Ameen Qudir

Published:
2020-03-15 20:42:50 BdST

চিকিৎসকের কলম থেকেডিসপোজেবল ডাক্তার কিন্তু পাওয়া যায় না, যে কিনে মজুদ করে ফেলবেন!


ডা. অরুন্ধতী মজুমদার

__________________

এই মুহুর্তে বাংগালী কয়েকটা জিনিস চায়।

১ঃ তার করোনা ভাইরাস ডিজিজ না হোক এইটা যতটা না চায়, তার চেয়ে বেশী চায় - এই খবর যেন মানুষে না জানে। সেটা তার সামাজিক ইজ্জৎ হ্রাস করতে পারে, তেমন আশংকা আছে।

#২ঃ তার যদি হয়ও, তাহলে চিকিৎসা হোক, কিন্তু গোপনে। এইটা এক ধরনের গোপন রোগের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশে। ডাক্তাররা যেন কাউকে না বলে তার করোনা-আক্রান্ত হবার কথা।

#৩ঃ বল্লে তাকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হোক,এটাও সে চায় না।

#৪ঃ আর চীনের আউটব্রেকের পর থেকে সর্বাধিক দিন ধরে যেটা চাইছিল তা হচ্ছে - অন্যের যদি হয়ে থাকে, তাহলে তাদের শরীর থেকে যেন জীবানু তার দেহে না আসে। এজন্য মাস্ক কিনে, স্যানিটাইজার কিনে স্টক করে নিজেকে অন্যের কাছ থেকে নিরাপদ করছে। আবার, সে নিজে যদি নিজকে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করে, তাহলে নিজেকে নিজে সরিয়ে না রেখে, পারলে আরো বেশী করে অন্যের সামনে গিয়ে হাঁচি-কাশি দিয়ে আসছে।

ভাবটা এমনঃ 'আমার হইলে তোরও হোক।
একা মইরা মজা আছে?'

এই জাতের শিক্ষার অভাব থাকতে পারে, ইতরামির অভাব নাই।

এই দেশের যারা বিদেশ গিয়েছিল, বেশীরভাগ মানলাম কমশিক্ষিত শ্রমিক শ্রেণীর। কিন্তু এতদিন সিস্টেমের মধ্যে থেকে মজ্জায় কিছুটা হলেও সুশৃঙ্খলতার ছোঁয়া পড়ার কথা। শিক্ষিতদের তো আরো। তারা কোথায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে লাইন ধরে নিজেকে স্ক্যান করাবে, সরিয়ে নেবে মাস গ্যাদারিং থেকে, পরিবারের কাছে যাবার আগে নিজের সুস্থতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হবে, তা না করে বলে - " I fu*k ur country system!"
চমৎকার না?

বিদেশ কেন গেছে? ফ্যামিলির প্রয়োজনেই তো? তাহলে সেই ফ্যামিলিকে বিপদে ফেলার সম্ভাবনাটুকুই কি হতে দেয়া উচিৎ?

হাসপাতালে সাসপেক্ট করে ভর্তি করা বিদেশফেরত রোগী পালিয়ে বাড়ী গিয়ে বসে আছে। আরামসে ভাইরাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। বাহ্!

আরেকদল কাবিল বলছেঃ সামার এলে এই ভাইরাস মরে যাবে! সামারে বাংলাদেশে তাপমাত্রা কত থাকে? অন অ্যান অ্যাভারেজ ৩৭° সে.।

আরে পাগলের দল, আমরা ভাইরোলজি ল্যাবে কালচার করার জন্য গ্রোথ তৈরীর জন্যই ভাইরাসকে ৩৭°সে. তাপমাত্রায় রাখি। এতে ভাইরাস বাড়ে। মরে না।

আরেকদল পন্ডিত বলেছে, ৫৭° সে.-তে ফোটালে ভাইরাস মরে। কি ফোটাবেন? নিজেকে? নাকি গায়ের চামড়া খুলে সেদ্ধ দেবেন?

একচুয়ালি ৫৭ ডিগ্রীতে কিছু হয় না এই ভাইরাসের। ৭০°সে. লাগে। সত্তর ডিগ্রী মানে সত্তর ডিগ্রীই। ৬৯.৯°ও না।

অথবা লাগে ক্ষারীয় সাবান।
কিংবা ৭০% অ্যালকোহল।
তবেই ভাইরাস মরবে।

তাহলে?

কাবিলতি বন্ধ করেন।
আসল কথা হলো ভাইরাস নিজের শরীরে ঢুকতে দেবেন না। আপনার আশপাশের মানুষের শরীরেও যেন না ঢোকে সেই চেষ্টাও করবেন।
রোগ পাশের বাড়ীতে/পাড়াতে এলে কিন্তু আপনি/আপনার সন্তান/প্রিয়জনও নিরাপদ নন। লোকালয় পুড়লে দেবালয় এড়ায় না।

আর, যদি সন্দেহ হয় যে আপনি আক্রান্ত, তাহলে নিজেই নিজেকে কোয়ারেন্টাইন করেন। একা আলাদা রুমে/কর্নারে থাকেন। হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়মগুলো মানেন। পরিবারের অন্যদের অন্ততঃ আক্রান্ত না করেন। কে বলতে পারে, আপনি হয়তো সুস্থ হয়ে গেলেন, আপনার থেকে ছড়ানো ভাইরাসে আক্রান্ত আপনার প্রিয়জন হয়তো ফিরল না!

আপনি যতটা সম্ভব ফোনে কিছু কাজ করার চেষ্টা করুন। বাজার, দোকান, দাওয়াত এসবে না যান পারলে।
চিকিৎসাটাও সাধারণ সন্দেহভাজন রোগীদের ফোনে নিতে বলা হচ্ছে। হাসপাতাল, ক্লিনিকে, চেম্বারে আপনার বিপদ বাড়তেও পারে, অথবা আপনি বিপদ বাড়াতেও পারেন। হয়তো আপনার সাধারণ ফ্লু হয়েছিল, কিন্তু এসব জায়গায় রিয়েল করোনা ভাইরাসের রোগী এসে থাকলে তার থেকে আপনি পেয়ে যেতে পারেন এই অনাকাঙ্ক্ষিত উপহার! তাই, এভয়েড করুন যতটা সম্ভব। তবে হ্যাঁ, সিরিয়াস উপসর্গ থাকলে যথাযথ আলাদা থাকা নিশ্চিত করে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হবেন।

এই রোগের কিন্তু কোনো পরীক্ষা তেমনভাবে নেই এখনো দেশে। যেগুলো সম্ভব, তাও অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও ১/২ টা জায়গায় হয় মাত্র। অতএব, প্রতিরোধ করুন, প্রতিকার করতে হওয়ার আগেই।

ভাইরাসের ভয়ে মাস্কের পর মাস্ক দিয়ে কাঁথা বানিয়ে পরে থাকার চেয়ে, স্যানিটাইজার দিয়ে স্নান করে ফেলার চেয়ে এগুলো স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করুন। যতটা অন্যের কাছ থেকে ছড়ানো ভাইরাস থেকে বাঁচতে, ততটাই আপনিও যেন কারো রোগের,মৃত্যুর কারন না হন, সেজন্যেও।

একাই সব কিনে মজুদ করবেন না। অন্যরাও যেন এই ইনফেকশনে না পড়ে, সেজন্য তাদের কেনার জন্যও কিছুটা ছেড়ে আসুন। তাতে আপনি আরো একটু নিরাপদ হবেন।

আর, করোনা রোগী বাংলাদেশে নেই, তা কিন্তু না, এটা সবাই বুঝতে পারছেন। জাস্ট সনাক্ত হচ্ছে না। আমাদের বদমায়েশী-অবাধ্য-বেপরোয়া স্বভাবের জন্য ছড়িয়েও পড়ছে দ্রুত। নিজেকে নিজে সামলান।
এই দুরবস্থা সামলানোর কিছুটা দায়িত্ব নিজেও নিন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে স্কুল-কলেজ বন্ধ করার চাইতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেন না যায়, সেজন্যই স্কুল-কলেজ-মার্কেটপ্লেস-গ্যাদারিংপ্লেস গুলো এখনি বন্ধ করা উচিৎ। ইটালী কিন্তু আমাদের মতোই প্রথমে রিলাকট্যান্ট থাকতে যেয়ে এখন খেসারত দিচ্ছে। আর, বৃটেন অলরেডী ৪০,০০০ লোকের জন্য গ্রেভইয়ার্ড বানিয়ে রেডী!

গ্রেভইয়ার্ড বানাতে বলি না, গ্রেভইয়ার্ড যেন না হয়, সেজন্য দয়া করে সবাই একটু মনোযোগ দিয়ে সতর্ক হোন। আর, সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে, ডাক্তার, নার্সদের জন্য পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্টের ব্যবস্থা করেন। এঁরা আক্রান্ত হলে চতুর্গুন বিপদ! বাঁচবে কিনা ভাবতে গিয়েই বাঁচাতে পারবে না।

ডিসপোজেবল ডাক্তার কিন্তু পাওয়া যায় না, যে কিনে মজুদ করে ফেলবেন!
মাইন্ড ইট।

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়