Ameen Qudir
Published:2020-02-18 07:31:25 BdST
বিএমডিসি রেজিষ্ট্রেশন এবং মেডিক্যাল শিক্ষাঃ প্রসঙ্গেঘোড়ার আগে গাড়ি নয়:মানহীন মেডিক্যাল কলেজ আর নয়
ডা. আজাদ হাসান
____________________
কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের ইউএসটিসি নিয়েও বিএমডিসি-র রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত এ ধরনের একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল এবং পরবর্তীতে বড় এমাউন্ট-এর অর্থ দন্ডের মাধ্যমে সমস্যাটির আপাত সমাধানের ব্যবস্থা করা হয়।
এরও আগে, আজ হতে ৪/৫ বছর আগের ঘটনা।, নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের ছাএ-ছাত্রীরাও বিএমডিসি-র রেজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত এ ধরনের জটিলতার শিকার হয় এবং পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ডিজি হেলথ্-এর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রেও উক্ত ঘটনায় মাইগ্রেশন প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের পুনরায় ভর্তি ফিস গুনতে হয় এবং সবার ক্ষেত্রেই ছয় মাস হতে এক বছর শেসন লস্ করতে হয়।বারবার এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হওয়া কারোই কাম্য নয়। এই অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন:
মেডিক্যাল কলেজ পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত ভৌত অবকাঠামো থাকতে হবে।
যেমনঃ সম্পূর্ণ অডিও-ভিজ্যুয়েল এইডস্ সম্বলিত লেকচার গ্যালারী, ডেসেকশন হল, প্রাকটিক্যাল ক্লাস রুম।
নিজস্ব ক্যাম্পাস ছাড়া কোনো মেডিক্যাল কলেজকে অনুমতি দেয়া যাবে না।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদাভাবে আবাসিক হোস্টেল।
খেলার মাঠ এবং চিত্তবিনোদন এর জন্য সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র।
আউট-ডোর এবং ইনডোর সুবিধা, ইন্ভস্টিগেশন সুবিধাদি সম্মন্বিত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্বলিত হাসপাতাল।
ছাত্র সংখ্যার আনুপাতিক হারে পর্যাপ্ত শিক্ষক মন্ডলী থাকতে হবে।
শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে যথাযথ যোগ্যতা সম্পন্ন নিজস্ব শিক্ষক থাকতে হবে। পার্ট টাইম শিক্ষক-এর ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। শীতের পাখির মতো শতভাগ শিক্ষক পার্ট টাইম চাকুরী করবেন, এমনটি কাম্য নয়।
যদি কোথাও যথাযথ ভাবে শিক্ষক কিংবা ল্যাব. সুবিধা কিংবা লাইব্রেরী না পাওয়া যায়, তা হলে তাৎক্ষণিক উক্ত মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
নিয়মিত ভাবে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ মনিটরিং -এর ব্যবস্থা করতে হবে। নিয়মিত মনিটরিং-এর জন্য প্রয়োজনে সারপ্রাইজ ভিজিট করতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহীর "শাহ মখদুম মেডিক্যাল কলেজে"র ছাত্ররা আন্দোলন করছে। তাদেরকে কেনো আন্দোলন করতে হবে? এর জন্য সরকারের কোন কোন সংস্থার দায়িত্ব হীনতা দায়ী তা খুজে বের করে তাদেরকে জবাবদিহিতার আওয়াতায় আনতে হবে।
সেই সাথে আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর খুজে দেখতে হবেঃ
অনুমোদন হীন ভাবে কি করে একটি মেডিক্যাল কলেজ চলে? সেটা দেখভাল করার দায়িত্ব কাদের? দায়িত্বে অবহেলার দায়ে তাদেরকে আগে আইনের আওতায় আনা উচিৎ।
অনুমোদন হীন ভাবে মেডিক্যাল কলেজ পরিচালনা করে কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের সাথে প্রতারণা করেছে, সুতরাং এসব প্রতারণাকরীরও শাস্তি হওয়া উচিৎ।
অনুমোদনহীন মেডিক্যাল কলেজে কেউ ভর্তি হবেন না, এই মর্মে নোটিশ জারী করে, মনিটরিং ছাড়া হাত-পা গুটিয়ে বসে থেকে বিএমডিসিও তার দায়িত্ব সঠিকভাবে সম্পন্ন করেছেন ভেবে আত্মপ্রাসাদ লাভ করার কোনো কারণ নেই।
শিক্ষার্থীরা বুঝে হোক আর না বুঝেই হোক যেহেতু সরকারের উদাসীনতা এবং মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতারণার ফাদে পড়ে এখানে ভর্তি হয়ে তাদের জীবনের একটা মূল্যবান সময় অতিবাহিত করছে তাই~
১) শিক্ষার্থীদের কর্তৃক ভর্তির সময় প্রদত্ত টাকা/ফি'র একটি আনুপাতিক অংশের ফেরত প্রদান করা হোক।
২) উক্ত ছাত্র ছাত্রীদের বিভিন্ন প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা নেয়া হোক।
৩) যে যেই ইয়ারের স্টুডেন্ট সে যেনো সেই ইয়ারে ভর্তি হতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হোক।
৪) মাইগ্রেশন প্রাপ্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে যেয়ে যাতে আবার ভর্তি ফিসের শিকার হতে না হয় সেজন্য সরকার কর্তৃক মেডিক্যাল কলেজ ট্রান্সফার ফি নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।
৫) মানহীন সকল মেডিক্যাল কলেজ অচিরে বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওয়াতায় আনতে হবে।
ইতিমধ্যে গঙ্গায় অনেক জল গড়িয়েছে, এখন আর সময় নেই সময় নষ্ট করার। এখনই সময় সব কিছু শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করার এবং মেডিক্যাল শিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাজমান সকল অনিয়মকে দূর করার।
"ঘোড়ার আগে গাড়ি নয়।
মানহীন মেডিক্যাল কলেজ আর নয়।"
_________________
ডা. আজাদ হাসান
সিওমেক
২১ তম ব্যাচ।
আপনার মতামত দিন: