Ameen Qudir

Published:
2020-02-16 23:04:00 BdST

সাইলেন্ট হার্ট এট্যাক : আপনি সচেতন হলেই বেঁচে যাবে আপনার প্রিয়জন


ডাঃ জোবায়ের আহমেদ

_________________

১০ মিনিট হলো একজন বৃদ্ধা নারীর ডেথ ডিক্লেয়ার করলাম সিএনজিতে।
রুগীটাকে আমার কাছে নিয়ে আসছে চিকিৎসার জন্য।
কিন্ত আমার মেডিকেয়ার সেন্টারের সামনেই তিনি ইন্তেকাল করলেন।

জানতে চাইলাম রুগীর স্বজনদের কাছে কি সমস্যা হয়েছিলো।
বললো, সকাল থেকে শরীর খারাপ লাগছিলো।
একবার শরীর খুব ঘামছে।
উনারা ভাবছেন, ডায়াবেটিস কমে গেছে।
তাই চিনি মিষ্টি খাওয়াইছেন।
তারপর উনি ভালোই ছিলেন উনাদের ভাষ্য মতে।

একটু আগে শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে দেখে নিয়ে আসছেন।
শেষ কবে ডাক্তার দেখালেন জানতে চাইলে উনি বললেন দুই বছর আগে।
এর মধ্যে আর ডাক্তার দেখাননি??
না, ভালোই ছিলো তাই দেখাই নি।
রুগীর মেয়ে বলছিলো আমাকে।

এখন কিছু বিশ্লেষণ বলি।

এই রুগীটা সম্ভবত সকালে হার্ট এট্যাক করেছিলো যাকে মেডিকেল সাইন্স মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন বলে।
সাধারণ রুগীরা হার্ট এট্যাক করলে বুকে প্রচন্ড ব্যাথা হয়, চাপ চাপ ব্যাথা অনুভূত হয়ে, ব্যাথা বুক থেকে গলায় যায়, ঘাড়ে যায়,হাতের দিকে যায়।পেটেও যেতে পারে যেটাকে অনেকে গ্যাস্টিকের ব্যাথা মনে করে ভুল করে জীবন দিয়ে সেই ভুলের মাশুল দেন।
বুক থেকে পিঠেও ব্যাথা যেতে পারে।

সাথে শরীর ঘেমে যায়,হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়।
বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে।
শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
রুগী অস্থির হয়ে যেতে পারেন এংজাইটির জন্য এবং রুগীর চোখে মুখে মৃত্য ভীতি ফুটে উঠে।

কিন্ত একজন ডায়াবেটিস রুগীর সাইলেন্ট হার্ট এট্যাক হতে পারে।
রুগী একটু অস্বস্থি ভাব বা ঘেমে যাওয়া ছাড়া তেমন লক্ষন থাকেনা।
হার্ট এট্যাকের মূল যে সিম্পটম তীব্র বুকে ব্যাথা তা ডায়াবেটিস রুগীদের হয়না অনেক সময়।।
এটাকে সাইলেন্ট হার্ট এট্যাক বলে।

এখন এই রুগীকে যদি সকালে যখন শরীর খারাপ লাগছিলো তখন সাথে সাথে চিকিৎসক এর কাছে নিয়ে আসা হতো, তবে চিকিৎসক সব বিশ্লেষণ করে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে চিকিৎসা দিয়ে উনাকে বাঁচাতে চেষ্টা করতে পারতেন।।

উনার সন্তান ও পরিজনরা নিজ মায়ের প্রতি এতবড় অবহেলা করে মা কে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেন।
বড় আফসোস লাগলো।।
আমাদের দেশের রুগীরা ঘরের এমন পন্ডিতদের পন্ডিতি ও পাক্নামির স্বীকার হয়ে মারা যান।
এমন শত উদাহরণ আমার নিজ অভিজ্ঞতায় দেখা।
এই রুগীর লোকেরাই যদি প্রাণ থাকতে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে এসে পৌঁছতো, তখন যদি চিকিৎসা শুরু করার পর রুগী মারা যেত তখন তারাই ভুল চিকিৎসার অজুহাতে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে তুলকালাম করে ফেলতেন।
ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে ডাক্তারদের হেনস্থা করতে দ্বিধা করতেন না।

ডাক্তারদের গালি দেন ঠিক আছে।
এসব এখন আমাদের সয়ে গেছে।
বাংলাদেশের ডাক্তারদের চামড়া গন্ডারের চামড়া।
গালিকে আমরা ভালবাসার বুলি ভাবি।

তবে নিজে ডাক্তার না সেজে,নিজে নিজে রোগের ডাক্তারী ব্যাখ্যা না দিয়ে, কিছু হলেই গুগল থেকে মেডিকেল সাইন্স না পড়ে একজন পছন্দনীয় ডাক্তারের শরণাপন্ন হউন।।
যেকোন সমস্যা সেটা ছোট বা বড় হউক, ডাক্তার এর কাছে যান।
আমাদের দেশের রুগী ও তাদের স্বজনদের আরেকটা বদ অভ্যাস নিয়মিত ফলোয়াপে না আসা।
আমি একজন ডায়াবেটিস রুগীকে চিকিৎসা দিয়ে বললাম ১৫ দিন পর আসবেন।
সেই রুগী গতকাল এক বছর পর আসছেন আমার কাছে।
ইতিমধ্যে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থেকে কিডনির বারটা বাজাইয়া ফেলছে।
রুগীরা ভাবে ডাক্তাররা ভিজিট এর লোভে ১৫ দিন / ১ মাস পর আবার যেতে বলেন।
আমি জানি আপনারা এদেশের ডাক্তারদের উপর আস্থা রাখতে পারেন না।
তাদের নিয়ে আপনাদের অনেক অভিযোগ যার সত্যতাও উড়িয়ে দেওয়ার মত নয়।
চিকিৎসা নিতে গিয়ে ডাক্তার এর চেম্বার, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অনেকেই নানা বাজে ও তিক্ত অভিজ্ঞতার
মুখে পড়েছেন।
আমি আপনাদের ব্যাথা বুঝি।।
তবে সব চিকিৎসক খারাপ নয়।
এই দেশে হাজার হাজার রোগী বান্ধব ও মানবিক চিকিৎসক আছেন।
তাদের খুঁজে তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিন।
ডাক্তার এর পরামর্শ কে গুরুত্ব দিন,নিয়মিত ফলোয়াপে আসুন।।

আপনি সচেতন হউন।
আপনি সচেতন হলেই বেঁচে যাবে আপনার প্রিয়জন।

____________________

ডাঃ জোবায়ের আহমেদ

আপনার মতামত দিন:


মানুষের জন্য এর জনপ্রিয়