Ameen Qudir
Published:2020-03-10 01:22:50 BdST
করোনা নিয়ে বারবার করা প্রশ্নগুলো: ২৪টি প্রশ্নের জবাব দিলেন ডা. নাজিরুম মুবিন
ডেস্ক
_________________
ডা. নাজিরুম মুবিন । একজন অনন্য চিকিৎসা পরামর্শক ও লেখক। করোনা নিয়ে সাধারণ জনমানসের প্রশ্নের শেষ নেই। এরকম ২৪টি প্রশ্নের জবাব দিলেন তিনি।
প্রশ্ন জবাব আকারেই জবাব দিয়েছেন তিনি।
প্রশ্ন-১ঃ করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ায়?
উত্তরঃ করোনা ভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, লালা ও নাকের নিঃসরণের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ায়। তখন ঐ ব্যক্তির একদম কাছে থাকলে করোনা সংক্রমণ হতে পারে।
আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস প্রশ্বাসজনিত কণার মধ্যে এই ভাইরাসটি থাকে। কণাটি ভারি হওয়ায় এটি বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে না বরং মানব শরীর থেকে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বের হয়ে এটি মাটি বা অন্য কোন তলে (যেমনঃ ফার্নিচার) বসে থাকে। সেখান থেকেও করোনা সংক্রমণ হতে পারে।
প্রশ্ন-২ঃ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কী করবো?
উত্তরঃ
ক) সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুবেন অথবা অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড রাব ব্যবহার করতে পারেন।
খ) জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকবেন।
গ) জন সমাগম হয় এমন স্থানে যাবেন না।
ঘ) নিজে হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় কনুই ভাঁজ করে নাক এবং মুখ ঢাকবেন অথবা টিস্যু ব্যবহার করবেন এবং সেটা ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলবেন।
ঙ) অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবেন না।
চ) আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলবেন।
ছ) অসুস্থ হলে ঘরে থাকবেন।
জ) কারো সাথে হ্যান্ডশেক ও কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকবেন।
ঝ) বাইরের খোলা খাদ্য খাওয়া বন্ধ করুন
কাঁচা ফল/ সব্জি খাওয়ার পূর্বে ভালো করে সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
ঞ) কমন স্পেসে (লিফট এর বাটন/ কমন টয়লেটের দরজার নব ইত্যাদি) ধরার সময় টিস্যু ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু টিস্যু যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। তা হলে ঘটনা একই হবে। আপনার টিস্যু আপনার কাছেই রাখুন এবং পরে ডাস্টবিনে ফেলুন।
ট) জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন।
ঠ) মাংশ ও ডিম পর্যাপ্ত তাপমাত্রায় রান্না করুন।
ড) গৃহপালিত পশু পাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
প্রশ্ন-৩ঃ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে কারা আছে?
উত্তরঃ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যে কারো হতে পারে তবে বৃদ্ধরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ব্যক্তির যদি একই সাথে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ এবং/অথবা হৃদরোগ এবং/অথবা ডায়বেটিস থাকে তাহলে তার অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা দানের সাথে জড়িত পেশাজীবীদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সকল বয়সের এবং সকল পেশার মানুষকে করোনা সংক্রমণ থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
প্রশ্ন-৪ঃ করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক কি কার্যকরী?
উত্তরঃ না। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়। তবে বেশি অসুস্থ রোগীদের একই সাথে ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশনও হতে পারে। তাদের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রশ্ন-৫ঃ আমার নিউমোনিয়ার ভ্যাক্সিন দেয়া আছে। আমার কি করোনা সংক্রমণ হতে পারে?
উত্তরঃ হ্যা হতে পারে। নিউমোনিয়ার ভ্যাক্সিন যেমন নিউমোকক্কাল ভ্যাক্সিন বা হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি এর ভ্যাক্সিন, নতুন এই করোনা ভাইরাসের বিপরীতে আপনাকে সুরক্ষা দিবে না। তবে এই ভ্যাক্সিন নেয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
প্রশ্ন-৬ঃ আমি নিয়মিত সারা শরীরে সরিষার তেল/অলিভ অয়েল/বডি লোশন ব্যবহার করি। করোনা কি আমার শরীরে প্রবেশ করতে পারে?
উত্তরঃ সরিষার তেল/অলিভ অয়েল/বডি লোশন আপনাকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিবে না। কিছু রাসায়নিক জীবাণুনাশক আছে যা করোনা ভাইরাসকে মারতে পারে যেমন- ব্লিচিং পাউডার, অ্যালকোহল, প্যারা অ্যাসিটিক এসিড, ক্লোরোফরম। যদিও এসব আপনার ত্বকে বা নাকে ব্যবহার করে আপনি করোনা থেকে সুরক্ষা পাবেন না। বরং এটা আপনার ত্বকের জন্য ভয়ংকর ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
প্রশ্ন-৭ঃ ধোঁয়া/ধূপের ধোঁয়া/কয়েলের ধোঁয়া কি করোনা ভাইরাসের ঘরে প্রবেশ ঠেকাতে পারে?
উত্তরঃ না। বরং এইসব ধোঁয়ায় রয়েছে সালফার ডাই অক্সাইড যা আপনার চোখ, নাক, মুখ, গলায় জ্বালা এবং অস্বস্তি বাড়াবে এমনকি অ্যাজমাও হতে পারে।
প্রশ্ন-৮ঃ রসুন খেলে কি আমি করোনামুক্ত থাকতে পারবো?
উত্তরঃ রসুন একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। অনেক জীবাণু ধ্বংসে এর ভূমিকা আছে তবে নতুন এই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে রসুনের ভূমিকা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।
প্রশ্ন-৯ঃ নিয়মিত লবণ-পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে কি আমি করোনা প্রতিরোধ করতে পারবো?
উত্তরঃ সাধারণ সর্দি কাশি থেকে পরিত্রাণ পেতে নিয়মিত লবণ-পানি দিয়ে নাক পরিষ্কারের স্বল্প ভূমিকা থাকলেও করোনা প্রতিরোধে এর কোন ভুমিকা নেই।
প্রশ্ন-১০ঃ মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে কি করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব?
উত্তরঃ করোনা মুখের লালার মাধ্যমে ছড়াতে পারে। মুখের অন্যান্য জীবাণু ধ্বংসে জীবাণুনাশক মাউথওয়াশের ভূমিকা থাকলেও করোনা প্রতিরোধ বা প্রতিকারে মাউথওয়াশের কোন ভূমিকা নেই।
প্রশ্ন-১১ঃ করোনা ভাইরাস কি মশার কামড়ের মাধ্যনে ছড়াতে পারে?
উত্তরঃ না। এখন পর্যন্ত এরকম কিছু জানা যায়নি।
প্রশ্ন-১২ঃ করোনা প্রতিরোধে বাসায় কী সতর্কতা অবলম্বন করবো?
উত্তরঃ বাইরের জুতো বাসায় ঢোকানো যাবে না। বাইরে পড়া পোশাক নিয়মিত ধুয়ে ফেলতে হবে। বাইরে থেকে এসে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। ঘরের ফার্নিচার, মেঝে নিয়মিত জীবাণুনাশক দ্রবণ(যেমন অ্যালকোহলযুক্ত বা ক্লোরিন-পানি) দিয়ে মুছতে হবে।
প্রশ্ন-১৩ঃ করোনা প্রতিরোধে কর্মস্থলে কী সতর্কতা অবলম্বন করবো?
উত্তরঃ অফিসের চেয়ার, টেবিল, টেলিফোন, কীবোর্ড, হাতের সংস্পর্শে আসে এমন সকল জায়গা অ্যালকোহল বা ক্লোরিনযুক্ত জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত মুছতে হবে।
প্রশ্ন-১৪ঃ আমি অ্যালকোহল বা ক্লোরিন-পানি দিয়ে গোসল করলে কি করোনা মুক্ত থাকতে পারবো?
উত্তরঃ না। যে করোনা ভাইরাস শরীরের ভিতরে ঢুকে গিয়েছে তা এই পদ্ধতিতে মারা যাবে না বরং এই পদ্ধতি ত্বকের ক্ষতি সাধন করবে। যার ফলে অন্য ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশের সুযোগ পাবে।
প্রশ্ন-১৫ঃ অ্যালকোহল খেলে কি শরীরের ভিতরে প্রবেশ করা করোনা ভাইরাস মারা যাবে?
উত্তরঃ না।
করোনা ভাইরাস শরীরের যে জায়গায় বাসা বাঁধবে সেখানে আপনার পান করা অ্যালকোহল পৌছাবে না।
প্রশ্ন-১৬ঃ গ্রীষ্মকালে কি এই ভাইরাস মারা যাবে?
উত্তরঃ না।
প্রশ্ন-১৭ঃ কখন মাস্ক পড়বো?
উত্তরঃ আপনি যখন কোন সন্দেহভাজন রোগীর সেবা করছেন তখন মাস্ক পড়ুন। আপনি যখন হাঁচি কাশি দিচ্ছেন তখন মাস্ক পড়ুন। মাস্ক পড়া তখনই কার্যকর হনে যখন আপনি একই সাথে সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুবেন।
প্রশ্ন-১৮ঃ আমি সুস্থ থাকলে কিভাবে মাস্ক পড়বো আর অসুস্থ হলে কিভাবে মাস্ক পড়বো?
উত্তরঃ আপনি সুস্থ থাকেন আর অসুস্থ থাকেন নীলদিক সব সময় বাইরে থাকবে, মাস্কের যে বর্ডারে শক্ত তারের মতন থাকনে সেটা নাকের দিকে থাকবে এবং চাপ দিয়ে সেটা নাকের উপর বসিয়ে দিবেন, বাইরের দিকের ভাঁজ নিম্নমুখী হয়ে থাকবে। আরেকভাবে বলা যায়, খসখসে দিকটা বাইরে থাকবে, নরম দিকটা ভেতরে থাকবে। শক্ত বর্ডার নাকের দিকে থাকবে।
ওয়ান টাইম সার্জিক্যাল মাস্ক একবার ব্যবহার করেই ফেলে দিতে হবে। একজনের ব্যবহার করা মাস্ক, আরেকজন পড়া যাবে না।
হাঁচি কাশি দেয়ার সময় মাস্ক পড়ে থাকতে হবে।
প্রশ্ন-১৯ঃ আমি ১৫ মিনিট পরপর পানি খাই যাতে করোনা ভাইরাস আমার শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এটা কি সঠিক?
উত্তরঃ না।
করোনা ভাইরাস আপনার শ্বসনতন্ত্র দিয়ে প্রবেশ করে। মুখ দিয়ে যদিওবা অল্প পরিমাণ করোনা ভাইরাস প্রবেশ করে কিন্তু বারংবার পানি খেলে করোনা ভাইরাস শরীর থেকে বের হয়ে যায় না।
প্রশ্ন-২০ঃ আইসক্রিম বা ঠান্ডা জাতীয় খেলে কি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে?
উত্তরঃ না।
এরকম কোন তথ্য এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
প্রশ্ন-২১ঃ রোদে দাঁড়িয়ে থাকলে কি করোনা ভাইরাস মারা যায়?
উত্তরঃ না।
এরকম কোন তথ্য বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
প্রশ্ন-২২ঃ টাকার নোট থেকে কি করোনা ছড়াতে পারে?
উত্তরঃ সম্ভাবনা কম হলেও ছড়াতে পারে। তাই টাকা গোনার পর হাত ধোয়া উচিত। যতদুর সম্ভব কার্ড করুন।
প্রশ্ন-২৩ঃ হ্যান্ড স্যানিটাইজার তো দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও অনেক বেশি দাম চাচ্ছে। এখন আমি কী করবো?
উত্তরঃ হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া না গেলে আতংকের কিছু নেই। সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়াই যথেষ্ট।
প্রশ্ন-২৪ঃ বাজারে তো এখন মাস্ক পাচ্ছি না কী করবো?
উত্তরঃ মাস্ক ব্যবহার সবার জন্য বাধ্যতামূলক না। যার হাঁচি-কাশি তিনি পড়লেই হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা দানের সাথে যারা জড়িত তারা মাস্ক ব্যবহার করবেন। মাস্ক ব্যবহার তখনই কার্যকর হবে যখন একই সাথে সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া হবে।
আপনার মতামত দিন: