Ameen Qudir

Published:
2020-03-17 15:09:17 BdST

মুজিববর্ষ : বিজ্ঞানশিক্ষাই হোক আমাদের পাথেয়



ডা. অসিত মজুমদার

______________________

এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম

এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।

১৯৭১ সালে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের অগ্নিঝরা এই ভাষণ আমাদেরকে বারবার উদ্দীপ্ত করে তোলে। আজকের তরুণেরা হারিয়ে যায় একটি মোহাবিষ্ট দুর্বার তেজোদৃপ্ত কন্ঠস্বরে। এ যে বড় মায়াময়ী, দৃঢ়তা নিয়ে বেঁচে থাকবার প্রত্যয় ঘোষনা। বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সনদ। এ সনদই আমাদের জানিয়ে দেয় স্বাধীনতার ঘোষনা। এ সনদই আমাদের নির্দেশ দেয় স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার তীব্র বাসনা। এ সনদই বাঙ্গালী জাতিকে জানিয়ে দেয় মুক্তির বার্তা। এ সনদ যে বাঙ্গালীর প্রাণের সনদ। স্বাধীনতার দলিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনার তেজোময়ী বার্তা। এই বার্তাই যে আসলে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষনা।
হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধুর ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঘোষনাই আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষনা। সেদিনের এই ঘোষনার মধ্য দিয়েই বাঙ্গালী জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্দীপ্ত হয়। মুক্তির বার্তাটি সেদিনই সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন বাঙ্গালী জাতির মহান নেতা, মুক্তি সংগ্রামের কিংবদন্তী প্রতীক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দীপ্তকন্ঠ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
সেদিনের এই একটি বার্তাই আমাদের নির্দেশনা দেয় স্বাধীনতা আনবার দৃঢ় প্রত্যয়। একটি ঘোষনাই আমাদের এনে দেয় মহান স্বাধীনতার স্বাদ। বঙ্গবন্ধু আমাদের প্রাণের কন্ঠস্বর। মুজিব মানে স্বাধীনতা। মুজিব মানে অহংকার। বিশ্বব্যাপী মুক্তিকামী মানুষের বেঁচে থাকার প্রেরণা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
আজ আমাদের এই মহান নেতা শেখ মুজিবর রহমানের একশত জন্মবার্ষিকী। বাংলাদেশ সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে মুজিববর্ষ পালনের ঘোষনা দিয়েছে। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলব সরকারের এই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বাঙ্গালী জাতিকে আরো দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে বহুগুণে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। মুজিববর্ষ শুধু একটি বর্ষ পালনই নয়। বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সনদ কার্যকরের একটি চরম বার্তাবাহকও বটে। আওয়ামীলীগ যেহেতু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল এবং আওয়ামীলীগ বর্তমানে সরকারে আছেন সেজন্য স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মুক্তিকামী মানুষের আশা – আকাঙ্ক্ষা ও বেশী এই সরকারের উপরই। আওয়ামীলীগই আপমর জনসাধারণের বেঁচে থাকবার শেষ আশ্রয়স্থল।
মুজিববর্ষে আমরা যদি বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সনদের কথা বিশ্বাস করি তবে আমাদের সংবিধানের চার মূলনীতির আদর্শে ফিরে আসতেই হবে। আমাদের অস্ত্বিত্বকে স্বদম্ভে টিকিয়ে রাখতে চাইলে শেকড়কে স্বীকার করতেই হবে। মহান সংবিধানের সেই চার মূলনীতিতেই জাতির মুক্তির পথ স্পষ্ট করে নির্দেশনা দেয়া আছে। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র দীর্ঘদিন ধরে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে একের পর এক রাষ্ট্রযন্ত্রকে অকার্যকর করে রেখে উন্নয়নকে করেছে বাধাগ্রস্ত ও মানুষের স্বাভাবিক গতিধারাকে পিছিয়ে দিয়েছে বহুগুণ। স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের অপপ্রচার এবং স্বার্থান্বেষী মহলের সুযোগ সন্ধানী রূপ দেখে সাধারণ মানুষ বারবার বিশ্বাস হারাতে বাধ্য হয়েছেন। কুচক্রী মহল স্বাধীনতার স্বাভাবিক গতিধারায় বিশ্বাস করলে বাংলাদেশে পঁচাত্তর সালের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটত না। সৃষ্টি হত না নতুন কোন উত্থানের। অন্যায়ভাবে বারংবার দুষ্কৃতিচক্রের মাধ্যমে অপশক্তির সহায়তায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দেশের উন্নয়ন গতিকে গলাটিপে হত্যা করে ক্ষমতার মসনদ দখল করে রেখেছিল দীর্ঘদিন। উন্নয়ন ছিল সোনার হরিণ, বারংবার বাধাগ্রস্ত হয় সামাজিক জীবনধারা। স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে ভঙ্গুর, নড়বড়ে, নীতিবিবর্জিত এবং দুর্বল একটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হাতে পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই বড় ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হয়েছে। দীর্ঘদিনের ভেঙ্গে পড়া অব্যবস্থাকে সুসংহত অবস্থানে নিয়ে আসতে চাইলে সেটা বাস্তবেই পাহাড়সম কঠিন কাজ। সেই কঠিন কাজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়ার কাজটা করে যাচ্ছেন আওয়ামীলীগ সরকার। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড থেকে আমরা সেটারই প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখতে পাই।
আমাদের সামনে এখন পাহাড়সম বাধা ডিঙ্গানোর কাজ। বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে গেলে সেটা করা যে আজ বড়ই অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে আমরা বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছুতে সমর্থ হয়েছি। সবই সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তনয়া গণতন্ত্রের মানসকন্যা, মাদার অব হিউম্যনিটি এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা নেত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নির্দেশনা এবং দৃঢ় মনোবলের কারণেই। এখন আমাদের লক্ষ্য উন্নয়নশীল দেশ হতে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে নেতৃত্ব দান করা। ইতিমধ্যেই বর্তমান সরকারের আমলেই স্বাস্থখাতসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে উজ্জ্বল নেতৃত্বের স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়েছে।
বর্তমান নেতৃত্বকে যথাযথ সহযোগিতা করলে সরকারের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছুবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে আমাদের সর্বাগ্রে যা প্রয়োজন তা হল মান সম্মত শিক্ষা। আরও একটু এগিয়ে বললে বিজ্ঞান শিক্ষা। বিজ্ঞান শিক্ষাকে জনপ্রিয় এবং মানসম্মত করতে পারলে আমরাও বৈশ্বিক অগ্রাত্রায় বাংলাদেশ অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সমর্থ হবে। আমাদের রয়েছে বিশাল মানব সম্পদ। এই মানব সম্পদকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো একটি জাতিতে পরিণত হওয়া মোটেই কঠিন কিছু নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেদিকে যথেষ্ট অনেকদূর এগিয়েছেন বটে। তবু ও বলব এগিয়ে যাবার পথে অনেক বাধা, বিশৃঙ্খলা কিংবা অসহযোগিতা থাকতেই পারে। সেক্ষেত্রে সব বাধা ডিঙ্গিয়েই আমাদের অনেকদূর এগিয়ে যেতে হবে।
বিজ্ঞান চর্চার কাজটি মোটেই সহজ কাজ নয় কিন্তু আমাদের তরুণদেরকে সেভাবে উপযুক্ত মোটিভেশনের মাধ্যমে বিজ্ঞান মনস্ক হিসেবে তৈরী করা অসম্ভব কিছু নয়। শৈশব হতে বিজ্ঞানমুখী মনোভাব তৈরী করাতে হবে। এই কাজটা খুবই সহজ। পাড়ায় পাড়ায় বিজ্ঞান ক্লাব করে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় এবং sustainable করা যেতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে দক্ষ জনশক্তি তৈরীতে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকল্প নাই। বিজ্ঞান শিক্ষাই এনে দিতে পারে অর্থনৈতিক মুক্তির সবচেয়ে সহজ পথ।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় বাংলাদেশ চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন ক্যাটগরিতে বিশ্বে অনেকের জন্য আজ রোল মডেল। চিকিৎসা সেবা ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে অবকাঠামো এবং দক্ষ জনবল আছে তাতে আমরা আরও Effort দিলে public private partnership এর মাধ্যমে বাংলাদেশেই Super Quality Hospital বানানো সম্ভব যেখানে শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে রোগীরা আসবে চিকিৎসা নিতে এবং আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা অনেক কম খরচেই দেয়া সম্ভব হবে। আমাদের দেশে সেই পরিবেশ তৈরী করাও অসম্ভব কিছু নয়। একথা নির্দ্ধিধায় বলা যায় চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে আজ বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে। এই অবস্থানকে ধরে রেখে যদি আরও উন্নয়ন সাধন করা যায় তবে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ চিকিৎসক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গেই কাজ করতে পারবে।অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে আমরা বলতে পারি ইতিমধ্যেই যে সমস্ত চিকিৎসক বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন তাঁদের বেশিরভাগই অত্যন্ত সুনামের সাথেই বিদেশে কাজ করছেন। আমাদের দেশেও অনেক আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন চিকিৎসক আছেন যাঁরা দেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা আশাবাদী বিজ্ঞান শিক্ষায় আমরা অনেক এগিয়ে Expert skill তৈরী করতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে খুব বেশী দেরী নেই।
মুজিববর্ষের এই শুভ দিনে শুরু হোক আগামী পথচলার নতুন উদ্যমতা। এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।
________________

ডা. অসিত মজুমদার, সুলেখক ।
লেখক ছাত্রাবস্থায় আনুমানিক ১৯৯৪-৯৫ সালের দিকে “বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংস্থা ” কর্তৃক আয়োজিত “বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে আমাদের করণীয়” শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় “সর্বসাধারণ পর্যায়ে সারাদেশব্যপী প্রথম” হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
এবং
বাংলাদেশ ফ্যামিলি প্ল্যানিং সার্ভিসেস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার প্রকাশিত “প্রজন্ম “আয়োজিত ” আর্থ -সামাজিক উন্নয়নে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব ” শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় সারাদেশে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে তৃতীয় হন।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়