চিত করাসহ বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখাটাও খুব জরুরী।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়