Ameen Qudir
Published:2020-03-16 15:46:59 BdST
কোভিড ভাইরাস: ইটালির অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশে করণীয়
ডাঃ অসিত বর্দ্ধন
___________________
আমি একজন বাংলাদেশি চিকিৎসক। পেশায় এনেস্থেটিস্ট। কানাডায় কর্মরত। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ইটালি থেকে পাওয়া কিছু তথ্য ও করনীয় বিষয়ে যে বর্ণনা আছে তার সাথে বাংলাদেশে কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সে সঙ্ক্রান্ত একটি ব্যক্তগত সুপারিশ তৈরি করেছি।
আজকে দুটি লিঙ্ক পেয়েছি আমি ইমেইলে। আমার সহকর্মি জানিয়েছেন। একটিতে আছে একজন চিকিৎসকের সতর্কবার্তা, অন্যটিতে আছে ইটালির একটি আইসিইউ এর বিবরণ। ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় এর বিবরণ ছাপা হয়েছে। লিঙ্ক একেবারে নিচে দেওয়া আছে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণের সংক্ষিপ্তসার:
ইতালিয়ান চিকিৎসক বৃন্দ ইউরোপের চিকিৎসকদের জন্য " সর্বাত্মক প্রস্তুতি" গ্রহণের জন্য হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, করোনা ভাইরাসের আক্রান্তদের শতকরা ১০ ভাগ রোগীর আইসিইউ সেবা প্রয়োজন হচ্ছে। এতে হাসপাতাল সমূহ তাদের সক্ষমতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছেন। এটা গুরুত্তপুর্ন, যেন হাসপাতাল গুলো তাদের কর্মিদের প্রতিরক্ষা উপকরণ সংগ্রহ ও তার সঠিক ব্যাবহারের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
তারা আরও উল্লেখ করেছেন, যে প্রত্যেক হাসপাতালে কোভিড ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য কিভাবে /কোথায় আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়া হবে তা আগে থেকে নির্দিস্ট করে রাখা। যুক্তরাজ্যের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি বলেছেন অদূর ভবিষ্যতে ক্রিটিকাল কেয়ার সেবা বা আইসিইউ সেবা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হতে পারে।
একজন কনসালটেন্ট আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে যদি আইসিইউ পূর্ণ হয়ে যায় , তাহলে এনেস্থেটিস্টদের আইসিইউ এর বাইরে অপারেশন থিয়েটারে কিম্বা পোস্টঅপারেটিভ এলাকায় রোগীর সেবায় নিয়জিত করতে হবে । সেক্ষত্রে এমনকি জরুরি অপারেশন ও বন্ধ রাখতে হতে পারে। তখন কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত নন এমন রোগীর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঘটতে পারে।
এরকম সময়ে এনেস্থেসিয়া সার্ভিস চালু রাখা আসল চ্যলেঞ্জ। এনেস্থেটিস্ট গন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন কারণ রোগীর শ্বাসনালীর চিকিৎসায় এরা জড়িত থাকবেন, আর তাদের (এনেস্থেটিস্টদের) আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
একজন ইতালিয়ান বিশেষজ্ঞ বলেছেন, প্রথমে তাদের বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি থাকলেও এখন সমস্ত আক্রান্তদের বয়সের রেঞ্জ ৪৬ থেকে ৮৩ এর মধ্যে। এজন্য অল্প বয়সী যাদের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে , তাদের জন্য কিছু আইসিইউ বেড সংরক্ষণ করা জরুরি।
অসমর্থিত খবর যে বয়স ৬৫ এর উপরে হলে ইতালিতে ডাক্তাররা তাদের
বাড়ি ফিরে যেতে বলেছেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ঃ সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ কমানর চেষ্টা করছেন যা প্রশংসার দাবি রাখে। তারপরও আমাদের সীমিত সম্পদ নিয়ে এই বিশাল যুদ্ধ , অসম যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
মেডিকেল চিকিৎসার পাশাপাশি আইসিইউ সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা আমাদের বর্তমান সক্ষমতার চাইতে অনেক গুন বেশি হবে। এই সময়ে এনেস্থেটিস্টদের রোগীর সেবায় প্রয়োজন হবে।
প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়মিত অপারেশন বন্ধ করা প্রয়োজন।
বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ এর সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের সংযোগ প্রয়োজন।
অনেক বেসরকারি হাসপাতালে সরকারি এন্সথেটিস্ট কাজ করেন , সুতরাং তাদের পক্ষে একসাথে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করা সম্ভব হবে না। এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন আগে থেকে জারি করে রাখা যেতে পারে।
ক্রান্তিকালীন সময়ে সকল আইসিইউ ও তার কাছাকাছি সুবিধাসম্পন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল চিহ্নিত করে তা ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া যেন জনগণ কোন হাসপাতালে রোগী নিয়ে যেতে পারবেন তা সহজে জানতে পারেন। কোন হাসপাতালে খালি বেড আছে সেটা জানা থাকলে অহেতুক বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে রোগীর সময়ক্ষেপণ, ও সঙ্কট বাড়ার আশঙ্কা থাকবে না।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও জরুরি নয় এমন অপারেশন বন্ধ রাখা।
দেশের সকল এনেস্থেটিস্টকে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা রোটেশান ডিউটির আওতায় আনা। এর বাইরে তাদের উপযুক্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করা। অন্যথায় এদের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে ক্ষীণ জনবল আরও ক্ষীণ হয়ে সমস্যা বেড়ে যাবে। এটা নিশ্চিত করা জরুরি যে তারা বাকি ১৬ ঘণ্টার সময়ে বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করে যেন ক্লান্ত না হয়ে পড়েন। এজন্য তাদের জন্য সরকার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে পারেন।
অনলাইন চিকিৎসার মাধ্যমে হাসপাতালে ও চিকিৎসকের চেম্বারে ভিড় কমানো গেলে সঙ্ক্রমণ বিস্তার কমানো সম্ভব।
অনলাইনে পরীক্ষার রেজাল্ট রোগীর কাছে পৌঁছানো । এতে সময় সাশ্রয়, দ্রুত চিকিৎসা , জনসমাগম হ্রাস করা যাবে।
ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মিদের অনলাইন ডিউটি রোস্টার তৈরি করে তা মন্ত্রণালয় থেকে দেখা ও তদারকির ব্যবস্থা রাখা, হাজিরা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এতে কর্মীদের কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে জনবল সঙ্ক্রান্ত ধারণা থাকবে। রি-এলোকেশন করা সহজ হবে।
অনলাইন ভিত্তিক প্রেস্ক্রিপশানের মাধ্যমে প্রয়োজনে কেন্দ্র থেকে বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ থাকলে অনেক রোগীকে পেরিফেরি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া গেলে কেন্দ্রে চাপ কমবে।
অনলাইনে সরকারী ও বেসরকারি হাসপাতালের স্টোরের বিবরণ আপলোডের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জামের তালিকা পর্যবেক্ষণ , সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা সম্ভব।
সরকারী ও বেসরকারি সকল ডাক্তারদের পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট নিশ্চিত করা। বেসরকারি খাতের মালিকদের তাদের প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ও নার্সের জন্য পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক করা।
আমার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান BDEMR এর তৈরি অ্যাপ এ এই সকল সুবিধা আছে। সরকারী প্রয়োজনে তা যে কোনও সময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ওয়েবসাইট
bdemr.com
doctor.bdemr.com
patient.bdemr.com
clinic.bdemr.com
anesmon.bdemr.com
ডাঃ অসিত বর্দ্ধন
এনেস্থেটিস্ট , ল্যাংলি মেমোরিয়াল হাসপাতাল
ভ্যঙ্কুভার , কানাডা
article link: https://www.independent.co.uk/…/coronavirus-italy-doctors-i…
আপনার মতামত দিন: