Ameen Qudir
Published:2020-03-10 17:22:12 BdST
করোনাভাইরাস কেমন বিপদ! অন্যান্য সংক্রামক রোগের চেয়ে কি বেশি বিপজ্জনক?
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
বাংলাদেশের চিকিৎসাসাহিত্যের পথিকৃৎ
___________________________
নবউদ্ভূত করোনাভাইরাস, উৎস চীনের উহানে : বিশ্বজুড়ে এখন, বিপুল লোক এতে আক্রান্ত। কিন্তু একটি প্রশ্ন জনমনে নতুন এই ভাইরাল আতঙ্ক কি অন্যান্য সংক্রামক রোগের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক?
সারসের কবলে পড়ে ২০০২-২০০৩ সালে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮শ’ ০৯৮ জন, ১০ শতাংশের হয়েছিল মৃত্যু। গঊজঝ-এর কবলে (২০১২-বর্তমান) পড়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৪৯৯ জন, ৩৪% মৃত্যুহার। এবোলার কারণে (২০১৪-২০১৬) আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৮ হাজার ৬১৬ জন : ৪০% ছিল মৃত্যুহার।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ঋতুকালীন ফ্লু উদ্ভূত প্রজাতি লাখ লাখ মানুষকে আক্রমণ করলেও মৃত্যুহার খুব কম ০.১%।
বিশ্বমারী করোনাভাইরাস- যেমন উহানের নবউদ্ভূত করোনা এগুলো অনেক গুরুতর।
বর্তমানে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপকতায় ঝঅজঝকে ছাড়িয়ে গেছে মৃত্যুহার ২%। করোনাভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে ২০ গুণ বেশি বিপজ্জনক। তবে অনেক বিজ্ঞানী বলেন নতুন এই ভাইরাস দ্রুত নিঃশক্তি হয়ে যায়, তবে এটি ঘটেছিল গঊজঝ-এর ক্ষেত্রে, ২০১২ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যে এটি মহামারী হয়ে রয়েছে। নতুন করোনা লাখ লাখ মানুষকে আক্রান্ত করলে বিপদের কথা। এর চিকিৎসাও নেই। ওষুধ ও টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে।
তবে এই ভাইরাসের ভ্রমণ-পরিভ্রমণ কতদূর হবে এখনও তা বলা যাবে না। তাই কোয়ারেন্টাইট ও সংক্রমিত লোকদের সীমিত চলাচলের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সঙ্গরোধ বা কোয়ারেন্টাইন এখনও মূল্যবান পথ নিয়ন্ত্রণের। সারস প্রতিরোধে কোয়ারেন্টাইনও অন্তরণ (ওংড়ষধঃরড়হ) কেশ কার্যকর ছিল। করোনাভাইরাস, ফ্লুর মতো ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ এবং সামান্য দূরত্বে ছড়ায় তাই দৈহিক বিচ্ছিন্নতা কার্যকর। সব দেশেই ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এ ছাড়াও আর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন :
* আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও বাণিজ্যের ওপর অনাবশ্যক নিষেধ ব্যবস্থা আরোপের কোন কারণ নেই। এ রকম বিধিনিষেধ, ভয়ভীতি ও কুসংস্কার ছড়াতে সহায়ক হবে। জনস্বাস্থ্য সুফল এতে আসবে না।
* যেসব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল এদের সহায়তা দিতে হবে
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এদের অনির্ধারিত খরচ মেটানোর তহবিল থেকে ৯ মিলিয়ন ডলার ছাড় দিয়েছেন জরুরীভাবে : ২৪টি দুর্বল এ রকম দেশগুলোর জন্য। পাঠাচ্ছেন অর্ধ মিলিয়ন মাসক ৩ লাখ ৫০ হাজার জোড়া গ্লোবস, ৪০ হাজার রেসপিরেটর ১৮ হাজার আইসোলেশন গাউন। পাঠানো হচ্ছে ৭০টি রেফারেন্স ল্যাবরেটরিতে ২ লাখ ৫০ হাজারটি টেস্ট যাতে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়।
* টিকা, ওষুধ ও বোননির্ণয় কৌশল আবিষ্কারের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করা উচিত।
এসব বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য, গবেষণা জোরদার করার জন্য বৈশ্বিক গবেষণা সভা হচ্ছে।
* গুজব ও ভুল তথ্য বিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য ডঐঙ ওয়েবপেজে যেতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে যাতে ভুল তথ্য না যায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
* প্রস্তুতি পরিকল্পনা পর্যালোচনা, এর মধ্যে ফাঁক আছে কিনা তা শনাক্ত করা, রোগী পরিচর্যা সম্প্রচার প্রতিরোধের জন্য, শনাক্ত করার জন্য যে জনবল ও দক্ষতা প্রয়াজন এর মূল্যায়ন।
রোগ সূচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন দেশকে ভ্রমণ ও বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা করা, রোগ তদারকি, রোগীর সেবা, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিস্তার প্রতিরোধ, ঝুঁকি সম্বন্ধে জনপ্রচার, নিজস্ব প্রস্তুতি মূল্যায়ন করা, এর ব্যাপারে রসদ কি আছে তা মূল্যায়নÑ এ সব বিষয়ে প্রযুক্তিগত পরামর্শনীতি প্রকাশ করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে এসব বিষয় রয়েছে।
এই প্রাদুর্ভাবকে পরাজিত করার একমাত্র উপায় হলো সব দেশ সমর্থিতভাবে সংহতভাবে একত্রে কাজ করা।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও তথ্য প্রমাণভিত্তিক কার্যকম হবে সব প্রচেষ্টার উৎসাহব্যঞ্জক দিক। একত্রে আমরা এই প্রাদুর্ভাব বিপদকে অতিক্রম করব।
প্রাদুর্ভাব পক্ষ বিস্তার করছে সন্দেহ নেই, অনেক জিনিস এখনও অজানা। তবে এ রকম অন্য ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের অভিজ্ঞতা আমাদের বলে দেবে কি করতে হবে। প্রতিদিন শিখব নতুন নতুন অভিজ্ঞতা থেকে।
করোনা ঈঙঠওউ-১৯ আরও তথ্য
করোনাভাইরাস সম্বন্ধে খবর দ্রুতগতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে ‘আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য ইমার্জেন্সি’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
যদি
০ কেউ ভ্রমণ করে থাকেন মেইনল্যান্ড চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র হংকং, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা ম্যাকাউ এবং ফিরে আসার দু’সপ্তাহের মধ্যে কফ, কাশ, জ্বর, শ্বাসকষ্টের উপসর্গের মুখোমুখি হন বা
যদি করোনাভাইরাসের কোন রোগীর সংস্পর্শে থাকেন, কিন্তু সুস্থ আছেন তবুও
অন্তরীণ থাকুন এবং সবার সংস্পর্শ এড়িয়ে যান।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং মেনে চলুন
বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
নতুন করোনাভাইরাসের নাম ঝঅজঝ-ঈঙা-২। করোনাভাইরাসে পরিবারের নতুন সদস্য, প্রথম শনাক্ত হয় চীনের ‘উহানে’ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর। রোগের নামকরণ হয়েছে ঈড়ারফ-১৯
নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে সম্ভবত নতুন এই ভাইরাসটি এসেছে বাদুর থেকে মানুষের মধ্যে।
২০২০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভাইরাসে মৃত্যু পনেরো শ’ ছাড়িয়েছে। ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত। ২০০২-২০০৩ সালে সারস ভাইরাস সংক্রমণের ৫ গুণ বেশি। বিলেতে ৮ জন সংক্রমিত। আমাদের দেশে তেমন রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগ চীনে হুবেই প্রদেশে খুব বেশি রোগী। উহান এর রাজধানী। চীনের বাইরে ১০০ জন মারা গেছেন।
উপসর্গ
সংক্রমিত হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ শুরু হয়।
জ্বর, কফ কাশ, শ্বাসকষ্ট, নাক দিয়ে জলপড়া, গলা খুস খুস, ব্যথা। কারও হয় গুরুতর সমস্যা যেমন নিউমোনিয়া ও তীব্র শ্বাসকষ্ট।
কারা ঝুঁকিতে?
গত দু’সপ্তাহের মধ্যে যারা উহান বা হুবেই প্রদেশে ভ্রমণ করেছেন। মেনল্যান্ড চীনের অন্যান্য অংশে যারা ভ্রমন করেছেন, এ ছাড়া থাইল্যান্ড, জাপান, কোরিয়া, হংকং, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ম্যাকাউ।
যারা করোনা আক্রান্ত লোকের সংস্পর্শে ছিলেন।
কাদের গুরুতর উপসর্গের সম্ভাবনা বেশি।
৬৫ উর্ধ লোক
দেহ প্রতিরোধ শক্তি খর্ব হয়েছে যাদের এমন রোগে আক্রান্ত্র যারা দীর্ঘমেয়াদী অসুখ যাদের ক্রনিক ফুসফুসের রোগ, ডায়াবেটিস, মাল্টিপল ফেলোসিস, ক্যান্সার।
এখনও টিকা আবিষ্কৃত হয়নি
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্্থ আবিষ্ককারের চেষ্টা করছে।
এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।
উপসর্গের চিকিৎসা : ফ্লুইড ও বেদনাহর ওষুধ। হাসপাতালের রোগীর প্রয়োজন সাপোর্ট ও শ্বাস গ্রহণ-বর্জনের অবলম্বন।
করতে পারেন ল্যাবটেস্ট : নাক ও গলার কালচার এবং রক্ত পরীক্ষা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিম্ন শ্বাসনালীতে পৌঁছলে (ক্লোমনাসও ফুসফুসে) হতে পারে নিউমোনিয়া। বৃদ্ধ লোক, হৃদরোগও দেহ প্রতিরোধ দুর্বল এমন লোকদের হতে পারে এই তীব্র কোন।
কি করা যাবে প্রতিরোধে :
সাবান ও গরম জলে ভাল করে হাত ধোবেন বা হ্যান্ড সেনিটাইজার দেবে নাক, কান ও মুখ থেকে হাত দুটো দূরে রাখুন।
সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসবে না। ঘ ৯৯ সধংশ পরুন সুরক্ষার জন্য।
যখন কাশ দেবেন, কফ যখন হবে, তখন টিস্যু দিয়ে নাক মুখ ঢাকুন, এরপর টিস্যু ফেলে দিন, হাত ধুয়ে ফেলুন।
চিকিৎসা
প্রচুর বিশ্রাম
তরল পান
গলাব্যথা ও জ্বরের ওষুধ।
আপনার মতামত দিন: